সাম্রাজ্যবাদ বলতে কী বোঝো? সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের কারণগুলি আলোচনা করো
সাম্রাজ্যবাদ (Imperialism)
সাম্রাজ্যবাদ কথাটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Imperialism. ইম্পিরিয়ালিজম কথাটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ইম্পেরিয়াম (Imperium) থেকে, যার অর্থ সর্বময় কর্তৃত্ব (Supreme Power)। শিল্পবিপ্লবের প্রাক্কালে সাম্রাজ্যবাদ বলতে বিজিত দেশে স্থানিক অধিকার (Territorial Domination) বলবৎ করাকেই বোঝাত। কিন্তু শিল্পবিপ্লবের পর সাম্রাজ্যবাদ বলতে বিজিত দেশে কেবল ভৌমিক অধিকার নয়, তার জনশক্তি, সংস্কৃতি-সহ সবকিছুকে গ্রাস করা এবং সাম্রাজ্যবাদী দেশের স্বার্থে ব্যবহার করাকে বোঝায়।
সাম্রাজ্যবাদের সংজ্ঞা বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে-
ভি আই লেলিন-এর মত: লেনিন-এর মতে, পুঁজিবাদের জঠরে সাম্রাজ্যবাদের জন্ম অর্থাৎ ‘সাম্রাজ্যবাদ হল পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ পর্যায়।’
জে এ হবসন-এর মত: জে এ হবসন-এর মতে, মূলত অর্থনৈতিক স্বার্থের কার্যকারিতাই সাম্রাজ্যবাদের মূল উৎস।
সংজ্ঞার ভিন্নতা সত্ত্বেও একটি বিষয় সুস্পষ্ট যে, সাম্রাজ্যবাদ এমন এক নীতি, যার মাধ্যমে কোনো শক্তিশালী দেশ তুলনামূলকভাবে দুর্বল দেশের উপর নিজ প্রভুত্ব ও আধিপত্য বিস্তার করতে পারে।
সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের কারণসমূহ
অর্থনৈতিক কারণ
জে এ হবসন, রুডলফ হিলফারডিং, ভি আই লেনিন-সহ অনেক বিশেষজ্ঞই অর্থনৈতিক সুযোগসুবিধার পুর্ণাঙ্গ সদ্ব্যবহারকে সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। হবসনের মতে, মাত্রাতিরিক্ত মূলধনের লগ্নির ক্ষেত্র অনুসন্ধানের জন্যই সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ঘটে। হিলফারডিং বুর্জোয়া রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সক্রিয়তা এবং লেনিন পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ বিকাশের
রাজনৈতিক কারণ
সাম্রাজ্যবাদের উত্থানের পিছনে অর্থনৈতিক মধ্যে সাম্রাজ্যবাদের উত্থানের কারণ খুঁজে পেয়েছেন। উপাদানের পাশাপাশি রাজনৈতিক উপাদানও সক্রিয় ছিল। ইউরোপীয় দেশগুলির বিকৃত জাতীয়তাবাদ অর্থাৎ অ্যাংলো-স্যাক্সন জাতির শ্রেষ্ঠত্বের তত্ত্ব এবং জাতীয় মর্যাদা বৃদ্ধির উন্মাদ প্রতিযোগিতাই যে সাম্রাজ্যবাদের পথকে প্রশস্ত করেছিল, তা অনস্বীকার্য।
সামাজিক কারণ
(i) উদ্বৃত্ত জনসংখ্যা: উনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলিতে জনসংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেলে উদ্বৃত্ত জনসংখ্যার পুনর্বাসন এবং কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্টি হয়।
(ii) জাতীয় নিরাপত্তা: সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি আংশিকভাবে দায়ী। কোনো দেশ জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার অজুহাতে তার ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে অন্য দেশের উপর অধিকার কায়েম করলে তা সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্টি করে।
অন্যান্য কারণ
(i) ধর্মীয় কারণ: ব্রিটিশ ধর্মপ্রচারক ডেভিড লিভিংস্টোন, ফরাসি ধর্মপ্রচারক স্ট্যানলি, লেভিজেরি প্রমুখ দাসব্যাবসা বন্ধ করতে আফ্রিকায় গেলে এদের ধর্মপ্রচারের সূত্র ধরে ইউরোপীয় বণিক শ্রেণি আফ্রিকায় প্রবেশ করে।
(ii) সভ্যতার প্রসার: সাম্রাজ্যবাদী সম্প্রসারণকে অনেক ইউরোপীয় চিন্তাবিদ মহান কর্তব্য বলে মনে করতেন। সাম্রাজ্যবাদী সম্প্রসারণের মাধ্যমে তারা আফ্রো-এশীয় জাতিগুলিকে সভ্য করে তোলার অজুহাতে সাম্রাজ্যবাদকে প্রশ্রয় দেন।
আরও পড়ুন – ভারতে রেলপথ প্রবর্তনের উদ্দেশ্য আলোচনা করো