বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান সম্পর্কে যা জানো লেখো

বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান সম্পর্কে যা জানো লেখো
বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান সম্পর্কে যা জানো লেখো।
শিল্পী যামিনী রায় (১৮৮৭-১৯৭২) তাঁর অসামান্য দক্ষতায় ভারতীয় ঐতিহ্যে পূর্ণ বিপুল সৃষ্টির সম্ভারকে বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই প্রখ্যাত শিল্পীর আবির্ভাব ঘটে সুদূর বাঁকুড়ায়। কলকাতার শিল্পবিদ্যালয়ে পাঠ নিয়ে শিল্প জীবনের পথচলা শুরু করে পরবর্তী জীবনে আধুনিক শিল্পী রূপে ভূষিত হন। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা আর্ট কলেজে ভরতি হয়ে চিত্রশিল্পের প্রতি তাঁর আগ্রহের পরিধি বৃদ্ধি পায়। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ছবি সর্বভারতীয় প্রদর্শনীতে প্রকাশিত হয় এবং ভাইসরয় দ্বারা স্বর্ণপদকের মাধ্যমে সম্মানিত হয়। এ ছাড়া তিনি ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতেও ভূষিত হন।

তাঁর অঙ্কিত চিত্রাবলিতে ভারতীয় সৃজনকলার বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি নিজস্ব স্বকীয়তার প্রভাবও ছিল। বাংলা পটুয়া শিল্পের প্রতি তাঁর প্রবল অনুরাগ ও শ্রদ্ধা ছিল।

যামিনী রায় যেমন একদিকে পটুয়াদের অঙ্কনশৈলীর দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হন তেমনি অন্যদিকে ফরাসি চিত্রধারার বিশেষ গোষ্ঠীর সরলরেখা শৈলীর প্রতিও আকৃষ্ট হন। যদিও শেষের দিকে পাশ্চাত্য রীতিকে তিনি বর্জন করেন ও ভারতীয় চিত্রশিল্পের ধারাকেই গুরুত্ব দেন। তিনি সমতল কাগজের পরিবর্তে অসমতল বুনটের প্যাটার্ন সংবলিত ক্যানভাসের ব্যবহার করেন। তাঁর অঙ্কিত চিত্রের মধ্যে রাধাকৃষ্ণ, জিশুখ্রিস্ট থেকে শুরু করে গ্রাম্য চাষি, কামার, কুমোর, সাঁওতাল, ফকির, বাউরি, সাধারণ নরনারী সকলেই ধরা দিয়েছে। বাঙালির চেনা মানুষগুলি তাঁর তুলির টানে ভিন্নমাত্রা লাভ করেছে। তারা কখনও নির্বিশেষ, কখনও বিশেষ আবার কখনও সাধারণ। প্রত্যেকের রূপবৈচিত্র্য ভিন্ন ভিন্ন, যেন এক-একটি জীবন্ত টাইপ চরিত্র। যামিনী রায়ের তুলির টানে, রেখার জালে, রঙের বৈচিত্র্যে সমস্ত চরিত্রগুলি প্রাণময় হয়ে ওঠে।

Leave a Comment