পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতীকরণের উদ্দেশ্য কী ছিল? বিভিন্ন দেশে সোভিয়েতীকরণের কী প্রভাব পড়েছিল – পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রাধান্য স্থাপনের ক্ষেত্রে রুশ নেতা স্ট্যালিনের মূল উদ্দেশ্য ছিল তিনটি; যথা- সামরিক, অর্থনৈতিক ও আদর্শগত উদ্দেশ্য।
তো চলুন আজকের মূল বিষয় পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতীকরণের উদ্দেশ্য কী ছিল? বিভিন্ন দেশে সোভিয়েতীকরণের কী প্রভাব পড়েছিল পড়ে নেওয়া যাক।
পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতীকরণের উদ্দেশ্য কী ছিল? বিভিন্ন দেশে সোভিয়েতীকরণের কী প্রভাব পড়েছিল |
পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতীকরণের উদ্দেশ্য কী ছিল? বিভিন্ন দেশে সোভিয়েতীকরণের কী প্রভাব পড়েছিল? |
পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতীকরণের উদ্দেশ্যসমূহ
সামরিক উদ্দেশ্য: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পূর্ব ইউরোপের যেসকল দেশকে হাতিয়ার করে জার্মানির হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করেছিলেন, সেই দেশগুলির উপর আধিপত্য কায়েম করে যুদ্ধের পর স্ট্যালিন একটি রুশ নিরাপত্তা বলয় গঠন করতে প্রয়াসী হন; যাতে পশ্চিম ইউরোপের কোনো রাষ্ট্র পুনরায় রুশ শান্তি বিঘ্নিত করতে না পারে।
অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে যে অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল, তা মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে স্ট্যালিন পূর্ব ইউরোপের রাষ্ট্রগুলির সম্পদকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।
আদর্শগত উদ্দেশ্য: সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান স্ট্যালিন চেয়েছিলেন, বিশ্বে পুঁজিবাদের অবসান হোক এবং সাম্যবাদের প্রসার ঘটুক; যার ফলস্বরূপ তিনি পুঁজিবাদী পশ্চিম ইউরোপের বিরুদ্ধে পূর্ব ইউরোপে সাম্যবাদের প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
সোভিয়েতীকরণের প্রভাব
নির্বাসিত সরকারগুলির উচ্ছেদ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেসব সরকারের অস্তিত্ব ছিল তাদের অনেকেই যুদ্ধকালে জার্মানির আক্রমণের ফলে বিদেশে নির্বাসিত হয়ে সরকার চালাতে থাকে। যুদ্ধের পর রুশ লালফৌজ সেইসব নির্বাসিত সরকারকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিয়ে তাদের শাসন ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করে।
সাম্যবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা: রুশ লালফৌজ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে পপুলার ফ্রন্ট নামে এক ধরনের সরকার চাপিয়ে দেয়। কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে একনায়কতান্ত্রিক সাম্যবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
রুশ মডেলের সংবিধান: পূর্ব ইউরোপের এসব দেশের তাঁবেদার কমিউনিস্ট সরকারগুলি রাশিয়ার নির্দেশে নিজ নিজ দেশে আইন বা সংস্কার চালু করত। সেসব দেশে রুশ সংবিধানের অনুকরণে নতুন সংবিধান চালু হয়।
প্রচার: জনমতকে নিজেদের অনুকূলে আনতে ক্লাব, লজ, ক্রীড়াসংগঠন প্রভৃতিকে কমিউনিস্ট প্রচারের আওতায় আনা হয়। কমিউনিস্টপন্থী সংবাদপ্রচারে অনাগ্রহী সাংবাদিক ও বেতার ঘোষকদের পদচ্যুত করা হয়।
কমিউনিস্টকরণ: স্বাধীনতাকামী ও নিরপেক্ষ বিচারকদের পদচ্যুত করে বিচারব্যবস্থার কমিউনিস্টকরণ করা হয়। আদালত থেকে অ-কমিউনিস্ট আইনজীবী এবং বিদ্যালয় থেকে অ-কমিউনিস্ট শিক্ষকদের বিতাড়িত করা হয়। পশ্চিমি লেখক আর্নেস্ট হেনরি পূর্ব ইউরোপে স্ট্যালিন প্রবর্তিত ব্যবস্থাকে সমাজতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র বলেছেন।
এইভাবে স্ট্যালিন তাঁর রুশিকরণ নীতির প্রয়োগের মাধ্যমে কমিউনিজমকে পূর্ব ইউরোপের রাষ্ট্রগুলিতে বিস্তৃত করেন।