দ্বাদশ শ্রেণি ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ঊনবিংশ ও বিংশ শতকের উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের সংস্থাপন ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর

সূচিপত্র

দ্বাদশ শ্রেণি ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ঊনবিংশ ও বিংশ শতকের উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের সংস্থাপন ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর
দ্বাদশ শ্রেণি ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ঊনবিংশ ও বিংশ শতকের উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের সংস্থাপন ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর

সাম্রাজ্যবাদ’ (Imperialism) বলতে কী বোঝো?

সাম্রাজ্যবাদ বা Imperialism শব্দটির উদ্ভব হয়েছে ল্যাটিন শব্দ Imperare ও Imperalium থেকে। প্রথমে এর অর্থ ছিল সামরিক কর্তৃত্ব। পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যবাদ বলতে বৃহৎ রাষ্ট্র দ্বারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্রের উপর ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করাকে বোঝায়।

উপনিবেশবাদ’ (Colonialism) বলতে কী বোঝো?

উপনিবেশ শব্দটির মূল অর্থ হল ‘মানবসমাজের একটি স্থানান্তরিত অংশ’। সাধারণভাবে উপনিবেশবাদ হল- একটি এলাকা বা ওই এলাকার জনসাধারণের উপর অন্য একটি শক্তির নিয়ন্ত্রণ; যার উদ্দেশ্য হল ঔপনিবেশিক দেশের (Colonised) কাঁচামাল, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ দ্বারা অর্থনৈতিক শোষণ, উপনিবেশ স্থাপনকারী (Coloniser) দেশের স্বার্থে উপনিবেশের বাজার ব্যবহার এবং উপনিবেশে মাতৃদেশের সংস্কৃতি ও জীবনযাপন পদ্ধতির বিস্তার।

‘উপনিবেশ’ কী?

সাধারণভাবে বলা যায় একটি দেশ যখন অন্য দেশের ভূখণ্ড নিজের অধীনস্থ করে নেয়, তখন সেই অধীনস্থ ভূখণ্ড বা অঞ্চলটিকে বিজিত দেশের উপনিবেশ বলা হয়।

ভৌগোলিক অভিযানে কোন্ কোন্ দেশ অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল?

ভৌগোলিক অভিযানে স্পেন ও পোর্তুগাল অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল।

আমেরিকা মহাদেশ কে আবিষ্কার করেন?

আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার করেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস (১৪৯২ খ্রি.)। 

আমেরিগো ভেসপুচি কে ছিলেন?

জন্মসূত্রে ইতালীয় আমেরিগো ভেসপুচি স্পেনের পৃষ্ঠপোষকতায় চার বার সমুদ্র অভিযান করেন। ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি আমেরিকা মহাদেশকে নতুন মহাদেশ বলে চিহ্নিত করেন। তাঁর নামানুসারে। এই নতুন মহাদেশের নাম হয় আমেরিকা।

ক্যাপটেন কুক কোন্ কোন্ দেশ আবিষ্কার করেন?

অষ্টাদশ শতকের শেষ পর্বে ইংরেজ নাবিক ও আবিষ্কারক ক্যাপটেন কুক হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড আবিষ্কার করেন। 

কে অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করেন?

ইংরেজ নাবিক ও আবিষ্কারক ক্যাপটেন কুক অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করেন। 

‘বুল-এর নির্দেশনামা’ কী?

প্রথমদিকে সমুদ্র অভিযানে পোর্তুগাল ও স্পেন সাফল্য লাভ করলেও শীঘ্রই সমুদ্র অভিযান নিয়ে পোর্তুগাল ও স্পেনের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। ফলে ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে পোপ ষষ্ঠ আলেকজান্ডার ‘Papal bull’ বা পোপের মুদ্রাঙ্কিত নির্দেশনামায় স্পেনের সামুদ্রিক অভিযানের এলাকা নির্দিষ্ট করে দেন।

ইউরোপের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঔপনিবেশিক শক্তি কোনটি  ছিল?

ইউরোপের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঔপনিবেশিক শক্তি ছিল ব্রিটেন।

ইউরোপের দুটি ঔপনিবেশিক শক্তির নাম উল্লেখ করো।

ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে ইউরোপের যেসকল রাষ্ট্র উপনিবেশ বিস্তারে সচেষ্ট হয়েছিল, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, হল্যান্ড, ডেনমার্ক প্রভৃতি।

কোন্ সন্ধির দ্বারা সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের অবসান ঘটে?

