লর্ড ডালহৌসির রেলপথ বিস্তারনীতি আলোচনা করো। |
লর্ড ডালহৌসির রেলপথ বিস্তারনীতি
সামরিক দিক: ডালহৌসি উপলব্ধি করেন যে, ভারতে স্থায়ীভাবে ব্রিটিশ উপনিবেশ বজায় রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল আধুনিক পরিবহণ ব্যবস্থার প্রচলন। রেলপথের মাধ্যমে ভারতের একস্থান হতে অন্যস্থানে সেনাবাহিনী, অস্ত্রশস্ত্র, রসদ দ্রুত প্রেরণ করা সম্ভব হবে।
অর্থনৈতিক দিক: ঘোরতর সাম্রাজ্যবাদী ডালহৌসি ভারতকে কাঁচামালের বাজারে পরিণত করেন। ইংরেজ পুঁজিপতিদের রেলপথে বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফার সন্ধান দেওয়া ইত্যাদি কারণে তিনি রেলপথ প্রবর্তন এবং সম্প্রসারণের কথা ভেবেছিলেন।
প্রশাসনিক দিক: ডালহৌসির আমলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পরিসীমা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ফলে এত বড় ভৌগোলিক এলাকায় পুরোদস্তুর প্রশাসনিক কার্যকলাপ জারি রাখার জন্য প্রয়োজন ছিল রেলের মত উন্নত পরিবহণের।
রেলপথ স্থাপন: অতঃপর ডালহৌসির উদ্যোগের ফলস্বরূপ বোম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত ২১ মাইল দীর্ঘ রেলপথে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের সূচনা হয় (১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের ১৬ এপ্রিল)। এরপর দ্বিতীয় রেলপথ চালু হয়েছিল বাংলার হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত যাত্রাপথে (১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট)। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে রাণিগঞ্জ অবধি রেলপথ স্থাপন করা হয়। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মাদ্রাজ, বোম্বাই, কলকাতা বন্দর এই রেল যোগাযোগের অন্তর্ভুক্ত হয়। ডালহৌসির শাসনকাল (১৮৪৮-১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে) পর্যন্ত ভারতে স্থাপিত রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ছিল ২০০ মাইল। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সময়ে রেলপথের দৈর্ঘ্য বেড়ে দাড়ায় ৪৩৯ কিলোমিটারে।
প্রাথমিক পর্বের উদ্যোগ: প্রথমদিকে রেলপথ সম্প্রসারণের দায়িত্ব কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার ব্যাপারে মনোস্থির করেন ডালহৌসি। এরপর বেসরকারি ইংরেজ বিনিয়োগকারীদের দাবি অনুসারে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট প্রারম্ভিক গ্যারান্টি ব্যবস্থার সূচনা করে। এই ব্যবস্থায় রেল সম্প্রসারণের কাজে সরকার কর্তৃক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে ৯৯ বছরের লিজের ভিত্তিতে বিনামূল্যে জমিদান করার কথা বলা হয়। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলি চাইলে ৬ মাসের নোটিশ দিয়ে রেল সম্প্রসারণের কাজ থেকে সরে যেতে পারবে এবং সেক্ষেত্রে তারা তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাবে বলে ঘোষণা করা হয়। এই নতুন ব্যবস্থায় ভারতে ১৮৪৯ থেকে ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে ৪,২৫৫ মাইল রেলপথ নির্মিত হয়েছিল।