সার্কের উদ্ভবের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা করো। এর উদ্দেশ্য কী ছিল
সার্কের উদ্ভবের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা করো। সার্ক গঠনের উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল? |
সার্ক গঠনের প্রেক্ষাপট
সার্কের প্রতিষ্ঠার পিছনে যে কারণগুলি বিদ্যমান ছিল, সেগুলি হল-
(ক) পারস্পরিক সংহতি ও সহযোগিতার ভাবনা
স্বাধীনতার পরবর্তীকালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির পশ্চাৎপদ অর্থনৈতিক অবস্থা, ঔপনিবেশিক শাসনের অভিজ্ঞতা, অভিন্ন সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক ঐতিহ্য সেই দেশগুলির মধ্যে একটি পারস্পরিক সংহতি এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র রচনা করেছিল।
(খ) দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির আগ্রহ
১৯৭০-এর দশকে দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি (বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতালাভ, ইন্দিরা গান্ধি ও জুলফিকার আলি ভুট্টোর ক্ষমতাচ্যুতি ইত্যাদি) এই অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলিকে জোটবদ্ধভাবে কাজ করতে আগ্রহী করেছিল।
(গ) ভারতের উদ্যোগ
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে আর্থিক দিক থেকে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠার আহ্বান জানান। দিল্লিতে আয়োজিত জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সম্মেলনেও তিনি পারস্পরিক সহযোগিতার নীতি প্রণয়ণের কথা বলেছিলেন।
(ঘ) সচিবদের শীর্ষ সম্মেলন
ASEAN এবং EC-এর ক্রমবর্ধমান সাফল্যে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও মালদ্বীপের ন্যায় দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলি নিজেদের মধ্যে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট হয়। তাই তারা পর্যায়ক্রমে কলম্বো, কাঠমান্ডু, ইসলামাবাদ, ঢাকা ও দিল্লিতে ১৯৮১-৮৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কয়েকটি সম্মেলনে মিলিত হয়। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে ভুটানের রাজধানী থিম্পু-তে শেষবারের জন্য মিলিত হয়ে এই ৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানগণ সার্ক গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
(ঙ) জিয়াউর রহমানের উদ্যোগ
বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সার্ক গঠনের ক্ষেত্রে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই দক্ষিণ এশিয়ার উক্ত ৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা একত্রে মিলিত হয়ে সার্ক গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
সার্ক গঠনের উদ্দেশ্য
১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত সার্কের সনদের ১ নং ধারায় এর উদ্দেশ্যগুলি লিপিবদ্ধ হয়েছে। এগুলি হল-
(ক) জনকল্যাণ
দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, তাদের কল্যাণসাধন এবং এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিসাধন করাই ছিল সার্কের প্রধান লক্ষ্য।
(খ) আত্মনির্ভরতা সৃষ্টি
দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলি ছিল সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত। তাই এর অধিবাসীদের মধ্যে থেকে পরাধীন ভীত-সন্ত্রস্ত মনোভাব দূর করতে সার্কের সদস্যগণ পারস্পরিক নির্ভরতার পাশাপাশি প্রতিটি মানুষের আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির প্রতি নজর দিয়েছিল।
(গ) সম অধিকার প্রদান
দক্ষিণ-এশিয়ার রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতিবিধানের জন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে সমাজে সমান অধিকার দান এবং তাদের নিজস্ব ক্ষমতার পূর্ণ বিকাশের সুযোগ প্রদান করাই ছিল সার্কের উদ্দেশ্য।
(ঘ) যোগাযোগ বৃদ্ধি ও তথ্য বিনিময়
সার্কের লক্ষ্য ছিল প্রতিটি দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা এবং সার্কের সদস্যদের মধ্যে তথ্য বিনিময় করা।