১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের সন্ধি-র দ্বারা সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের অবসান ঘটে।

ইউরোপের ইতিহাসে কোন্ সময়কে ‘সাম্রাজ্যবাদের যুগ’ (Age of Imperialism) বলা হয়?

১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির উপনিবেশ-বিরোধী মনোভাব আকস্মিকভাবে লুপ্ত হয়। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কালপর্বে ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলি কাঁচামাল সংগ্রহ, শিল্পপণ্যের বাজার অনুসন্ধান এবং স্ফীত হয়ে ওঠা পুঁজির লাভজনক বিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের উপর উন্মত্ত প্রতিযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাই ১৮৭০ থেকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালটি যথার্থই নিন্দাসূচকরূপে সাম্রাজ্যবাদের যুগ (Age of Imperialism) বলে অভিহিত।

‘নয়া সাম্রাজ্যবাদ’ (Neo Imperialism) বা ‘আধুনিক সাম্রাজ্যবাদ’ কী?

নয়া সাম্রাজ্যবাদ অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের প্রকৃতিবিশিষ্ট। শিল্পবিপ্লবের পূর্বকাল পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদ বলতে বিজিত দেশে শুধুমাত্র ভৌমিক অধিকার বলবৎ করাকেই বোঝাত। কিন্তু নয়া সাম্রাজ্যবাদের লক্ষ্য অধীনস্থ দেশে শুধু ভৌমিক অধিকার স্থাপন নয়, তার অধিবাসী, শক্তিসম্পদ, অর্থনীতি এমনকি শিক্ষা ও সংস্কৃতি পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদী দেশের স্বার্থে ব্যবহার করা।

‘নয়া উপনিবেশবাদ’ বলতে কী বোঝো?

উপনিবেশবাদের আধুনিক রূপ হল নয়া উপনিবেশবাদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে এশিয়া ও আফ্রিকার সদ্যস্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলির উপর পূর্বতন সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণই নয়া উপনিবেশবাদ বা Neo- Colonialism নামে পরিচিত।

আফ্রিকা কেন ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ’ (Dark Continent) নামে পরিচিত ছিল?

আফ্রিকা মহাদেশ ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে ইউরোপের সবচেয়ে কাছে হলেও এর অন্তর্ভাগ ঊনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক পর্যন্ত ইউরোপবাসীর কাছে ছিল অজ্ঞাত ও অনাবিষ্কৃত। আফ্রিকার শ্বাপদসংকুল গহন অরণ্য, দুর্গম পর্বত, খরস্রোতা অনাব্য নদীসমূহ, ঊষর মরুভূমি, অস্বাস্থ্যকর জলবায়ু ও আদিম অধিবাসীদের প্রতিকূলতার কারণে মহাদেশটি অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ (Dark Continent) নামে পরিচিত ছিল। 

ভারতে আসার জলপথ কে আবিষ্কার করেন?

ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কার করেন ভাস্কো ডা গামা।

ভাস্কো ডা গামা কবে ভারতের কোথায় আসেন?

১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতের পশ্চিম উপকূলের কালিকট বন্দরে পোর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো ডা গামা জলপথে এসে পৌঁছোন।

১৬১২ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কোথায় প্রথম ইংরেজ বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপিত হয়?

১৬১২ খ্রিস্টাব্দে ভারতের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত সুরাট বন্দরে প্রথম ইংরেজ বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপিত হয়।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কবে গড়ে ওঠে?

১৬০০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গড়ে ওঠে।

ভারতের কোন কোন অঞ্চলে ইংরেজ বাণিজ্যকুঠি ছিল?

ভারতের বোম্বাই, মাদ্রাজ, কলকাতা, বিশাখাপত্তনম ইত্যাদি অঞ্চলে ইংরেজ বাণিজ্যকুঠি ছিল।

ভারতে কয়েকটি পোর্তুগিজ বাণিজ্যকুঠির নাম লেখো। অথবা, ভারতের কোথায় কোথায় পোর্তুগিজ বাণিজ্যকুঠি গড়ে উঠেছিল?

ভারতের বোম্বাই, কোচিন, সলসেট, বেসিন, হুগলি ইত্যাদি জায়গায় পোর্তুগিজ বাণিজ্যকুঠি গড়ে উঠেছিল।

আলিনগরের সন্ধি কত খ্রিস্টাব্দে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?

