মার্কেন্টাইল অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল? মার্কেন্টাইল অর্থনীতির অবসান কীভাবে ঘটেছিল

মার্কেন্টাইল অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল? মার্কেন্টাইল অর্থনীতির অবসান কীভাবে ঘটেছিল?

মার্কেন্টাইল অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল? মার্কেন্টাইল অর্থনীতির অবসান কীভাবে ঘটেছিল
মার্কেন্টাইল অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল? মার্কেন্টাইল অর্থনীতির অবসান কীভাবে ঘটেছিল?

 

১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের পর থেকে ইউরোপের অর্থনীতিতে পরিবর্তন ঘটেছিল। এই পরিবর্তনের মূলে ছিল মার্কেন্টাইলবাদ বা বণিকবাদ।

মার্কেন্টাইল অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যসমূহ

মূল্যবান ধাতু সঞ্চয়

মার্কেন্টাইলবাদের যুগে মূল্যবান ধাতু হিসেবে সোনা-রুপোর (বুলিয়ান) সঞ্চয় বিভিন্ন রাষ্ট্রের লক্ষ্য হয়ে ওঠে। স্পেন, পোর্তুগাল ল্যাটিন আমেরিকা থেকে এবং ইংল্যান্ড ভারত থেকে এই মূল্যবান ধাতু সংগ্রহ করে।

আমদানি নিয়ন্ত্রণ

মার্কেন্টাইলবাদের মূল বৈশিষ্ট্য হল আমদানিকৃত পণ্যদ্রব্যের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ। নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য ছিল দেশের শিল্পজাত সামগ্রীর রফতানি বৃদ্ধি এবং কৃষিজাত দ্রব্যের রফতানি হ্রাস করা। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাণ হ্রাসেও উদ্যোগ নেওয়া হয়।

শুল্কনীতির প্রবর্তন

মার্কেন্টাইল অর্থনীতির অপর বৈশিষ্ট্য হল- শুল্কনীতির প্রবর্তন। ইউরোপের সকল দেশই আমদানি যথাসম্ভব সংকোচ করে রফতানির উপর অধিক গুরুত্ব দেয়। এর ফলে সর্বত্র শুল্কপ্রাচীরের সৃষ্টি হয়, যার ফলে শুল্কজনিত সংঘর্ষের উদ্ভব ঘটে।

উৎপাদন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ

মার্কেন্টাইলবাদ উৎপাদন ব্যবস্থায় কঠোর রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের নীতিতে বিশ্বাসী ছিল। এই অর্থব্যবস্থায় শিল্প মাত্রেই রাষ্ট্র অর্থাৎ রাজার নিয়ন্ত্রণাধীন। রাষ্ট্র শিল্পগুলিকে গড়ে তোলার জন্য যেমন সর্বপ্রকার সাহায্য দান করত তেমনি ইচ্ছামতো সেগুলির উপর করও চাপাত।

ঔপনিবেশিক বিস্তার

মার্কেন্টাইল অর্থনীতির অপর এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার বিস্তার। এই অর্থব্যবস্থাকে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলতে উপনিবেশের প্রয়োজন দেখা দেয়। উপনিবেশগুলিকে শোষণ করে মাতৃভূমির সম্পদ বৃদ্ধি করার ধারণা ক্রমেই প্রকট হয়ে ওঠে। ফলে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি ক্রমশ উপনিবেশ দখলের প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে।

মার্কেন্টাইল অর্থনীতির অবসান

দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত থাকার পর নানান কারণে মার্কেন্টাইল অর্থনীতির অবসান ঘটে-

আমেরিকার স্বাধীনতা লাভ

উত্তর আমেরিকায় আটল্যান্টিক মহাসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ইংল্যান্ড ১৩টি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই প্রথম ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে ইংল্যান্ড মার্কেন্টাইল অর্থনীতির অনুসরণ করে। মার্কিন জনগণ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। পরে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে আমেরিকা স্বাধীনতা অর্জন করে। ফলে মার্কেন্টাইলবাদ আঘাত পায়।

অবাধ বাণিজ্য

অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ তাঁর ‘The Wealth of Nations’ গ্রন্থে অবাধ বাণিজ্য নীতির কথা বলেন। এই নীতি ছিল মার্কেন্টাইল অর্থনীতির সম্পূর্ণ বিপরীত। এই নীতি অনুসরণ করে ইউরোপের দেশগুলি লাভবান হতে থাকে। ফলে পুরোনো মার্কেন্টাইল অর্থনীতি অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।

শিল্প পুঁজির উদ্ভব

শিল্প পুঁজি আলাদাভাবে সৃষ্টি হয় না, মার্কেন্টাইল অর্থনীতির ভিতর থেকেই তা সৃষ্টি হয় এবং শিল্প পুঁজি থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি মুনাফা আসে। শিল্প যুগে সমাজে শিল্পমালিকদের হাতে বিপুল মুনাফা জমে ওঠে। শিল্পে বিনিয়োগ করা বেশি লাভজনক দেখে অনেক সাধারণ মানুষও শেয়ার কিনতে থাকে। পুঁজিবাদের এই উত্তরণের কারণে ধীরে ধীরে মার্কেন্টাইল অর্থনীতির অবসান ঘটে।

FAQs on – মার্কেন্টাইল অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল? মার্কেন্টাইল অর্থনীতির অবসান কীভাবে ঘটেছিল?

মার্কেন্টাইল বাদ কী?
 
মার্কেন্টাইল মতবাদ হল এমন একটি মতবাদ যেখানে কোনো দেশের বানিজ্যিক রপ্তানির পরিমাণ বাড়িয়ে আমদানি কমানোর কথা বলা হয়।

 

মার্কেন্টাইল মূলধন বলতে কী বোঝায়?
 
মার্কেন্টাইল মতবাদ হল এমন একটি মতবাদ যেখানে কোনো দেশের আর্থিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বানিজ্যিক রপ্তানির পরিমাণ বাড়িয়ে আমদানি কমানোর কথা বলা হয়।
মার্কেন্টাইল অর্থনীতির মূল কথা কী ?
রপ্তানি বাড়িয়ে আমদানি হ্রাস করা।
মার্কেন্টাইল বাদ কে বুলিয়নিজম বলা হয় কেন?
কারণ এখানে রপ্তানি বাড়িয়ে বৈদেশিক বানিজ্যকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়।
মার্কেন্টাইল বাদ শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন কে?
অ্যাডাম স্মিথ

Leave a Comment