বাংলা ক্রিকেটের ধারায় সারদারঞ্জন রায়চৌধুরীর অবদান আলোচনা করো
বাংলা ক্রিকেটের ধারায় সারদারঞ্জন রায়চৌধুরীর অবদান আলোচনা করো। |
বাংলায় ক্রিকেটের জনক
বাংলার ক্রিকেটের জনকরূপে পরিচিত হলেন সারদারঞ্জন রায়চৌধুরী। সত্যজিৎ রায় ‘যখন ছোটো ছিলাম’ বইয়ে লিখেছিলেন, ‘ক্রিকেট শুরু করেন সারদা, তারপর সেটা রায় পরিবারে হিন্দু-ব্রাহ্ম সব দিক ছড়িয়ে পড়ে।’ -নিজের পিতামহ সম্পর্কে লেখা সত্যজিৎ রায়ের এ কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। সাহেবদের হাত থেকে ক্রিকেটকে তুলে নিয়ে গণিতের অধ্যাপক সারদারঞ্জন গোটা বাংলায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর ব্যাটিং তান্ডবে ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে যে ক্রিকেটযাত্রার আরম্ভ হয়েছিল, আজ তা বাঙালির অন্যতম প্রিয় খেলায় পরিণত হয়েছে-এ বিষয়ে কোনো সংশয় নেই।
বাঙালি ডব্লিউ জি গ্রেস
১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে অবিভক্ত বাংলার কিশোরগঞ্জের মশুয়ায় বিখ্যাত রায়চৌধুরী পরিবারে সারদারঞ্জনের জন্ম। ঢাকায় কলেজে পড়ার সময় পাঁচ ভাই মিলে ঢাকা কলেজ ক্রিকেট ক্লাব গড়ে তোলেন। এই ক্লাবে শিক্ষকেরাও ছিলেন। আনুমানিক ১৮৮০-র দশকে এই ক্লাবটি গড়ে ওঠে। সেসময় এটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং এ কারণেই ঢাকায় ক্রিকেটের জোরদার চর্চা শুরু হয়।
পরে ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে সারদারঞ্জন কলকাতাতেও টাউন ক্লাব ৪ গড়ে তোলেন। এই দুটি দলেরই ক্যাপটেন ছিলেন তিনি। ক্রিকেটে যে শুধু ইংরেজরাই পারদর্শী নয় এটা তিনি প্রমাণ করে দিয়েছিলেন। ঝোড়ো ব্যাটিং-এর কারণে তাঁকে কিংবদন্তি ইংরেজ ক্রিকেটারের সঙ্গে তুলনা করে বাঙালি ডব্লিউ জি গ্রেস বলা হত। তাই সারদারঞ্জনের নেতৃত্বে ইডেন গার্ডেনে ক্যালকাটা প্রেসিডেন্সি ক্লাবের সঙ্গে এক খেলায় ঢাকা কলেজ জয়লাভ করে।
ক্রিকেটের প্রসারে পথিকৃৎ
সারদারঞ্জনের হাতে তৈরি টাউন ক্লাব এবং ঢাকা কলেজ ক্লাব সেসময় নিয়মিত ইংরেজদের বিভিন্ন দলের বিরুদ্ধে খেলত। তাঁরই উদ্যোগে বাংলায় জেলাভিত্তিক বিভিন্ন ক্রিকেট দল গড়ে ওঠে। এমনকি তাঁরা আন্তঃজেলা টুর্নামেন্টেরও আয়োজন করতে শুরু করেন। তিনিই প্রথম ক্রিকেটের যাবতীয় নিয়মকানুন সম্পর্কে সকলকে অবহিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে ‘ক্রিকেট খেলা’ নামক প্রথম বাংলা বইটি লেখেন।
আরও পড়ুন – বাংলা চলচ্চিত্রে তপন সিংহের অবদান আলোচনা করো