বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কী ছিল

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কী ছিল

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কী ছিল
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কী ছিল?

বাংলাদেশের স্বাধীনতালাভের পটভূমি

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাজনের সূত্র ধরে বাংলা প্রদেশও বিভাজিত হয়ে যায়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববঙ্গ পূর্ব পাকিস্তানে পরিণত হয়। কিন্তু স্বাধীনতালাভের মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। শুরু হয় পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রাম।

(ক) পূর্ব পাকিস্তানিদের প্রতি ঔদাসীন্য

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ৩-৪ বছর পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের প্রভুত্ব ও প্রাধান্য বিস্তারের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ফলে পূর্ব পাকিস্তানিদের মনে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে।

(খ) অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অসাম্য

জন্মলগ্ন থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক শোষণ, বঞ্চনার শিকারে পরিণত হয়। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও পশ্চিম পাকিস্তান হয়ে উঠেছিল যাবতীয় রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু।

(গ) ভিন্ন জাতিসত্তা

বাংলাভাষী পূর্ব পাকিস্তান ও উর্দুভাষী পশ্চিম পাকিস্তান জাতিসত্তার দিক থেকেও পৃথক ছিল।

(ঘ) ভাষা আন্দোলন

মহম্মদ আলি জিন্নাহর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে এবং উর্দুর প্রসারে অধিক সক্রিয় হয়ে উঠলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বাংলা ভাষাকে তাদের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদানের জন্য আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। 5

(ঙ) ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে সাধারণ নির্বাচন

১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের তদানীন্তন সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচনের ডাক দিলে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬১ টি আসনের মধ্যে শেখ মুজিবরের নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ ১৬০ টি আসনে বিপুল জনসমর্থন পেয়ে জয় লাভ করে এবং পূর্ব পাকিস্তানের সরকার গঠনের বৈধ অধিকার লাভ করে।

৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ

আওয়ামি লিগ-এর নেতা শেখ মুজিবর রহমান ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনের আহ্বান জানালে হাজার হাজার পূর্ববঙ্গীয় মুক্তিযোদ্ধা নির্দ্বিধায় আন্দোলনে শামিল হয়। বেতারের মাধ্যমে এই খবর পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের মনেও অভূতপূর্ব উন্মাদনার সৃষ্টি করে। ফলস্বরূপ, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও পূর্ববঙ্গের মৌলবাদী রাজাকার বাহিনীর সাহায্যে পূর্ববঙ্গে পৈশাচিক হত্যালীলা চালায়।

ভারতের ভূমিকা

পূর্ববঙ্গের প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করলে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধি নির্দ্বিধায় পূর্ববঙ্গকে সবরকম সাহায্য করেছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতার মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে পাকবাহিনীকে কোনঠাসা করে ফেলে।

পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ ও স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম

এমতাবস্থায় পাকবাহিনীর সেনাপ্রধান জেনারেল এ এ কে নিয়াজি কর্তৃক ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরা-র কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর প্রদানের মধ্য দিয়ে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের অবসান ঘটে এবং স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্ম (১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ) হয়। এই দিনটি বাংলাদেশে বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়।

FAQs on – বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কী ছিল

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত কি ভূমিকা পালন করেছিল?

‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের অবদান চিরস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষকে ভারত যেমন আশ্রয়-খাদ্য-রসদসহ সবরকম সহায়তা দিয়েছে, তেমনি হাজার হাজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সর্বাধিক সহায়তা করেন ভারতের কে?
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা প্রদান করেন।
কত তারিখে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়?
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম শহীদ কে?
১৯৭১ সালের ৩ মার্চ, সারাদেশের মতো উত্তাল ছিল রংপুর। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে ডাকা হরতালের পক্ষে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়েছিল। সেই মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন কিশোর শংকু সমাজদার।

Leave a Comment