ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে আদিবাসী ও দলিত শ্রেণির আন্দোলনের বিবরণ দাও

ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে আদিবাসী ও দলিত শ্রেণির আন্দোলনের বিবরণ দাও – আজকের পর্বে আলোচনা করা হল ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে আদিবাসী ও দলিত শ্রেণির আন্দোলনের বিবরণ নিয়ে।

    ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে আদিবাসী ও দলিত শ্রেণির আন্দোলনের বিবরণ দাও

    ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে আদিবাসী ও দলিত শ্রেণির আন্দোলনের বিবরণ দাও
    ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে আদিবাসী ও দলিত শ্রেণির আন্দোলনের বিবরণ দাও।

    ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে আদিবাসী শ্রেণির আন্দোলন

    (ক) চুয়াড় বিদ্রোহ (১৭৬৮ খ্রি., ১৭৯৮-৯৯ খ্রি.)

    ঘাটশিলার জমিদার জগন্নাথ সিং ধল-এর নেতৃত্বে চুয়াড় নামক উপজাতি সম্প্রদায় মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়া জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ঔপনিবেশিক শাসনবিরোধী যে আন্দোলন শুরু করেছিল, তা চুয়াড় বিদ্রোহ নামে পরিচিত। প্রায় ৩০ বছর ধরে এই আন্দোলন চলেছিল।

    (খ) কোল বিদ্রোহ (১৮৩১-৩২ খ্রি.)

    বর্তমান বিহারের ছোটোনাগপুর অঞ্চলে বসবাসকারী কোল উপজাতিরা অত্যাচারী মহাজন, জমিদার ও ইংরেজ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। তাদের দাবি ছিল ছোটোনাগপুরের উপর একমাত্র তাদের অধিকার, তাই বহিরাগতদের অবিলম্বে ছোটোনাগপুর পরিত্যাগ করতে হবে। বুদ্ধু ভগত, জোয়া ভগত প্রমুখ এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। ২ বছর চলার পর ব্রিটিশরা এই বিদ্রোহ দমন করে।

    (গ) সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৮৫৫ খ্রি.)

    ছোেটানাগপুর, মালভূম, পালামৌ, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর অঞ্চলে বসবাসকারী সাঁওতালরা জমিদার, সুদখোর মহাজন এবং ব্রিটিশ কর্মচারীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সিধু, কানু, চাঁদ, ভৈরব, কালো প্রামাণিক প্রমুখের নেতৃত্বে সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা করে। তাদের দাবি ছিল রাজমহলের পার্বত্য অঞ্চল এবং বীরভূমে (দামিন-ই-কোহ) ব্রিটিশ সরকারের আধিপত্যের অবসান ঘটানো। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ব্যাপক হত্যালীলার মাধ্যমে এই বিদ্রোহ দমন করা হয়।

    (ঘ) মুণ্ডা বিদ্রোহ (১৮৯৯-১৯০০ খ্রি.)

    ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪’ ডিসেম্বর বিরসা মুণ্ডা এবং গয়া মুণ্ডার নেতৃত্বে ছোটোনাগপুর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে মুণ্ডা বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল।

    উপরিউক্ত বিদ্রোহগুলি ছাড়াও খাসি বিদ্রোহ (১৭৮০ খ্রি.), ভিল বিদ্রোহ (১৮১৯ খ্রি.), খোন্দ বিদ্রোহ (১৮৪৬ খ্রি.) প্রভৃতি ছিল উল্লেখযোগ্য।

    ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে দলিত আন্দোলনসমূহ

    (ক) শ্রী নারায়ণ গুরুর আন্দোলন

    কেরালার দলিত সম্প্রদায়ের নেতা শ্রী নারায়ণ গুরু দলিত শ্রেণির সামাজিক মর্যাদা আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাঁর উদ্যোগে ভাইকম মন্দিরে দলিতদের প্রবেশের অধিকার স্বীকৃত হয়।

    (খ) জ্যোতিরাও ফুলের আন্দোলন

    ১৮৭০-এর দশকে জ্যোতিরাও ফুলে সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে দলিতদের মর্যাদা আদায়ের জন্য আন্দোলন শুরু করেন।

    (গ) রামস্বামী নাইকারর আন্দোলন

    ই ভি রামস্বামী নাইকার পরিচালিত দলিতদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল- পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে সমান অধিকার প্রদান করা এবং পাশাপাশি তাদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা।

    (ঘ) জাস্টিস পার্টির আন্দোলন

    ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে টি এম নায়ার এবং পি চেট্টির যৌথ উদ্যোগে মাদ্রাজে দলিত শ্রেণির অবস্থার উন্নতির জন্য জাস্টিস পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তারা আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের চাপে পড়ে শেষপর্যন্ত ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসনসংস্কার আইন দ্বারা মাদ্রাজ আইন পরিষদে দলিতদের জন্য ২৮টি আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

    (ঙ) বাংলার দলিত আন্দোলন

    বাংলার দলিত আন্দোলনের ক্ষেত্রে হরিচাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুর-এর নেতৃত্বে ফরিদপুরের গরিব কৃষিজীবী নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের আন্দোলন বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এই সম্প্রদায়ের মুকুন্দবিহারী মল্লিক ‘All India Depressed Class’ গঠন করেন। এই সম্প্রদায়ের দলিত আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল।

    Leave a Comment