মৌখিক ঐতিহ্য (Oral Tradition) বলতে কী বোঝো? সাম্প্রতিক ইতিহাসচর্চায় এর গুরুত্ব আলোচনা করো। |
মৌখিক ঐতিহ্য (Oral Tradition)
সাধারণত লোকমুখে প্রচলিত বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ মানুষের মুখে শুনে শুনে এবং লোকমুখে প্রচলিত ছড়া, গান এবং সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে মৌখিক ঐতিহ্য সংগ্রহ করা হয়।
সাম্প্রতিক ইতিহাসচর্চায় মৌখিক ঐতিহ্যের গুরুত্ব
অপ্রথাগত উপাদান: আধুনিক ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে অপ্রথাগত উপাদান হিসেবে মৌখিক ঐতিহ্যকে ব্যবহার করা হয়। পল থমসন মৌখিক ঐতিহ্য অনুসরণ করে ইতিহাস রচনার পক্ষপাতী। তাঁর মতে, প্রথাগত ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে যারা নিয়োজিত সম্ভবত তাঁরা নতুন কোনো পদ্ধতিকে ব্যবহার করার বিষয়ে শঙ্কিত। কিন্তু যেসব সমাজে শিক্ষার প্রসার ঘটেনি সেখানে মৌখিক তথ্যের ব্যবহার কার্যত অপরিহার্য। আফ্রিকার ক্ষেত্রে জ্যান ভ্যানসিনার গবেষণা এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য। তাঁর মতে, মৌখিক তথ্যের সাহায্যে অন্যান্য তথ্যকে যাচাই ও সমর্থন করা যেতে পারে। ②
প্রাচীনত্ব: মানবসভ্যতার প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের মুখে মুখে বিভিন্ন কাহিনি প্রচলিত। লিখিত ইতিহাস শুরু হওয়ার আগে এই সকল মৌখিক কাহিনিগুলিতে মানুষ বিশ্বাস করত, তাই মানুষের আদিম সমাজে মৌখিক ঐতিহ্যের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।
নিম্নবর্গের ইতিহ্যাসর উপাদান: অনেক সময় নিম্নবর্গের মানুষ অথবা উপজাতিদের ইতিহাস রচনায় মৌখিক ঐতিহ্য অনেক তথ্য সরবরাহ করে থাকে। নিম্নবর্গের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে মৌখিক ঐতিহ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে ঐতিহাসিকরাও সহমত।
যথার্থতা : মৌখিক ঐতিহ্যের মাধ্যমে যথার্থ ইতিহাস রচিত হতে পারে। কারণ, ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা রচিত ইতিহাস পুনর্নির্মাণের ক্ষেত্রে অনেক সময় উপনিবেশের ঐতিহাসিকরা নিজ দেশে প্রচলিত মৌখিক ঐতিহ্যের উপর গুরুত্ব দিয়ে নিরপেক্ষ ইতিহাস রচনায় উদ্যোগী হন।
আনন্দ দান ও নীতিশিক্ষা : সমাজের সাধারণ মানুষকে আনন্দ দান করার ক্ষেত্রে মৌখিক ঐতিহ্যের গুরুত্ব রয়েছে। এ ছাড়া একটি দেশ, জাতি কিংবা আঞ্চলিক জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে এবং রীতিনীতি ও নৈতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে মৌখিক ঐতিহ্যের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।