১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের প্রেক্ষাপট ও প্রভাব

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের প্রেক্ষাপট ও প্রভাব

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের প্রেক্ষাপট ও প্রভাব
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের প্রেক্ষাপট ও প্রভাব

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতসচিব এডউইন স্যামুয়েল মন্টেগু এবং ভারতের বড়োলাট জন নেপিয়ার চেমসফোর্ড-এর যৌথ উদ্যোগে যে আইন পাস হয়, তা মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইন নামে পরিচিত।

মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের প্রেক্ষাপট

এই আইন প্রণয়নের পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ ছিল-

(ক) মর্লে-মিন্টো আইনের ব্যর্থতা

১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনের ব্যর্থতার পর নরমপন্থী-চরমপন্থী নির্বিশেষে আপামর ভারতবাসী আরও বেশি শাসনক্ষমতা লাভের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে।

(খ) নরমপন্থী ও চরমপন্থী গোষ্ঠীর সহাবস্থান

১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনে নরমপন্থী ও চরমপন্থী গোষ্ঠীর মধ্যে মতানৈক্যের কারণে চরমপন্থীরা কংগ্রেস ত্যাগ করলেও ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে এই দুই গোষ্ঠী পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হয় এবং কংগ্রেসের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ব্রিটিশ সরকার আতঙ্কিত হয়ে ওঠে।

(গ) দমনমূলক ব্যবস্থা

মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনে নানারকম আইন প্রণয়ন করে ভারতীয়দের দমনের চেষ্টা করা হয়েছিল। এ ছাড়া The Defence of India Act (1915)-এর দ্বারা ভারতীয় বিপ্লবীদের বিচারের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতে আপিলের অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়।

(ঘ) আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি

সমসাময়িক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রভাবে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি তাদের উপনিবেশে শাসনসংস্কার করে। তাই ভারতেও ব্রিটিশ সরকার আর-একটি সংস্কার আইন পাস করতে সচেষ্ট হয়। এ ছাড়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসন প্রদানের আশ্বাস দিয়েছিল -এরই পরিণতি হল ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন।

ভারতবাসীর উপর মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের প্রভাব

মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইন ভারতবাসীর উপর ইতিবাচক ও নেতিবাচক -দুদিক থেকেই প্রভাব ফেলেছিল।

ইতিবাচক প্রভাব

(ক) দৃঢ় সরকারি নিয়ন্ত্রণ

এই আইন দ্বারা কেন্দ্রে বড়োলাট এবং প্রদেশে ছোটোলাট প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী হন এবং কেন্দ্র ও প্রদেশে সরকার মনোনীত সদস্যদের সংখ্যাধিক্য বজায় থাকে।

(খ) রাজনৈতিক শিক্ষালাভ

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের দ্বারা ভারতীয় প্রতিনিধিরা আইনসভায় প্রবেশের সুযোগ পাওয়ায় তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও শাসনসংক্রান্ত শিক্ষালাভের সুযোগ ঘটে।

(গ) মন্ত্রীসভার ভারতীয়করণ

ঐতিহাসিক টমসন ও গ্যারাট এই আইনের প্রশংসা করে বলেন যে, প্রাদেশিক মন্ত্রীসভায় ভারতীয়দের স্থান দিয়ে ব্রিটিশ সরকার শাসনব্যবস্থার ভারতীয়করণের পথ প্রস্তুত করে।

নেতিবাচক প্রভাব

(ক) ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ

কার্যনির্বাহক পরিষদ (Executive Council) আইনসভার নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত ছিল। কেন্দ্রে বড়োলাটের হাতে একপ্রকার সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়।

(খ) শাসন পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা

প্রাদেশিক শাসনের ক্ষেত্রে গভর্নর একপ্রকার অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থাকে সংরক্ষিত ও হস্তান্তরিত -এই দুই ভাগে ভাগ করে একদিকে ক্ষমতাহীন দায়িত্ব ও অন্যদিকে দায়িত্বহীন ক্ষমতা ভোগের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

(গ) ত্রুটিপূর্ণ সাম্প্রদায়িক নির্বাচন পদ্ধতি

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলিকে প্রশ্রয় দেওয়ার ফলে ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়।

Leave a Comment