১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে বাংলার নবাব সিরাজ উদ-দৌলার আলিনগরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।

ইন্দোচিনের অপর নাম কী? অথবা, ইন্দোচিনের বর্তমান নাম কী?

ইন্দোচিনের অপর নাম ভিয়েতনাম।

কোন দেশ ‘মশলা দ্বীপপুঞ্জ’ নামে বিখ্যাত ছিল?

ইন্দোনেশিয়ার মালাক্কা দ্বীপপুঞ্জ ‘মশলা দ্বীপপুঞ্জ’ নামে বিখ্যাত ছিল। 

‘দূরপ্রাচ্য’ বলতে কী বোঝায়?

দূরপ্রাচ্য বলতে সাধারণভাবে চিন ও জাপানকে বোঝায়। নিজের দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে উচ্চ ধারণার বশবর্তী হয়ে এই দুটি দেশ বিদেশিদের বর্বর বলে মনে করত এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে তারা কোনো যোগাযোগ রাখত না।

কোন্ মার্কিন সেনাপতি সর্বপ্রথম জাপানে পদার্পণ করেন?

১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন বাষ্পীয় নৌবাহিনীর জনক কমোডর– পেরি সর্বপ্রথম জাপানের ইয়োডো বন্দরে পদার্পণ করেন।

কোন ইউরোপীয় দেশ চিনের সঙ্গে প্রথম ব্যাবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল?

ষোড়শ শতকে পোর্তুগিজরা প্রথম চিনের সঙ্গে ব্যাবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল।

চিনে প্রথম কারা, কোথায় বাণিজ্যঘাঁটি নির্মাণ করে?

চিনে পোর্তুগিজরা প্রথম ম্যাকাও বন্দর এলাকায় বাণিজ্যঘাঁটি নির্মাণ করে।

বৈদেশিক বাণিজ্য চিনের কোন্ বন্দর দুটিতে সীমাবদ্ধ ছিল?

বৈদেশিক বাণিজ্য চিনের ক্যান্টন ও ম্যাকাও বন্দর দুটিতে সীমাবদ্ধ ছিল।

চিনে কোন্ বছর আফিম আমদানি বন্ধ হয়? 

১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে চিনে লিন সেসু-র নেতৃত্বে আফিম আমদানি বন্ধ হয়।

প্রথম অহিফেন যুদ্ধ কবে ও কাদের মধ্যে হয়?

প্রথম অহিফেন যুদ্ধ ১৮৩৯-৪২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চিনের দুর্বল মাঞ্জু শাসকদের এবং ইংরেজদের মধ্যে সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে ইংরেজরা জয়লাভ করে।

শিমনোসেকির সন্ধি কবে, কাদের মধ্যে হয়?

চিন-জাপান যুদ্ধে (১৮৯৪-৯৫ খ্রি.) চিন পরাজিত হয়ে ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানের সঙ্গে শিমনোসেকির সন্ধি স্বাক্ষর করে।

চিনে মুক্তদ্বার নীতি কে ঘোষণা করেছিলেন? অথবা, ‘মুক্তদ্বার নীতি’ (Open Door Policy) কী? এর প্রবক্তা কে?

চিনা ভূখণ্ডে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশ স্থাপন রোধ করার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব জন হে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে মুক্তদ্বার নীতি ঘোষণা করেন। এর দ্বারা চিনের অখণ্ডতা রক্ষার এবং চিনা ভূখণ্ডে যে-কোনো দেশের বণিক বা বণিকগোষ্ঠীকে অবাধে বাণিজ্য করার অধিকারের কথা বলা হয়। আসলে চিন দেশে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখাই ছিল মুক্তদ্বার নীতি ঘোষণার প্রধান উদ্দেশ্য।

মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব জন হে ছিলেন এই নীতির প্রবক্তা। 

মুক্তদ্বার নীতিকে ‘অদৃশ্য সাম্রাজ্যবাদ’ (Invisible Imperialism) কে বলেছেন? 

চিনে আমেরিকার মুক্তদ্বার নীতির সমসাময়িক অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদকে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ‘অদৃশ্য সাম্রাজ্যবাদ’ (Invisible Imperialism) বলে অভিহিত করেছেন।

‘নতুন বিশ্ব’ (New World) বলতে কী বোঝায়? অথবা, ‘পুরোনো পৃথিবী’ কী?

