ব্রিটিশ ভারতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভবের কারণ ও বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো
ব্রিটিশ ভারতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভবের কারণ ও বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো। |
ব্রিটিশ ভারতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভবের কারণ ও বৈশিষ্ট্য
ব্রিটিশ ভারতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভবের কারণ
(ক) ব্রিটিশ বাণিজ্য, আছিল বিভাগ এবং সামরিক বিভাগে নিযুক্ত কর্মী
ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের একচেটিয়া বাণিজ্য পরিচালনা, সাম্রাজ্যবিস্তার ও অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং আইন ও বিচারব্যবস্থা চালনা করার জন্য শিক্ষিত ভারতীয়দের নিয়োগ করে। বাণিজ্যের কাজে নিযুক্ত মুহুরি, বেনিয়ান, সরকার, সামরিক বাহিনীর নিম্নপদে নিযুক্ত সেনা ও কর্মী; আইন ও বিচারব্যবস্থার নানা ক্ষেত্রে নিয়োজিত উকিল, মোক্তার, আমলা, মুহুরি – এরা সকলেই ভারতীয় মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়রূপে পরিচিত হন।
(খ) সরকারি চাকুরিজীবী
ইংরেজরা প্রশাসনিক নিম্নপদগুলিতে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ভারতীয়দের নিয়োগ করে। এই সকল শিক্ষিত ভারতীয় চাকুরিজীবী মধ্যবিত্ত শ্রেণিরূপে আত্মপ্রকাশ করে।
(গ) শিল্প ও কলকারখানায় নিযুক্ত ভারতীয়গণ
পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ভারতীয়রা শিল্প ও কলকারখানায় কর্মচারীরূপে নিযুক্ত হয় এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
(ঘ) জমিদার, ভূস্বামী ও মহাজন সম্প্রদায়
ব্রিটিশ শাসনকালে বিপুল অর্থের অধিকারী হয়ে ওঠা করভোগী জমিদার ও ভূস্বামীরাও পাশ্চাত্য শিক্ষাগ্রহণ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ভূমি বন্দোবস্তের ফলে কৃষকদের ঋণদাতা হিসেবে আবির্ভূত হওয়া মহাজন সম্প্রদায়ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
উপরোক্ত শ্রেণিগুলি ছাড়াও সংবাদপত্রের কর্মচারী, স্কুল-কলেজ- হাসপাতালে নিযুক্ত শিক্ষিত ভারতীয় কর্মচারী প্রমুখ মধ্যবিত্ত শ্রেণিরূপে পরিচিত হয়েছিল।
মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাধারণ বৈশিষ্ট্য
(ক) শহরকেন্দ্রিকতা
ভারতে উদীয়মান মধ্যবিত্ত শ্রেণির সকলেই কাজের সুবিধার্থে এবং নিশ্চিন্ত জীবনযাপনের জন্য শহরবাসী হয়ে পড়ে।
(খ) পাশ্চাত্য শিক্ষাগ্রহণ
ব্রিটিশ শাসনকালে আর্থিক ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা ও নতুন নতুন পেশায় প্রবেশের চাবিকাঠি ছিল ইংরেজি শিক্ষা। এই শিক্ষা লাভ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। তাই তারা ইংরেজ শাসনকে ভারতের উন্নতির পক্ষে মঙ্গলজনক বলে মনে
(গ) হিন্দু উচ্চবর্ণের প্রাধান্য
ঔপনিবেশিক ভারতে সরকারি চাকুরিতে করত। পরে অবশ্য তাদের এই ভুল ভেঙে যায়। হিন্দু উচ্চবর্ণের মানুষদের (ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈদ্য ও ক্ষত্রিয়) প্রাধান্য ছিল। নিম্নবর্ণের হিন্দু ও মুসলিমদের সংখ্যা ছিল কম।