ব্রিটিশ শাসনকালে আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের বিবরণ দাও

ব্রিটিশ শাসনকালে আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের বিবরণ দাও – আজকের পর্বে আলোচনা করা হল ব্রিটিশ শাসনকালে আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের বিবরণ নিয়ে।

ব্রিটিশ শাসনকালে আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের বিবরণ দাও

ব্রিটিশ শাসনকালে আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের বিবরণ দাও
ব্রিটিশ শাসনকালে আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের বিবরণ দাও।

আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিবরণ

ভারতের বিভিন্ন পার্বত্য বনভূমি অঞ্চলে বসবাসকারী সাঁওতাল, কোল, ভিল, মুণ্ডা, ওঁরাও প্রভৃতি আদিবাসী সম্প্রদায়ের দরিদ্র মানুষরা চাষবাস, শিকার, কাঠ-মধু-ফলমূল সংগ্রহ করে স্বাধীনভাবে জীবিকানির্বাহ করত। কিন্তু ঔপনিবেশিক শাসনে নতুন আইন ও বিচারব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে তাদের অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।

ব্রিটিশ করব্যবস্থা

ব্রিটিশ সরকার আদিবাসীদের অঞ্চলগুলিতে বিভিন্ন ভূমিবন্দোবস্ত প্রবর্তন করায় যে সব নতুন কর আরোপিত হয় তা দিতে মধ্যস্বত্বভোগীরা তাদের উপর চাপ দিতে থাকে।

দিকুদের শোষণ

বহিরাগত দিকু (মহাজন, জোতদার প্রভৃতি)-রা সরকার নির্দেশিত রাজস্বের থেকেও বেশি অর্থ আদায়ের জন্য অকথ্য অত্যাচার চালাত।

ঝুমচাষ নিষিদ্ধকরণ

১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় অরণ্য আইন পাস করে ব্রিটিশ সরকার অরণ্যকে সংরক্ষিত অঞ্চল-এ পরিণত করে এবং ঝুমচাষ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি অরণ্যের উপর একচেটিয়া অধিকার স্থাপন করে। ফলে আদিবাসীদের পশুশিকার, গোচারণ, কাঠ সংগ্রহের মতো স্বাভাবিক জীবিকাগুলির উপরও নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হয়।

সংস্কৃতিতে আঘাত

আদিবাসী অঞ্চলে মিশনারিদের খ্রিস্টধর্মের প্রচার ও নানা বিধিনিষেধ আরোপিত হওয়ার ফলে আদিবাসীদের চিরাচরিত সংস্কৃতিতে আঘাত লাগে।

অর্থনৈতিক বঞ্চনার শিকার

ব্রিটিশদের হস্তক্ষেপে আদিবাসীরা জমির উপর যৌথ অধিকার থেকে বিচ্যুত হয় এবং চা-কফির চাষ, রেলপথ নির্মাণ ইত্যাদি কাজে যুক্ত হয়ে বনভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

এই আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বঞ্চনা ও শোষণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে আদিবাসীরা দিকু-দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল।

দলিত সম্প্রদায়ের বিবরণ

ভারতে অস্পৃশ্য নামে পরিচিত নিম্নবর্ণের মানুষরাই ১৯৩০-এর দশক থেকে নিজেদের দলিত বলে পরিচয় দেয়। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ব্রিটিশ সরকার এদের তপশিলি জাতি আখ্যা দেয় এবং গান্ধিজি এদের হরিজন নামে সম্বোধন করেন। মাহার, কুনবি, মাল, নমঃশূদ্র প্রভৃতি এই দলিত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল।

‘অস্পৃশ্য’ রূপে পরিচিত

সমাজে ‘অস্পৃশ্য’ রূপে পরিচিত এই। শ্রেণি সর্বসাধারণের ব্যবহার্য পুকুর, নদীর ঘাট, কুয়ো ব্যবহার থেকে বঞ্চিত ছিল। মন্দির বা উচ্চবর্ণের ব্যক্তিদের কোনো সভা, সমিতি এবং পুজোপার্বণেও তারা প্রবেশ করতে পারত না।

শিক্ষার অভাব

সমাজে দলিতদের শিক্ষার কোনো অধিকার ছিল না। পাশ্চাত্য শিক্ষালাভ বা সরকারি কোনো কর্মস্থলে চাকুরি লাভের অধিকার থেকেও তারা ছিল বঞ্চিত।

দরিদ্রতা

দলিত শ্রেণির লোকেরা মাছ ধরা, মাদক দ্রব্য তৈরি, দড়ি তৈরি, পথঘাট সংস্কার, জঞ্জাল সাফাই প্রভৃতি কাজ করে জীবিকানির্বাহ করত। ফলে অভাব ছিল এদের নিত্যসঙ্গী।

রাজনীতিতে উপেক্ষিত

রাজনীতিতেও এরা অংশগ্রহণ করতে পারত। না। তবে গান্ধিজির কংগ্রেসে যোগদানের পর এই ভেদাভেদ অনেকাংশে দূরীভূত হয়েছিল।

অবশেষে এই সামাজিক বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে দলিত শ্রেণি আন্দোলন চালাতে থাকে। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ড. বি আর আম্বেদকরের নেতৃত্বে সর্বভারতীয় নিপীড়িত শ্রেণির কংগ্রেস গঠিত হলে দলিত আন্দোলন আরও জোরদার হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন – স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান ও শেখ মুজিবর রহমানের ভূমিকা আলোচনা করো

Leave a Comment