ভিয়েনা সম্মেলন কি সমর্থনযোগ্য? |
ভূমিকা
শান্তি প্রতিষ্ঠা: ফরাসি বিপ্লব, সন্ত্রাসের রাজত্ব, নেপোলিয়নের উত্থান প্রভৃতি কারণে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের মানুষ শান্তির জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল। ভিয়েনা ব্যবস্থার ফলে ইউরোপে অন্তত চল্লিশ বৎসরকাল শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই সময় ইউরোপে সাহিত্য, বিজ্ঞান শিল্পকলার উন্নতি ঘটে।
আধুনিক ভাবধারা : ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে এই পরিস্থিতিতে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র প্রভৃতি আধুনিক ভাবধারা সেই সময় ইউরোপের কম মানুষই বুঝতো। তাই ওসব ভাবনাকে গুরুত্ব না দিয়ে ভিয়েনা সম্মেলনের কর্তারা বাস্তব বুদ্ধিরই পরিচয় দিয়েছেন।
প্রগতিশীল ভাবনা: পরাজিত ফ্রান্সের প্রতি উদার মনোভাব ও ব্যবহার, দাস ব্যবস্থার উচ্ছেদ, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, জার্মানি প্রভৃতি দেশের সংবিধান প্রণয়নের যে সুযোগ ভিয়েনা সম্মেলনে প্রদান করা হয় তা যুগাপেক্ষা প্রগতিশীল ছিল বলা যায়।
উদারতা : ভিয়েনা চুক্তি ইউট্রেক্টের সন্ধি (১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে) বা ভার্সাই সন্ধি অপেক্ষা অনেক বেশি উদার ছিল। বিজয়ী শক্তিবর্গ বিজিত শক্তি ফ্রান্সকে মতামত দানের সুযোগ প্রদান করে এক অনন্য নজির গড়ে তোলেন যা উদারতার পরিচায়ক। এ ছাড়া ভিয়েনা চুক্তির সিদ্ধান্তগুলিতে ভবিষ্যতের যুদ্ধের বীজ লুকিয়ে ছিল না। ফ্রান্সের প্রতি উগ্র প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি।
ঐক্যবন্ধনের পথ প্রদান: জার্মানিতে প্রাশিয়া (জার্মান বুন্ডের সহসভাপতি) ও ইটালিতে পিডমন্ট সার্ডিনিয়াকে শক্তিশালী করে ভিয়েনা সম্মেলনের নেতৃবর্গ অজ্ঞাতসারেই জার্মানি ও ইতালির ঐক্যের পথকে প্রশস্ত করেছিলেন।
আন্তর্জাতিকতাবাদের পথপ্রদর্শক: ভিয়েনা সম্মেলন ছিল পৃথিবীর প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন যা পরবর্তীকালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যেমন জাতিসংঘ ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গড়ে তোলার পথ প্রদর্শক ছিল।
পরিশেষে বলা যেতে পারে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইউরোপের শান্তি বজায় থাকার অনেকটা কৃতিত্ব ভিয়েনা বন্দোবস্তের। তাই বলা যেতে পারে ভিয়েনা সম্মেলন ছিল মোটামুটিভাবে একটি ‘যুক্তিসংগত’ ও ‘রাষ্ট্রপুঞ্জ’ সুলভ ব্যবস্থা। Thomson এর ভাষায় On the whole it was a reasonable and statesman like arrangement.