পাত সংস্থান তত্ত্বের আলোকে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করো

পাত সংস্থান তত্ত্বের আলোকে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করো
পাত সংস্থান তত্ত্বের আলোকে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করো

পাতসংস্থান তত্ত্বের আলোকে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি

পাতসংস্থান (Plate tectonics) তত্ত্বের জনক হলেন ফরাসি বিজ্ঞানী পিঁচো (X Le Pichon, 1968)। এই তত্ত্বের মূলকথা হল, ভূত্বক কতকগুলি বৃহদাকার পাতের সমন্বয়ে গঠিত। মহাদেশ গঠনকারী পাতকে মহাদেশীয় পাত এবং মহাসাগর গঠনকারী পাতকে মহাসাগরীয় পাত বলা হয়ে থাকে। এইসব পাতগুলির গাড়ীরতা গড়ে 100 কিমি এবং বিদার কয়েক লক্ষ বর্গকিমি হয়। এই পাতগুলি বান্দ্র এ্যাসথেনোজিয়ারে (গুরুমণ্ডলের উপরিভাগ) ভাসমান অবস্থায় আছে। পুরুমণ্ডলে দ্যাগমার পরিলেন স্রোত, ভূ-আন্দোলন প্রভৃতি কারণে পাতগুলি গতিশাঁস হয় এবং এই গতিশীলতার কারণে, পাতসীমান্ত (দৃষ্টি পাতের মধ্যবর্তী এলাকা) বরাবর বালা ডুবিরূপ সৃষ্টি হয়। পাতসীমান্ত তিনপ্রকার যথা- অভিসারী পাতসীমান্ত-পরস্পরের অভিমুখে গতিশীল পাতসীমান্ত, ② প্রতিসারী পাসেীমান্ত-পরস্পরের বিপরীত দিকে গতিশীল পাতসীমান্ত, ② নিরপেক্ষ পাতসীমান্ত-পাশাপাশি বিপরীত দিকে সঞ্চরণশীল পাতসীমান্ত।

অভিসারী পাতসীমান্তে ভঙ্গিল পর্বতের উত্থান

উল্লিখিত তিন ধরনের সীমান্তের মধ্যে কেবলমাত্র অভিসারী পাত সীমান্তে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি হয়।

অভিসারী পাতসীমান্ত প্রধানত তিন প্রকার হয়
-① যখন দুটি মহাদেশীয় পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয়, তাকে মহাদেশীয়-মহাদেশীয় পাতসীমান্ত বলে। ② যখন একটি মহাদেশীয় এবং একটি মহাসাগরীয় পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয়, তাকে মহাদেশীয়-মহাসাগরীয় পাতসীমান্ত বলে এবং ③ দুটি মহাসাগরীয় পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হলে তাকে মহাসাগরীয়-মহাসাগরীয় পাতসীমান্ত বলে। এই তিন প্রকার অভিসারী পাত সীমান্তের মধ্যে প্রথম দুটি পাতসীমান্তে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি হয়। এই অঞ্চলে ভঙ্গিল পর্বত উৎপত্তির প্রক্রিয়া নীচে আলোচনা করা হল-

① মহাদেশীয়-মহাদেশীয় পাতসীমান্ত: ভূত্বকের অগভীর সংকীর্ণ অংশ, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে পলি, নুড়ি, বালি সঞ্চিত হয়ে পার্শ্বচাপের ফলে ওই পলিস্তরে ভাঁজ পড়ে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়, সেই অংশটিকে মহীখাত বলে। মহাদেশীয় পাত দুটি যতই পরস্পরের কাছে আসে, ততই ওই অগভীর সমুদ্র তথা মহীখাত সংকীর্ণ হয় এবং কালক্রমে মহীখাতে সঞ্চিত পলিরাশি দু-পাশের প্রচণ্ড চাপের (পার্শ্বচাপ) ফলে বড়ো বড়ো ভাঁজের আকারে ওপরে উঠে ভঙ্গিল পর্বত (fold mountain) গঠন করে। উদাহরণ-ভারতীয় পাত ও ইউরেশীয় পাত পরস্পর কাছে আসার ফলে উভয়ের সীমান্তে অবস্থিত টেথিস মহীখাতের সঞ্চিত পলিরাশি তথা পাললিক শিলায় ভাঁজ পড়ে হিমালয় পর্বতের উত্থান ঘটেছে।

② মহাদেশীয়-মহাসাগরীয় পাতসীমান্ত: যখন একটি মহাদেশীয় পাত এবং একটি মহাসাগরীয় পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয়, তখন অপেক্ষাকৃত ভারী শিলাগঠিত মহাসাগরীয় পাতটি হালকা মহাদেশীয় পাতের প্রান্তভাগ বরাবর নীচের দিকে প্রবেশ করে এবং ধনুকের মতো নিম্নবাঁকের সৃষ্টি করে, যাকে অধঃপাত মণ্ডল (subduction zone) বা বেনিয়ফ জোন বলা হয়। এরপর দুই পাতসীমান্ত বরাবর মহীখাত অঞ্চলে ক্রমশ পলি ভরাট হতে থাকে। পরবর্তী পর্যায়ে পাত দুটি যখন পরস্পরের দিকে আরও অগ্রসর হয়, তখন চাপ এতটাই বেড়ে যায় যে তার ফলে মহীখাতে সঞ্চিত পলিরাশি তথা পাললিক শিলাস্তর কুঁচকে গিয়ে বা ভাঁজপ্রাপ্ত হয়ে ওপরে উঠে যায় এবং ভঙ্গিল পর্বতের (fold moun- tain) সৃষ্টি হয়। উদাহরণ-আমেরিকা পাত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাতের অভিসারী সীমান্তে সৃষ্ট মহীখাতের পাললিক শিলাস্তরে ভাঁজ পড়ে রকি পর্বতের সৃষ্টি হয়েছে।

Leave a Comment