মহারাষ্ট্রের সমাজসংস্কার আন্দোলনে গোপালহরি দেশমুখের ভূমিকার পর্যালোচনা করো

মহারাষ্ট্রের সমাজসংস্কার আন্দোলনে গোপালহরি দেশমুখের ভূমিকার পর্যালোচনা করো
মহারাষ্ট্রের সমাজসংস্কার আন্দোলনে গোপালহরি দেশমুখের ভূমিকার পর্যালোচনা করো।

মহারাষ্ট্রের সমাজসংস্কার আন্দোলনে গোপালহরি দেশমুখের ভূমিকা

মহারাষ্ট্রের সংস্কার আন্দোলনের মোট তিনটি ধারা প্রচলিত ছিল। প্রথম ধারাটি হল- মানবতাবাদী আদর্শে সার্বিক সংস্কার, দ্বিতীয় ধারাটি হল- পুনরুজ্জীবনবাদী ধারা এবং তৃতীয়টি লোকবাদী বা বহুজনবাদী ধারা। এদের মধ্যে প্রথম ধারাটি অর্থাৎ মানবতাবাদী আদর্শে সার্বিক সংস্কারের প্রবক্তা ছিলেন দাদোভা পাণ্ডুরঙ্গ এবং গোপালহরি দেশমুখ। লোকহিতবাদী নামে পরিচিত গোপালহরি দেশমুখ তৎকালে মহারাষ্ট্রে প্রচলিত বিভিন্ন কুসংস্কার ও কুপ্রথার দূরীকরণে উদ্যোগী হয়ে ওঠেন।

সমাজসংস্কার: সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে গোপালহরি দেশমুখের লক্ষ্য ছিল- নারীমুক্তি ও স্ত্রীশিক্ষার প্রসার, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ রদ, বিধবাবিবাহের প্রবর্তন, বিদ্যালয়, লাইব্রেরি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনশিক্ষার প্রসার এবং সামাজিক কুসংস্কার, যুক্তিহীন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও জাতিভেদ প্রথার দূরীকরণ।

সংস্কারমূলক প্রচেষ্টা:
গোপালহরি দেশমুখ প্রভাকর পত্রিকায় লোকহিতবাদী ছদ্মনামে সামাজিক সমস্যামূলক মোট ১০৮টি নিবন্ধ লিখে শিক্ষিত ও সচেতন মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি পুনায় প্রার্থনা সমাজের একটি শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে নারীমুক্তি সম্পর্কিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হত। আহমেদাবাদে বিচারপতি পদে থাকাকালীন সময়ে হিন্দু প্রকাশ, জ্ঞানপ্রকাশ, লোকহিতবাদী পত্রিকাও প্রকাশ করেন তিনি। পুনা শহরে তিনি একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। বোম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় গোপালহরি দেশমুখ উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর অনুরোধে বোম্বাইয়ের গভর্নর হেনরি ব্রাউন লাইব্রেরিতে বেশকিছু গ্রন্থ দান করেন। এ ছাড়া তাঁর চেষ্টায় কিছু বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠিত হয়। 

গোপালহরি দেশমুখ দীর্ঘকাল ধরে সমাজে প্রচলিত কুসংস্কারগুলি ধর্মের নামে পালন করার বিরোধী ছিলেন। তিনি চিন্তাবিদ ও লেখক হিসেবে সমাজের সমস্যাগুলির প্রতি দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রচার এবং গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে সমস্যাগুলি দূরীকরণে আংশিকভাবে সফলও হন তিনি। সীমিত সাফল্য সত্ত্বেও এই মহান ইচ্ছার জন্যই তিনি লোকহিতবাদী নামে পরিচিত হয়েছিলেন।

Leave a Comment