স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব আলোচনা করো

স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব আলোচনা করো

স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব আলোচনা করো
স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব আলোচনা করো।

দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১১৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১ এপ্রিল – ১১৬১ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মার্চ)

Indian Statistical Institute-এর পরিসংখ্যানবিদ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ রাশিয়ার অনুকরণে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার একটি মডেল তৈরি করেন ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে। কিছু অংশ সংশোধনের পর প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এর রূপরেখা প্রয়োগ করেন। তাই এটি নেহরু-মহলানবিশ মডেল নামে পরিচিত। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব হল-

দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য

  • জাতীয় আয় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে ভারতবাসীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।
  • সরকারি উদ্যোগে ভারী যন্ত্রপাতি নির্মাণ শিল্পের উপর গুরুত্ব দিয়ে শিল্পায়নের গতি বৃদ্ধি করা।
  • বিদেশি আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা গ্রহণের মাধ্যমে দেশে ভারী শিল্পের প্রতিষ্ঠা করা।
  • দেশে অন্তত ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা।
  • ক্ষুদ্র শিল্প ও কুটিরশিল্পের বিকাশ ঘটানো।
  • অর্থনৈতিক ক্ষমতার সুষম বণ্টন করে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করা।

দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব

দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়-
  • জাতীয় আয় ২০% বৃদ্ধি পায়।
  • খাদ্যশস্যের উৎপাদন ১৫% বৃদ্ধি পায়।
  • তাপবিদ্যুৎ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদন- উভয়ক্ষেত্রেই শক্তি উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
  • দুর্গাপুর, ভিলাই ও রাউরকেল্লায় স্থাপিত হয় ইস্পাত কারখানা।
  • ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং ও যন্ত্রপাতি নির্মাণ শিল্পের সূচনা হয় এবং
  • এই সময়কালেই বিভিন্ন বৈদ্যুতিন যন্ত্র, কৃষি যন্ত্রপাতি এবং বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছিল।

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১১৬১ খ্রিস্টাব্দের ১ এপ্রিল-১১৬৬ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মার্চ)

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয় কৃষিকে। ভারতের অর্থনীতি হয়ে ওঠে গতিশীল। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব নিম্নে আলোচিত হল—

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য

  • প্রথম দুটির মত তৃতীয় পরিকল্পনাতেও প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে জাতীয় আয় বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
  • মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত হারের পরিমাণ ছিল ১৭ শতাংশ। তা বাড়িয়ে ৩৮৫ টাকা করা হয়।
  • খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের প্রতি গুরুত্ব আরোপিত হয়।
  • শিল্পের জন্য কাঁচামাল, রফতানিযোগ্য কৃষি উৎপাদন, রাসায়নিক দ্রব্য, শিল্প-যন্ত্রপাতি, ইস্পাত, শক্তি প্রভৃতি উৎপাদন বৃদ্ধির কথা বলা হয়। কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করার কথা বলা হয়।

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময় বহুমুখী পরিকল্পনা গৃহীত হলেও ভারত-চিন এবং ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, খরা ইত্যাদি কারণে পরিবহন, যোগাযোগ ও সমাজকল্যাণ ক্ষেত্র ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিতে লক্ষ্যপূরণ অধরাই থেকে গিয়েছিল। অবশ্য ব্যর্থতা থাকা সত্ত্বেও এর কিছু গুরুত্ব লক্ষণীয়-

  • অর্থনৈতিক গতিহীনতা দূর হয় এই পরিকল্পনায়।
  • জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায় ৬২.১ শতাংশ।
  • তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কয়েকটি সংগঠিত শিল্প, যেমন- অ্যালুমিনিয়াম সরঞ্জাম, চিনি, কিছু যন্ত্রপাতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে মোটামুটি অগ্রগতি লক্ষ করা যায়।

আরও পড়ুন – বিংশ শতকে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের কারণ গুলি আলোচনা করো

Leave a Comment