বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো। রবীন্দ্র সমসাময়িক দুজন বিশিষ্ট গীতিকারের নাম লেখো |
বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো। রবীন্দ্র সমসাময়িক দুজন বিশিষ্ট গীতিকারের নাম লেখো। |
সমগ্র বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতিটি শাখায় রবীন্দ্রনাথের অবাধ বিচরণ। তাই এককথায় এও বলা যেতে পারে—বাংলায় ‘কানু বিনা গীত নাই’। সংগীত জগতে রবীন্দ্রনাথ রাজাধিরাজ। বহুমুখী ও বিচিত্র অভিজ্ঞতার অধিকারী রবীন্দ্র প্রতিভার প্রভা বিচ্ছুরিত হয়েছে তাঁর গানের আঙিনায়। রবীন্দ্রনাথ পারিবারিক সূত্রে সাংগীতিক পরিবেশের সংস্পর্শ লাভ করেন। ফলে প্রথম থেকেই সংগীত রচনায় তাঁর আগ্রহ লক্ষ করা যায়। দ্বারকানাথ ঠাকুরের সংগীত জগতের পথকে অনুসরণ করেই রবীন্দ্রনাথের মহান সংগীতসাধনার সূত্রপাত। তিনি বিষ্ণু চক্রবর্তী, শ্রীকণ্ঠ সিংহ, যদুভট্ট, রাধিকা গোস্বামী প্রমুখ সংগীত বিশারদ এবং পিতা ও অগ্রজদের কাছ থেকে ব্রহ্মসংগীতসহ উচ্চাঙ্গ সংগীতের প্রশিক্ষণ লাভ করেন। তাঁর গানে বৈম্নব পদাবলি ও পাশ্চাত্য সংগীতের বিশেষ প্রভাব লক্ষ করা যায়।
রবীন্দ্রনাথ প্রায় ২০৭৫টি বিচিত্র ভাবের ও বহু বর্ণের সংগীত রচনা করেন। ঈশ্বরপ্রেম, মানবপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম ও বিচিত্র বিষয়ে তাঁর অসংখ্য গানের বহুবিধ সুরের ঝংকার এক অসামান্য প্রতিভার দৃষ্টান্ত। বিশ্বস্রষ্টা ঈশ্বর কবির কাছে ধরা পড়েছে একজন কবি, গীত রচয়িতা, সুরকার ও গায়ক রূপে
আসলে কবির ভাষায় সংগীত, ভাবকে অনির্বচনীয়তা দান করে। অরূপ অসীমের বাণীর স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ ঘটে। এই বিশ্বের রূপ, রস, গন্ধের সংগীতের সুর মূর্ছনায়। রবীন্দ্রসংগীতে সীমা ও অসীমের ভাবনা তথা মানবজীবনের বহু বিচিত্র ভাবের সহজ, সুন্দর, প্রাঞ্জল ও স্বচ্ছ প্রভাব প্রস্ফুটিত হয়েছে। যার প্রকাশ লক্ষ করা যায় তাঁর ‘গীতবিতান’-এ। ‘গীতবিতান’-এর প্রথম খণ্ডে পূজা ও স্বদেশ; দ্বিতীয় খণ্ডে প্রেম, প্রকৃতি, বিচিত্র ও আনুষ্ঠানিক এবং তৃতীয় খণ্ডে জাতীয় সংগীত, পূজা, প্রার্থনা ও আনুষ্ঠানিক এরূপ ত্রিধারার গানের রূপরেখা প্রকাশিত হয়েছে।
গানের ব্যবহারে রবীন্দ্রনাথের তত্ত্বমূলক নাটকগুলি দ্বন্দ্বমুখরতায় ফুটে উঠেছে। রবীন্দ্রসংগীতের অঙ্গনে ধ্রুপদি, ঐতিহ্যবাহী গান ও লোকসংগীতের সুরের সমাগম ঘটেছে। বিশেষত, বাউলগানের উদাত্ত সুর তাঁর গানের পরতে পরতে মিশে রয়েছে। তাঁর গানের আদি পর্বে ব্রহ্মসংগীতে রাগসংগীত সুলভ আমেজ বা সুরের গাম্ভীর্য বিদ্যমান। আর তাঁর মধ্য ও অন্তপর্বের গানে রয়েছে বাউল সুরের বিশেষ প্রভাব। প্রেম, প্রকৃতি, স্বদেশ ভাবনা বা পূজা পর্যায়ের এক-একটি গান হয়ে উঠেছে ভাবের বাহন। রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গানের দৃষ্টান্ত হল-
পূজা পর্যায় : “আমায় তুমি অশেষ করেছ, এমনি লীলা তব”
স্বদেশ পর্যায় : “ও আমার দেশের মাটি, তোমার ‘পরে ঠেকাই মাথা।”
প্রকৃতি পর্যায় : “আকাশ ভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ”
বিচিত্র পর্যায় : “গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ আমার মন ভুলায় রে।”
আনুষ্ঠানিক পর্যায় : “সবারে করি আহ্বান”
প্রেম পর্যায় : “শুন নলিনী, খোলো গো আঁখি”
রবীন্দ্র সমসাময়িক দুজন বিশিষ্ট গীতিকারের নাম হল- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও রজনীকান্ত সেন।
আরও পড়ুন – কে বাঁচায়, কে বাঁচে গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো