আধুনিক বিজ্ঞানের জনক হিসেবে গ্যালিলিওর অবদান লেখো – আজকের পর্বে আধুনিক বিজ্ঞানের জনক হিসেবে গ্যালিলিওর অবদান আলোচনা করা হল।
আধুনিক বিজ্ঞানের জনক হিসেবে গ্যালিলিওর অবদান লেখো
আধুনিক বিজ্ঞানের জনক হিসেবে গ্যালিলিওর অবদান লেখো |
আধুনিক বিজ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে যে সকল বিজ্ঞানী অসামান্য অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ছিলেন ইটালির বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ ও দার্শনিক গ্যালিলিও গ্যালিলি (১৫৬৪-১৬৪২ খ্রি)। তাঁর যুক্তিবাদী মতবাদ প্রচলিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন মতবাদের মূলে কুঠারঘাত করে।
সৌরজগৎ সংক্রান্ত মতবাদ
গ্যালিলিও জ্যোতির্বিদ্যা-বিষয়ক আধুনিক মতবাদ প্রকাশ করেন। তিনি সৌরজগতের গঠন সম্পর্কে কোপারনিকাসের বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন যে, বিশ্বব্রহ্মান্ডের কেন্দ্রে অবস্থান করছে সূর্য এবং পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহগুলি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। তিনি গতিবিদ্যা ও বলবিদ্যার সাহায্যে তাঁর বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করেন। তিনি নিজের আবিষ্কৃত দূরবীন যন্ত্রের সাহায্যে শুক্রগ্রহের কক্ষপথ ও বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ আবিষ্কার করেন।
অন্যান্য যান্ত্রিক আবিষ্কার
গ্যালিলিও একটি উন্নত দূরবীন বা টেলিস্কোপ আবিষ্কার করেন। এই যন্ত্রের দ্বারা চাঁদ ও শুক্রগ্রহের গতিবিধি জানা সম্ভব হয়েছিল। তাঁর আবিষ্কৃত পেন্ডুলাম ঘড়ি সামুদ্রিক অভিযানে সহায়তা করেছিল। এ ছাড়া তিনি এয়ার থার্মোমিটারে ‘হাইড্রোস্টেটিক ব্যালান্স তত্ত্ব’ আবিষ্কার করেন।
রচনা
গ্যালিলিওর লেখা ‘Dialogue Concerning the Two Chief Systems of the World’ গ্রন্থটি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের গঠন সম্পর্কিত চিন্তাজগতে তীব্র আলোড়ন তুলেছিল। গ্যালিলিওর এই গ্রন্থটিকে অনেকে “The great manifesto of the new science” বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল ‘দ্য স্টারি ম্যাসেঞ্জার’, ডিসকোর্স অন দ্য টাইট্স প্রভৃতি।
বিচার
গ্যালিলিওর বক্তব্য বাইবেলে বর্ণিত বক্তব্যের বিরোধী হওয়ায় রোমান ধর্ম-আদালত বা ইনকুইজিশন তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে (১৬৩৩ খ্রি)। গ্যালিলিওর শেষ পর্যন্ত চার্চের চাপের কাছে নতি স্বীকারে বাধ্য হয়ে জানান যে, তিনি যা বলেছেন তা ভুল, কোপারনিকাসের বক্তব্য ভুল। কিন্তু গ্যালিলিও চার্চের চাপের কাছে নতি স্বীকার করলেও তাঁর তত্ত্ব ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানের পথকে মসৃণ করেছিল।
পরিণতি
বিচারে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ৬৯ বছর বয়সি বৃদ্ধ গ্যালিলিওকে বাকি জীবনের জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বন্দি থাকাকালীন গ্যালিলিও ‘Two New Sciences’ নামে সুবিখ্যাত গ্রন্থটি রচনা করেন। বন্দি অবস্থায় নির্মম অত্যাচারে শেষ পর্যন্ত তিনি অন্ধ হয়ে যান। ক্রমে নানা কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে গ্যালিলিও ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে ৮ই জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।