ব্রিটিশ শাসনকালে দেশীয় উদ্যোগে শিল্পের বিকাশের বিবরণ |
শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতীয় উদ্যোগের বিকাশ
পাটশিল্প: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বাজারে পাটের ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগে ভারতীয় উদ্যোগপতি বিড়লা এবং হুকুমচাঁদ যথাক্রমে ১৯২১ এবং ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে কয়েকটি পাটের কারখানা স্থাপন করেন।
বস্ত্রশিল্প: পারসি উদ্যোগপতি কাউয়াসজি নানাভাই দাভর ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাইতে প্রথম কাপড়ের কলটি স্থাপন করেন। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে জামসেদজি টাটা নাগপুরে এম্প্রেস মিল স্থাপনে উদ্যোগী হন। ক্রমে নাগপুর, শোলাপুর, সুরাট প্রভৃতি স্থান বস্ত্রশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
লৌহ-ইস্পাত শিল্প : হাওড়ার শিবপুরে কিশোরীলাল মুখোপাধ্যায় ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে একটি লৌহ-যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা স্থাপন করেন। শিল্পপতি রাজেন্দ্রলাল মুখোপাধ্যায় এবং ইংরেজ প্রযুক্তিবিদ মার্টিন-এর উদ্যোগে যৌথভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানি (১৮৯২ খ্রি.)। তবে লৌহ-ইস্পাত শিল্পে বিপ্লবের সূচনা করেন শিল্পপতি জামশেদজি টাটা, যিনি বিহারের জামশেদপুরে প্রতিষ্ঠা করেন TISCO বা টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি (১৯০৭ খ্রি.)। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইংল্যান্ড, জার্মানি ও বেলজিয়াম থেকে ভারতে ইস্পাত আমদানি হ্রাস পেলে TISCO লৌহ-ইস্পাত শিল্পে প্রভূত উন্নতি ঘটায়।
জাহাজ নির্মাণ ও পরিবহণ শিল্প: মাদ্রাজের প্রখ্যাত জাতীয়তাবাদী নেতা চিদম্বরম পিল্লাই প্রতিষ্ঠা করেন স্বদেশি স্টিম-শিপ কোম্পানি (১৯০৬ খ্রি.)। পুরুষোত্তম ঠাকুর, ওয়ালচাঁদ হীরাচাঁদ প্রমুখের উদ্যোগে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় সিন্ধিয়া স্টিল নেভিগেশন কোম্পানি।
অন্যান্য শিল্প:
- কয়লা: কয়লা শিল্পে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের কার, টেগোর অ্যান্ড কোম্পানি ছিল অন্যতম। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়েছিল ইন্ডিয়ান মাইনিং ফেডারেশন।
- রাসায়নিক শিল্প : ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র রায় কলকাতায় বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া চা, পাট ইত্যাদি শিল্পেও ভারতীয় উদ্যোগপতিরা যথেষ্ট সাফল্যলাভ করেছিলেন।
উপরোক্ত শিল্পগুলি ছাড়াও কাগজ, সিমেন্ট, অভ্র প্রভৃতি বড়ো শিল্পে এবং দেশলাই, তেল, সাবান প্রভৃতি নিত্যপ্রয়োজনীয় শিল্পক্ষেত্রেও ভারতীয় পুঁজির বিনিয়োগ ছিল উল্লেখযোগ্য।