মেটারনিখ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি কী? এই ব্যবস্থার সফলতা আলোচনা করো

মেটারনিখ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি কী? এই ব্যবস্থার সফলতা আলোচনা করো – আজকের পর্বে মেটারনিখ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি কী? এই ব্যবস্থার সফলতা আলোচনা করা হল।

    মেটারনিখ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি কী? এই ব্যবস্থার সফলতা আলোচনা করো

    মেটারনিখ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি কী? এই ব্যবস্থার সফলতা আলোচনা করো
    মেটারনিখ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি কী? এই ব্যবস্থার সফলতা আলোচনা করো।

    ভূমিকা

    অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলার তথা ইউরোপের অবিসংবাদী রাজনীতিবিদ প্রিন্স মেটারনি ফরাসি বিপ্লব প্রসূত ভাবধারাগুলিকে দমন করতে এবং প্রাক্-বৈপ্লবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন তাকেই মেটারনিখ ব্যবস্থা বলা হয়।

    মেটারনিখ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

    1. প্রগতিশীল ভাবধারার ধ্বংস সাধন-ফরাসি বিপ্লবের ফলে উদ্ভূত উদারতন্ত্রী তথা প্রগতিশীল ভাবধারার (উদারতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ) তীব্র বিরোধী ছিলেন তিনি। তিনি মনে করতেন ফরাসি বিপ্লবের ফলে তৈরি হওয়া ভাবধারাগুলি সমাজ ও সভ্যতার ধ্বংসাধনকারী তাই এই দুষ্ট ক্ষতকে উত্তপ্ত লৌহ-শলাকা দ্বারা দূর করতে হবে। 
    2. আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি ধূলিসাৎ-ফরাসি বিপ্লব প্রত্যেক জাতিকে আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি প্রতিষ্ঠা করেছিল মেটারনিখ বুঝতে পেরেছিলেন এ দাবি শুধুমাত্র ফ্রান্সের সীমানায় আবদ্ধ থাকবে না অচিরেই অস্ট্রিয়াকেও গ্রাস করবে এবং অস্ট্রিয়া খন্ড বিখন্ড হয়ে যাবে তাই যে-কোনো মূল্যে তিনি বিপ্লবকে ধ্বংস করতে উদ্যোগী হন। এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি উড়িয়ে দেন।
    3. ন্যায্য অধিকার নীতি-মেটারনিখ্ ন্যায্য অধিকার নীতি প্রয়োগ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ফরাসি বিপ্লবের আগের রাজবংশ ও রাজাদের ফিরিয়ে এনে বিপ্লব পূর্ববর্তী ইউরোপ প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেন। 
    4. সংস্কার বিরোধিতা-মেটারনি ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সংস্কার বিরোধিতা ও কোনো পরিবর্তন না করা সেজন্য তিনি বলতেন রাজত্ব করুন কিন্তু কোন পরিবর্তন বা সংস্কার করবেন না। 
    5. স্বাধীনতা হরণ-মেটারনিখ্ সংবাদপত্রের ও বাকস্বাধীনতা হরণ করেন। বিশ্ব বিদ্যালয়গুলির ওপর কঠোর সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন। রাজনৈতিক সভাসমিতি নিষিদ্ধ করেন। শিক্ষক ও ছাত্রদের ওপর গোয়েন্দাদের নজরদারি বৃদ্ধি করেন। 
    6. অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য রক্ষা করা-ইউরোপের রাজনীতিতে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য রক্ষা করা ছিল এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ ছাড়াও তিনি অভিজাততন্ত্র, সামন্ততন্ত্র ও পুরোহিততন্ত্রকে পূর্ণ সমর্থন জানান। রাজার দৈবসত্তাকে মেনে নেন। যে কোনোরকম উদারনীতির প্রমাণের তিনি কঠোর হাতে দমন করেন। ইউরোপীয় শক্তি সমবায়কে বিপ্লব প্রসূত ভাবধারায় কাজে লাগান। ভিয়েনা চুক্তির ভিত্তিকে আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষা করেন।
    নানাভাবে সমালোচিত হলেও এই মেটারনিখ ব্যবস্থার সফলতাকে অস্বীকার করা যায় না কেননা 
    1. এই ব্যবস্থার ফলে দীর্ঘদিন প্রায় চল্লিশ বছর ইউরোপে থেকে যুদ্ধের সম্ভবনা দূর হয়েছিল। 
    2. বহু জাতি অধ্যুষিত অস্ট্রিয়ার সংহতি রক্ষা হয়েছিল এবং ইউরোপের রাজনীতিতে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য বৃদ্ধি পেয়েছিল। 
    3. এই সময় ইউরোপে একদিকে শান্তি স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা হলে অন্যদিকে শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্যের সমৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে।

    উপসংহার

    ১৮১৫ থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মেটারনিখ ছিলেন সমগ্র ইউরোপীয় রাজনীতির ভাগ্যবিধাতা যদিও কোনোদিন তিনি জন গণ মন অধিনায়ক হতে পারেননি। তারই অঙ্গুলি হেলানে সমগ্র ইউরোপের রাজনীতি আবর্তিত হতে থাকে অর্থাৎ সেই সময় তিনি হয়ে উঠেন ইউরোপের রাজনীতির মুখ্য নিয়ন্ত্রা সেই কারণেই এই সময়কালকে বলা হয় মেটারনিখ যুগ।

    মেটারনিখের ব্যক্তিত্ব

    জন্ম-১৭৭৩ খ্রি. অভিজাত পরিবারে সুবক্তা, মার্জিত রুচি সম্পন্ন, সুচতুর আকর্ষণীয়, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন দর্শনে ভলতেয়ার, বিজ্ঞান নিউটন আর সাহিত্যে শেক্সপিয়রের সাহিত্যের ভক্ত ভিয়েনা সম্মেলনের সভাপতি, অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলার অস্ট্রিয়ার সম্রাট প্রথম ফ্রান্সিস ও প্রথম ফার্ডিন্যান্ডের অত্যন্ত অনুগত ও গুণগ্রাহী নিজের সর্ম্পকে তাঁর নিজের মূল্যায়ন-‘আমি কিছু আগে এলে জীবন ভোগ করতে পারতাম, কিছু পরে এলে নতুন সমাজের সেবা করতে পারতাম। কিন্তু এখন কেবল ভঙ্গুর পুরাতন ব্যাস্থাকে রক্ষা করতেই নিঃশেষ হয়ে গেলাম।

    Leave a Comment