ভৌগোলিক আবিষ্কারসূত্রে দুই আমেরিকা মহাদেশের অস্তিত্ব সামনে আসার পরে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা পুরোনো পৃথিবী (Old World) এবং দুই আমেরিকা নয়া পৃথিবী (New World) নামে পরিচিত হয়। ‘নয়া পৃথিবী’ বা ‘নতুন বিশ্ব’ নামকরণটির কৃতিত্ব দেওয়া হয় ফ্লোরেন্সের বিখ্যাত ভৌগোলিক আবিষ্কারক আমেরিগো ভেসপুচিকে। তিনি লরেঞ্জো দ্য মেডিচিকে লেখা (১৫০৩ খ্রি.) একটি চিঠিতে কলম্বাস আবিষ্কৃত মহাদেশটিকে Mundus Novus বা New World বলে উল্লেখ করেন।

ষোড়শ-সপ্তদশ শতকের ইউরোপের নিরিখে ‘নতুন বিশ্ব’ (New World) বলতে কী বোঝো? 

ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে স্পেন, ইংল্যান্ড, পোর্তুগাল, ফ্রান্স ও হল্যান্ড আমেরিকা মহাদেশে যে নতুন উপনিবেশ গড়ে তোলে, তা নতুন বিশ্ব নামে খ্যাত। 

‘আটল্যান্টিক ক্রীতদাস ব্যাবসা’ (Atlantic Slave System) কী?

নতুন বিশ্ব (New World) অর্থাৎ আমেরিকায় কৃষিকাজ সচল রাখতে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। তাই আফ্রিকা থেকে আটল্যান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করে কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসদের আমেরিকায় রফতানির লাভজনক ব্যাবসা আটল্যান্টিক ক্রীতদাস ব্যাবসা নামে পরিচিত।

অ্যাজটেক সভ্যতা কে ধ্বংস করেন?

১৫২১ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের নাবিক হার্নান্দো কোর্টেস (Hernando Cortes) অ্যাজটেক সভ্যতা ধ্বংস করেন। 

আমেরিকায় উপনিবেশ স্থাপনের পথিকৃৎ কাকে বলা হয়?

আমেরিকায় উপনিবেশ স্থাপনের পথিকৃৎ বলা হয় হামফ্রে গিলবার্ট-কে।

কত খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হয়?

১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হয়।

পুঁজিবাদ কী?

যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে উৎপাদনের উপকরণগুলির উপর ব্যক্তিগত মালিকানা এবং সেগুলির বণ্টন পরিলক্ষিত হয়, তাকে বলে পুঁজিবাদ (Capitalism) |

‘ওয়েলথ অফ নেশনস’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে?

প্রখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে ওয়েলথ অফ নেশনস’ গ্রন্থটি রচনা করেন। 

‘বাণিজ্যিক মূলধন’ বা ‘বাণিজ্যিক পুঁজি’ বলতে কী বোঝায়?

শিল্পবিপ্লবের আগে পুঁজিপতিরা বাণিজ্যে মূলধন বিনিয়োগ করতেন, বাণিজ্যে নিয়োজিত এই মূলধন বাণিজ্যিক মূলধন বা বাণিজ্যিক পুঁজি নামে পরিচিত। 

‘মার্কেন্টাইলবাদ’ বা ‘বণিকবাদ’ বলতে কী বোঝায়?

ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যে ইউরোপে বণিকবাদ বা মার্কেন্টাইলিজম একটি বিশিষ্ট অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। মূলত রাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে সমৃদ্ধ করার জন্য গৃহীত নীতিসমূহ, যথা- বুলিয়ান সঞ্চয়,’ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা, খনিজ উৎপাদন ও শিল্পের উন্নতির দ্বারা বাণিজ্যের ভারসাম্য বজায় রাখা ছিল বণিকবাদ বা মার্কেন্টাইলবাদের মূল কথা। লর্ড অ্যাকটনের মতানুসারে মার্কেন্টাইলবাদ এমন এক অর্থনৈতিক মতবাদ, যা জ্ঞানদীপ্তির সময়কালে স্বৈরতন্ত্রের পরিপূরক।

লগ্নি পুঁজি’ কী?

শিল্প বা বাণিজ্য থেকে অর্জিত অতিরিক্ত পুঁজি বা মুনাফা যখন আরও মুনাফা অর্জনের জন্য আবার কোনো শিল্পে অথবা বাণিজ্যে বিনিয়োগ করা হয়, তখন তাকে লগ্নি পুঁজি বলে। এর ফলে পুঁজিবাদের ধারা অব্যাহত থাকে।

হিলফারডিং-এর লেখা বইটির নাম লেখো।

হিলফারডিং-এর লেখা বইটির নাম হল- Finance Capital |

জে এ হবসনের বইটির নাম কী?

