“ফুটন্ত ভাতের গন্ধ তাকে বড়ো উতলা করে”-শেষ পর্যন্ত উচ্ছব কীভাবে তার ভাতের চাহিদা নিবৃত্ত করেছিল? |
অনেকদিন পর যেদিন সন্ধ্যায় উচ্ছব হিঞ্চে সেদ্ধ, গুগলি সেদ্ধ, নুন আর লংকাপোড়া দিয়ে পেট ভরে খেয়েছিল, সেদিন রাত্রে ঝড়-জল শুরু হয়। ঝড়ে উচ্ছবের কাঁচাবাড়ি ভেঙে যায় আর মাতলা নদীর জল ফুলে ফেঁপে উঠে ভাসিয়ে নিয়ে যায় তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে। যদিও ত্রাণে খিচুড়ি দেওয়া হয়েছিল কিছুদিন কিন্তু উচ্ছব খায়নি, সে পাগলের মতো স্ত্রী-পুত্র কন্যাকে খুঁজে বেরিয়েছিল কয়েকদিন ধরে। ক্ষুধার যন্ত্রণা তার মালুম হয়নি। গ্রামের লোকেরা যখন তাকে বোঝাল তখন উচ্ছবের সংবিৎ ফিরল কিন্তু ত্রাণে তখন রান্না খাবারের পরিবর্তে ‘ড্রাইডোল’ অর্থাৎ শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছিল। তাই ক্ষুধার্ত উচ্ছব চাল চিবিয়ে জল খেয়েছিল কদিন।
তারপর উচ্ছবের হঠাৎ খেয়াল হল কলকাতায় গিয়ে খেয়েদেয়ে আসবে। গ্রাম সম্পর্কের বোন বাসিনীর মনিব বাড়ির কথা সে আগেই জানতো, সেখানেই উচ্ছব ফাইফরমাশ খাটার কাজে লেগে গেল-দুটো রান্না ভাতের আশায়।
বাসিনীর মনিবের বাড়ির লোকেরা উচ্ছবের কাজের প্রতি যতটা নজর রাখে তার খাবারের প্রতি ততটাই উদাসীনতা দেখায়। উচ্ছব বারেবারে খাবার চাইলেও তান্ত্রিকের বিধানের ছুতো দেওয়া হয়। বাসিনী লুকিয়ে উচ্ছবকে খানিকটা ছাতু দিয়ে যায়, কিন্তু বেশ কয়েকদিনের না খাওয়া উচ্ছবের কাছে তা সাগরে শিশিরবিন্দু পড়ার মতো মনে হয়।
যজ্ঞ শেষ হলে খাবার পাওয়া যাবে-এই আশায় উচ্ছব অপেক্ষা করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। শেষে যখন ঘুম ভাঙে তখন বাড়ির বড়োকর্তার শ্মশানযাত্রার আয়োজন চলছে। উচ্ছব হতাশ হয়ে পাঁচিলের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। শেষে যখন বাসিনী বাড়ির সব রান্না করা খাবার রাস্তায় ফেলে দিতে যায় তখন উচ্ছবের মাথায় বুদ্ধি খেলে। মোটা ভাতের বড়ো ডেকচি বাসিনীর কাছ থেকে চেয়ে নেয় দূরে ফেলে আসবে বলে কিন্তু তা না ফেলে সে ডেকচি নিয়ে সোজা দৌড় লাগায় রেলস্টেশনে। সেখানে ‘বসে ও খাবল খাবল ভাত খায়’ উচ্ছব। এভাবে উচ্ছব শেষ পর্যন্ত ভাতের স্বাদ নিয়েছিল।