ভিয়েনা সম্মেলনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল – আজকের পর্বে ভিয়েনা সম্মেলনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল তা আলোচনা করা হল।
ভিয়েনা সম্মেলনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল
ভিয়েনা সম্মেলনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল? |
ভূমিকা
নেপোলিয়নের পতনের পর ইউরোপের পুনর্গঠনের জন্য বিজয়ী মিত্রশক্তিবর্গ অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় (পোপ ও তুরস্ক ব্যতীত) ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে যে আন্তর্জাতিক সম্মেলনটির আয়োজন করেছিলেন সেটি ভিয়েনা সম্মেলন নামে পরিচিত। বিভিন্ন দেশের রাজা, রাজনীতিজ্ঞ এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতির ফলে ভিয়েনা সম্মেলন এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের রূপ পায়। ইউরোপে এর আগে জাঁকজমকপূর্ণ কোনো কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়নি।
বলা যায় ইউরোপের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটায় ভিয়েনা সম্মেলন (সেপ্টেম্বর, ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে জুন, ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ)। এখানে প্রায় প্রতিটি দেশ অংশগ্রহণ করলেও (পোপ ও তুরস্ক ব্যতীত) অস্ট্রিয়া, রাশিয়া, ইংল্যান্ড ও প্রাশিয়াই ছিল মূল চালিকাশক্তি। এই সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল ইউরোপের পুনর্গঠন, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নেপোলিয়নের ভীতি থেকে ইউরোপকে রক্ষা করা।
ভিয়েনা সম্মেলনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য
ভিয়েনা সম্মেলনের উদ্দেশ্যগুলি ছিল-
(ক) ইউরোপের পুনগঠন
নেপোলিয়নের বিস্তার নীতির মাধ্যমে ইউরোপে যে রাজনৈতিক বিন্যাসের পরিবর্তন ঘটেছিল ন্যায় ও সততার ভিত্তিতে তার পুনর্গঠন এবং জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড, স্যাক্সনি ও রাইন অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা। এ ছাড়া নেপোলিয়ন কর্তৃক বিতাড়িত পুরাতন রাজবংশগুলিকে নিজ নিজ রাজ্যে প্রতিষ্ঠা করা।
(খ) নিরবচ্ছিন্ন শান্তি প্রতিষ্ঠা
ফ্রান্সকে এমন সীমানায় আবদ্ধ করা যাতে ভবিষ্যতে ফ্রান্স ইউরোপের শান্তি পুনরায় ভাঙতে না পারে। সেজন্য ক্ষতবিক্ষত ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও সৌভ্রাতৃত্ব স্থাপন করা ছিল ভিয়েনা সম্মেলনের অন্যতম লক্ষ্য।
(গ) রাজবংশের পুনঃপ্রতিষ্ঠা
নেপোলিয়নের তথা ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ইউরোপের যে সমস্ত রাজা ও রাজবংশ রাজত্ব করত তাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
(ঘ) শক্তিসাম্য প্রতিষ্ঠা
বিজয়ী চতুঃশক্তি নিজেদের ক্ষতিপূরণের জন্যে রাজ্য ভাগ করে নিতে স্থির করে। কিন্তু এই রাজ্যভাগের ফলে বিজয়ী শক্তিবর্গ যাতে একে অপরের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠতে না পারে এবং ফ্রান্স যাতে আর কখনো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়।
(ঙ) গোপন চুক্তির মর্যাদা দান
নেপোলিয়নের পতনের পূর্বে নেপোলিয়নকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে যে গোপন চুক্তিগুলি হয়েছিল তার মর্যাদা দান করা।
(চ) ক্ষতিপূরণ
নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে ইউরোপের দেশগুলির যে সমস্ত ক্ষতি হয়েছিল সেই দেশগুলির যথাযথ ক্ষতিপূরণ দানের ব্যবস্থা করা।
(ছ) ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল আত্মসাৎ
নেপোলিয়নের পতনে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বা অঞ্চল আত্মসাৎ করা।
মূল্যায়ন
উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে ভিয়েনা সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য ইউরোপের পুনর্গঠন হলেও তা প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল না। প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল ফরাসি বিপ্লব প্রসূত উদারনৈতিক ভাবধারা বিপ্লবী ভাবনার গতিরোধ করা, রাজকীয় শক্তিগুলিকে সুসংহত করা এবং ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলকে আত্মসাৎ করা।