বর্তমান সহস্রাব্দে কৃষিকাজে জীববিদ্যার গুরুত্ব (প্রয়োগ) আলোচনা করো। |
কৃষিকাজে জীববিদ্যার গুরুত্ব (প্রয়োগ)
(1) খাদ্য উৎপাদন: জীববিদ্যার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে খাদ্য উৎপাদনে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত জীববিদ্যা পদ্ধতিগুলি হল-
(i) অধিক ফলনশীল বীজ সৃষ্টি: বংশগতিবিদ্যা প্রয়োগের মাধ্যমে সংকরায়ণ পদ্ধতিতে উচ্চফলনশীল ধান (যেমন- IR-8, IR-28, IR-36, জয়া, রত্না প্রভৃতি), গম (যেমন- সোনেরা-64, সোনালিকা, কল্যাণসোনা প্রভৃতি), ভুট্টা (যেমন- গঙ্গা-5, জহর, বিক্রম প্রভৃতি) প্রভৃতি শস্য উৎপাদন অনেক কম সময়ে ঘটে এবং নানা প্রতিকূল পরিবেশ সহ্য করতে পারে।
(ii) পলিপ্লয়েড প্রজনন : হেক্সাপ্লয়েড (6n) গম, অ্যালোটেট্রাপ্লয়েড (4n) সরষে গাছ, মুলো ও বাঁধাকপির মধ্যে সংকরায়ণ (Hybridization) ঘটিয়ে মুলোবাঁধা (Raphano brassica) গাছ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
(iii) কলা অনুশীলন বা কলাপালন : মাইক্রোপ্রোপাগেশন বা অণুবিস্তারের সাহায্যে বর্তমানে অনেক কম সময়ে অনেক বেশি সংখ্যায় আলু, কলা, আখ প্রভৃতি গাছ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে।
(iv) প্রোটোপ্লাজমীয় মিশ্রণ : গম, রাই, আলু, টম্যাটো, বাঁধাকপি প্রভৃতি উদ্ভিদের কোশ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রোটোপ্লাজমীয় মিশ্রণ ঘটিয়ে নতুন ধরনের সংকর উদ্ভিদ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে।
(v) বীজহীন ও বৃহৎ আকারের ফল উৎপাদন: কৃত্রিম হরমোন (যেমন- IBA, NAA প্রভৃতি) প্রয়োগ করে বর্তমানে বীজহীন ও বৃহৎ আকারের ফল (যেমন- কলা, পেঁপে, আঙুর, পেয়ারা, কমলালেবু প্রভৃতি) উৎপাদন করা হচ্ছে।
(vi) কম্পোস্ট সার, জৈবসার ও জীবাণু সার প্রয়োগ: কৃষিজমির উর্বরতা বজায় রাখার জন্য বর্তমানে কম্পোস্ট সার, জৈবসার ও জীবাণুসার (যেমন- অ্যাজোটোব্যাকটর) প্রয়োগ করা হয়।
(vii) মৎস্যচাষ: সংকরায়ণ ও জীববিদ্যার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে (প্রণোদিত প্রজনন) বর্তমানে মাছ চাষে প্রভূত উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।
(2) পরিধেয় বস্তু উৎপাদন: অধিক ফলনশীল পাট (যেমন- সোনালি (JRO-212), বৈশাখী (JRO-632] প্রভৃতি) ও টেট্রাপ্লয়ডি (4n) তুলোগাছ চাষের মাধ্যমে বর্তমানে পাটতত্ত্ব ও সুতোর উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া সংকর রেশমমথ পালনের মাধ্যমে রেশমতত্ত্ব ও ভেড়া পালনের মাধ্যমে পশম উৎপাদনও অনেকাংশে বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।