বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে নন্দলাল বসুর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো

বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে নন্দলাল বসুর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো
বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে নন্দলাল বসুর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো।
নন্দলাল বসু অঙ্কন শিক্ষক রূপে শান্তিনিকেতনের কলাভবনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং সেখানকার অপরূপ প্রকৃতির কোলে ছাত্রছাত্রীদের আঁকা শেখানোর কাজে ব্রতী হন। তাঁর সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের স্বীকারোক্তিটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ-

“তোমার তুলিকা রঞ্জিত করে ভারত-ভারতী চিত্ত। 
বঙ্গলক্ষ্মী ভাণ্ডারে সে যে যোগায় নূতন বিত্ত।”

রবীন্দ্র কবিতার মধ্য দিয়েই নন্দলাল বসুর শিল্প সচেতনতার গভীরতাটি প্রকাশিত হয়েছে। নন্দলাল বসু কলকাতা আর্ট স্কুলে ভরতি হন তাঁর আঁকা গণেশের শীর্ষক একটি চিত্রের মাধ্যমে। তিনি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িতেও দীর্ঘ তিন বছর শিল্পচর্চায় নিয়োজিত ছিলেন। নন্দলাল বসুর ছাত্রাবস্থায় অঙ্কিত চিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম হল কর্ণের সূর্যস্তব, শ্রীচৈতন্য, কৈকেয়ী, নৌবিহার প্রভৃতি। এই সমস্ত চিত্র তাঁকে ছাত্রাবস্থাতেই খ্যাতির শীর্ষে উন্নীত করতে সহায়তা করে।

ভারতীয় শিল্পচর্চায় নন্দলালই প্রথম আউটডোর স্টাডি বা নেচার স্টাডির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। জলরঙের ওয়াশ পদ্ধতি এবং ঘন জলরঙের টেম্পোরাল পদ্ধতি দুই-ই তিনি অনুসরণ করতেন। মহাকাব্য ও ইতিহাস নির্ভর উমার ব্যথা, উমার তপস্যা, পঞ্চপাণ্ডবের মহাপ্রস্থান প্রভৃতি বিখ্যাত ছবি তিনি এঁকেছেন। যদিও তাঁর হাতে প্রাধান্য পেত প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ মূলক ছবি। শিশুপাঠ্য ‘সহজপাঠ’ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) -এর অলংকরণ বাঙালির হৃদয়ে তাঁকে স্থায়ী আসন দিয়েছে। হরিপুরা কংগ্রেসের পোস্টার, বরোদার মহারাজের কীর্তি মন্দির, শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতনের দেয়াল চিত্র তাঁর প্রতিভার যথার্থ পরিচয় বহন করে।

Leave a Comment