স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান ও শেখ মুজিবর রহমানের ভূমিকা আলোচনা করো

স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান ও শেখ মুজিবর রহমানের ভূমিকা আলোচনা করো

স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান ও শেখ মুজিবর রহমানের ভূমিকা আলোচনা করো
স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান ও শেখ মুজিবর রহমানের ভূমিকা আলোচনা করো।

পূর্ব বাংলার আন্দোলনে মুজিবর রহমানের আত্মপ্রকাশ

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র শেখ মুজিবর রহমান মুসলিম ছাত্র লিগ প্রতিষ্ঠা করে জনপ্রিয় ছাত্রনেতারূপে আত্মপ্রকাশ করেন। পাকিস্তান সরকার ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে উর্দু ভাষাকে ‘রাষ্ট্রীয় ভাষা’ হিসেবে ঘোষণা করলে মুজিবর রহমান সক্রিয়ভাবে আন্দোলন শুরু করেন।

মুজিবর রহমানের ভূমিকা

ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে দুটি আলাদা ভৌগোলিক অঞ্চল নিয়ে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের দুটি অংশের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব ছাড়াও ভাষা, সংস্কৃতি, সামাজিক ও আর্থিক ব্যবধান ছিল বিস্তর। বৈষম্যের প্রতিকার ও পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন লাভের উদ্দেশ্যে আওয়ামি লিগের নেতা মুজিবর রহমান ‘ছয় দফা দাবি’ তুলে ধরেন (ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ খ্রি.)। প্রায় সমস্ত দলই এই দাবিপত্রের নিন্দা করে। পাকিস্তান সরকার এই দাবিপত্রকে ‘রাষ্ট্রীয় শত্রুদের দ্বারা রচিত’ বলে ঘোষণা করে এবং মুজিবর রহমান-সহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করে (৫ জুন, ১৯৬৮ খ্রি.)।

নির্বাচন

১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের ৩১৩টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০টি আসনের মধ্যে ২১৮টি আসন পেয়ে আওয়ামি লিগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানে জয়ী হয় জুলফিকার আলি ভুট্টো-র পাকিস্তান পিপলস পার্টি। ফলে ক্ষমতালাভের জন্য রাজনৈতিক দরকষাকষি শুরু হলে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের কথা ঘোষণা করেন।

গৃহযুদ্ধ

এই ঘটনার প্রতিবাদে মুজিবর-এর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে স্বতঃস্ফূর্ত ও সর্বাত্মকভাবে ধর্মঘট পালিত হয় ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৩ মার্চ। এই সময় ২৫ মার্চ আলোচনা সভা এবং জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহূত হলে শেখ মুজিবর রহমান ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসভায় সম্ভাব্য স্বাধীনতার কথা ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার মীমাংসা করতে ব্যর্থ হন। ২৬ মার্চ পাকিস্তান দিবস-এ পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার বদলে প্রস্তাবিত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়। অন্যদিকে পাকিস্তানি সেনারাও পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের উপর ব্যাপক হত্যালীলা চালায়, যা Operation Search Light (২৫ মার্চ, ১৯৭১ খ্রি.) নামে পরিচিত।

ভারত-পাক যুদ্ধ

এই পরিস্থিতিতে আওয়ামি লিগের প্রার্থনায় ভারত সোভিয়েত ইউনিয়ন-সহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক সমর্থন নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য দেয়। ১২ দিনের পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনাপতি এ এ কে নিয়াজি আত্মসমর্পণ করেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম (১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ খ্রি.) হয়। তাই বলা যায়, পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে মুজিবর রহমান-এর ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment