স্বাধীন ভারতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পটভূমি ব্যাখ্যা করো। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মূল্যায়ন করো

স্বাধীন ভারতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পটভূমি ব্যাখ্যা করো। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মূল্যায়ন করো

স্বাধীন ভারতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পটভূমি ব্যাখ্যা করো। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মূল্যায়ন করো

স্বাধীন ভারতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পটভূমি ব্যাখ্যা করো। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মূল্যায়ন করো।

স্বাধীন ভারতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পটভূমি

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন সমস্যা ভারতকে জর্জরিত করে তুলেছিল। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে পরিকল্পনা কমিশন গঠিত হয়। এই কমিশনের মাধ্যমেই ভারতে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সূচনা হয়। এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাগুলির পটভূমি নিম্নে আলোচনা করা হল-

(ক) বিশ্বেশ্বরাইয়ার পরিকল্পিত খসড়া রচনা

ভারতের আর্থিক উন্নয়নে সর্বপ্রথম পরিকল্পনার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন স্যার এম বিশ্বেশ্বরাইয়া। তিনি অর্থনৈতিক পরিকল্পনার একটি খসড়া রচনা করেন এবং প্রথম ধারণা দেন পরিকল্পিত অর্থনীতির।

(খ) জাতীয় পরিকল্পনা কমিটি

জাতীয় কংগ্রেসের তৎকালীন সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসুর উদ্যোগে এবং জওহরলাল নেহরু-র সভাপতিত্বে গঠিত হয় জাতীয় পরিকল্পনা কমিটি।

(গ) বোম্বাই পরিকল্পনা

বোম্বাইয়ের ৮ জন শিল্পপতি (জে আর ডি টাটা, জি ডি বিড়লা, আর্দেশির দালাল, শ্রীরাম, পুরুষোত্তম দাস ঠাকুরদাস, জন মাথাই, এ ডি শ্রফ এবং কস্তুরভাই লালভাই)। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনার একটি রূপরেখা তৈরি করেন। এই ৮ জন শিল্পপতিদের পেশ করা পরিকল্পনা বোম্বাই পরিকল্পনা নামে পরিচিত।

(ঘ) গণ পরিকল্পনা

বিপ্লবী মানবেন্দ্রনাথ রায় বোম্বাই পরিকল্পনার বিকল্প হিসেবে তাঁর সংগঠন ভারতীয় শ্রম ফেডারেশন (Indian Labour Federation)-এর মাধ্যমে গণ পরিকল্পনা (People Plan) নামে একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব পেশ করেন ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে। এই পরিকল্পনাটি তৈরি হয় কৃষি ও শিল্পের উপর গুরুত্ব দিয়ে।

(ঙ) গান্ধিবাদী পরিকল্পনা

এস এন আগরওয়াল গান্ধিজির মতাদর্শ অনুসারে কৃষি, কুটিরশিল্প, ক্ষুদ্র এবং গ্রামীণ শিল্পের উপর গুরুত্ব দিয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন। এই পরিকল্পনাটি গান্ধিবাদী পরিকল্পনা নামে পরিচিত।

প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১১৫১-৫৬ খ্রিস্টাব্দ)

স্বাধীনতার পরে ভারতে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর উদ্যোগে সোভিয়েত রাশিয়ার অনুকরণে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রতি ৫ বছর অন্তর গ্রহণ করা হয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। এদের মধ্যে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৫১-৫৬ খ্রি.) সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল-

প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং দেশভাগের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট দূর করা, মুদ্রাস্ফীতি দূর করা, জাতীয় আয় বৃদ্ধি করা, জীবনযাত্রার মনোন্নয়ন করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং ভারতীয় সংবিধান অনুসারে Directive Principles of State Policy অনুসরণে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা।

প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পদক্ষেপ গ্রহণ

প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষি, শক্তি উন্নয়ন, পরিবহণ, পুনর্বাসন প্রভৃতি বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এই পরিকল্পনায় গুরুত্ব আরোপ করা হয় কৃষির সঙ্গে সেচ ও শক্তি উৎপাদনের উপরে। সেচের প্রসার ঘটাতে শুরু করা হয় হিরাকুঁদ, ভাকরা ও মেতুর বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প।

প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব বা সাফল্য

প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এই পরিকল্পনায় জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায় ১৮ শতাংশ এবং দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায় ১০.৮ শতাংশ। খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়ে হয় ৬৫.৮ মিলিয়ন টন। কৃষি উৎপাদন ২২ শতাংশ ও শিল্প উৎপাদন ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ত্রুটি

সাফল্য সত্ত্বেও এই পরিকল্পনার বেশকিছু ত্রুটি ছিল। কৃষি উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের উপর বেশি জোর দেওয়ায় স্বল্পমেয়াদি প্রকল্পগুলি উপেক্ষিত হয়। এ ছাড়া কৃষির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করায় শিল্পের অগ্রগতি আশানুরূপ হয়নি। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় প্রস্তাবিত ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ২,৩৭৮ কোটি টাকা; কিন্তু বাস্তবে ব্যয় হয় ১,৯৬০ কোটি টাকা।

মূল্যায়ন

প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারতীয় অর্থনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা স্থিতাবস্থার অবসান ঘটে এবং ভারতবাসীর মধ্যে দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা দেয়।

Leave a Comment