ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার সম্পর্কে আলােচনা করাে

ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার সম্পর্কে আলােচনা করাে

ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার সম্পর্কে আলােচনা করাে
ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার সম্পর্কে আলােচনা করাে।

ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার

ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন খ্রিস্টান মিশনারি, বাঙালি মধ্যবিত্ত এবং বিদেশি মনীষীগণ।

(ক) প্রারম্ভিক পর্যায়ের শিক্ষা

ঔপনিবেশিক শাসনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে ব্রিটিশরা পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে তেমন উৎসাহ না দেখালেও সেই সময়কার বহু শিক্ষিত ইংরেজ মনীষী প্রাচ্যের শিক্ষা সম্পর্কে যথেষ্ট উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ভারতীয় মুসলমানদের অনুরোধে গড়ে তোলেন কলকাতা মাদ্রাসা (১৭৮১ খ্রি.)। স্যার উইলিয়ম জোনসের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় এশিয়াটিক সোসাইটি (১৭৮৪ খ্রি.)। বেনারসে ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে জোনাথন ডানকান প্রতিষ্ঠা করেন বেনারস সংস্কৃত কলেজ। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হয় ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ। ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বুকে প্রতিষ্ঠিত হয় সংস্কৃত কলেজ।

(খ) বেসরকারি উদ্যোগ

পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে প্রথম উদ্যোগ ছিল ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি ইংরেজি বিদ্যালয়, ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে এর নামকরণ হয় অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি, ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে হেয়ার স্কুল; ডেভিড ড্রমন্ড, মার্টিন, শোরবর্ন প্রমুখ বিদেশিদের ব্যক্তিগত উদ্যোগেও বিভিন্ন স্কুল গড়ে ওঠে।

(গ) মিশনারিদের উদ্যোগ

১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করেন মার্শম্যান, ওয়ার্ড এবং উইলিয়ম কেরি। এঁদের উদ্যোগেই বাংলা ও ভারতের অন্যান্য স্থানে অনেক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় শ্রীরামপুর কলেজ। এ ছাড়া লন্ডন মিশনারি, স্কটিশ মিশনারি ও জেসুইট মিশনারি-দের উদ্যোগেও বহু পাশ্চাত্য শিক্ষালয় গঠিত হয়।

  • লন্ডন মিশনারি সোসাইটি: লন্ডন মিশনারি সোসাইটি পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। এই সোসাইটির রবার্টস-এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ২৬টি বিদ্যালয়।
  • স্কটিশ মিশনারি : স্কটিশ মিশনারি আলেকজান্ডার ডাফ (Alexander Duff)-এর উদ্যোগে বহু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে অন্যতম ছিল জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন (১৮৩০ খ্রি.)। পরবর্তীতে এটি স্কটিশ চার্চ কলেজ (১৮৩৫ খ্রি.) নামে পরিচিতি লাভ করে।
  • জেসুইট মিশনারি: ভারতে জেসুইট মিশনারিগণ সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ও লরেটো হাউস কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • চার্চ মিশনারি সোসাইটি : চার্চ মিশনারি সোসাইটির প্রচেষ্টায় বহু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। শিবপুর বিশপ’স কলেজ (১৮২০ খ্রি.), মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজ (১৮৩৭ খ্রি.), বোম্বাই-এর উইলসন কলেজ (১৮৩২ খ্রি.) প্রভৃতি এদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

(ঘ) সরকারি প্রচেষ্টা

১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার আইনে ভারতীয় জনশিক্ষার জন্য প্রতিবছর ১ লক্ষ টাকা ব্যয়ের কথা বলা হয়। এর জন্য গঠিত হয় জেনারেল কমিটি অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন (General Committee of Public Instruction)। সরকারি তরফে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে উপস্থাপিত মেকলে মিনিটস-এ ইংরেজি শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ভারতে সরকারিভাবে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তিত হয় বড়োলাট লর্ড বেন্টিঙ্কের আমলে। তাঁর উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। তাছাড়া উডের ডেসপ্যাচ (১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দ) অনুযায়ী ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা, বোম্বাই এবং মাদ্রাজে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

Leave a Comment