সার্ক (SAARC) কীভাবে গঠিত হয়েছিল
সার্ক (SAARC) কীভাবে গঠিত হয়েছিল? |
সার্কের গঠন প্রক্রিয়া
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ও অব-উপনিবেশিকরণের শুরুর দিক থেকেই বিভিন্ন দেশে আঞ্চলিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেশকিছু সংগঠন গড়ে উঠেছিল। দক্ষিণ এশিয়ায় গড়ে ওঠা এই ধরনের একটি সংগঠন হল South Asian Association for Regional Co-operation বা SAARC (১৯৮৫ খ্রি.)। SAARC কীভাবে গঠিত হল সেই নিয়ে বিভিন্ন পণ্ডিত বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। যেমন-
বিবিধ সম্মেলন
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে আয়োজিত এশীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন, ফিলিপিনস-এর বাগুইয়ো সম্মেলন (১৯৫০ খ্রি.) এবং কলম্বো সম্মেলন (১৯৫৪ খ্রি.)-এ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলির মধ্যে জোট সরকার গঠনের কথা বলা হয়। ১৯৭০-৭১ খ্রিস্টাব্দে যখন পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য, সেই সংকটময় পরিস্থিতিতেও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য জিয়াউর রহমান একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা মঞ্চ গঠনের কথা চিন্তা করেন।
বাংলাদেশের উদ্যোগ
বাংলাদেশের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুমায়ুন রসিদ চৌধুরি সার্ক (SAARC) প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রথম সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
১৯৭০-এর দশকে এশিয়ার রাজনৈতিক দোলাচল:
১৯৭০-এর দশকে-
- বাংলাদেশের স্বাধীনতালাভ (১৯৭১ খ্রি.),
- সিকিমের ভারতে অন্তর্ভুক্তিকরণ (১৯৭৫ খ্রি.),
- ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির নির্বাচনে পরাজয় ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর ক্ষমতাচ্যুতি (১৯৭৭ খ্রি.),
- দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক সংকট মোকাবিলায় ASEAN (Association of South East Asian Nations) গঠন,
- ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত সিমলা চুক্তি (১৯৭২ খ্রি.) এবং
- সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান দখল ইত্যাদি এশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলে। এইরূপ পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রগুলির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ নিজেদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং বহির্দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে সার্ক গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
সার্ক প্রতিষ্ঠা
সার্ক প্রতিষ্ঠায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের সক্রিয় উদ্যোগে ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও মালদ্বীপ -এই ৭টি দেশের বিদেশমন্ত্রীগণ SAARC প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর তাঁরা পারস্পরিক সহযোগিতার নীতি গ্রহণ করে কলম্বো (এপ্রিল, ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ), কাঠমাণ্ডু (১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ), দিল্লি (১৯৮২ খ্রিস্টাব্দ) ও ইসলামাবাদে (১৯৮২ খ্রিস্টাব্দ) পরপর চারটি সম্মেলনে মিলিত হন। শেষে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ডিসেম্বর জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে গড়ে ওঠে সার্ক (SAARC)। সার্কের সচিবালয় এবং সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয় নেপালের কাঠমাণ্ডুতে।
উপরিউক্ত সাতটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানগণ একটি সনদে স্বাক্ষর করে সার্ক গঠন করেন। সংখ্যায় মাত্র ৭টি দেশ হলেও বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১/৫ অংশ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আরও পড়ুন – বিংশ শতকে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের কারণ গুলি আলোচনা করো