জে এ হবসনের বইটির নাম হল- ‘Imperialism: A Study’ বা ‘সাম্রাজ্যবাদ : একটি সমীক্ষা’ (১৯০২ খ্রিস্টাব্দ)।

সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে জে এ হবসনের মূল বক্তব্য কী ছিল?

‘Imperialism: A Study’ গ্রন্থে ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জে এ হবসন বলেছেন, পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় পুঁজিপতি মালিকরা বাণিজ্যের মাধ্যমে মূলধন সঞ্চয় করে মূলধনের পাহাড় (Glut of Capital) গড়ে তোলে। উপনিবেশে এই মূলধন বিনিয়োগ করে আরও মুনাফা বাড়ানোর জন্য পুঁজিপতিরা তাদের সরকারকে উপনিবেশ দখলে বাধ্য করে।

হবসন ঔপনিবেশিকতা ধ্বংসের উপায় সম্পর্কে কী বলেছেন? অথবা, হবসনের মত অনুসারে কীভাবে উপনিবেশ দখলের ঘটনাকে প্রতিহত করা সম্ভব হবে?

হবসন-এর মতে, সম্পদের অসম বণ্টন এবং শ্রমিক শোষণের ফলে পুঁজিপতি শ্রেণি সম্পদ ও মুনাফার পাহাড় গড়ে তোলে। এই উদ্বৃত্ত মুনাফার অর্থ সমাজের দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে বণ্টিত হলে বা সামাজিক উন্নয়নের কাজে ব্যয় হলে একদিকে সমাজের সুষম বিকাশ ঘটবে, অন্যদিকে ঔপনিবেশিকতার ধ্বংস হবে।

সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে লেনিনের মূল বক্তব্য কী?

লেনিনের মতে, পুঁজিবাদের জঠরে সাম্রাজ্যবাদের জন্ম। পুঁজিবাদী শ্রেণির স্বার্থেই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি পরিচালিত হয়। শিল্পমালিকরা অধিক মুনাফালাভের আশায় প্রয়োজনাতিরিক্ত পণ্য উৎপাদন করে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত এই পণ্য বিক্রয় এবং সস্তায় কাঁচামাল দখলের উদ্দেশ্যে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি উপনিবেশ দখলের চেষ্টা চালায়

‘হবসন-লেনিন তত্ত্ব’ (Thesis of Hobson-Lenin) বলতে কী বোঝো?

ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ হবসনের মতে, পশ্চিমি দেশগুলিতে ধনবণ্টনের বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে মাত্রাতিরিক্ত মূলধন জমে, তার লগ্নির ক্ষেত্র অনুসন্ধানের জন্য নিজের দেশের সরকারকে তারা সাম্রাজ্যবিস্তারে বাধ্য করে। অন্যদিকে রুশ কমিউনিস্ট নেতা লেনিন পুঁজিবাদকে ‘সাম্রাজ্যবাদের বীজ’ বলে অভিহিত করেন। তাঁর মতে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য বিক্রয় এবং শিল্পোৎপাদনের জন্য সস্তায় কাঁচামাল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি উপনিবেশ দখলের চেষ্টা চালায়-যা হবসন-লেনিন তত্ত্ব (Thesis of Hobson-Lenin) নামে পরিচিত।

শিল্পবিপ্লব (Industrial Revolution) সর্বপ্রথম কোথায় শুরু হয়েছিল? 

শিল্পবিপ্লব সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে শুরু হয়েছিল।

‘The White man’s Burden’ কবিতাটি কে লেখেন?

‘The White man’s Burden’ কবিতাটি লেখেন প্রখ্যাত ইংরেজ কবি রুডইয়ার্ড কিপলিং।

শ্বেতাঙ্গদের বোঝা’ বা ‘সাদা চামড়ার দায়বদ্ধতা’ বা White Man’s Burden বলতে কী বোঝায়?

শ্বেতাঙ্গরা নিজেদের উন্নত সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক বলে মনে করত, সেজন্য তারা পৃথিবীর অনুন্নত কৃষ্ণাঙ্গ জাতিগুলিকে সুসভ্য করার নৈতিক দায়িত্ব পালন করার জন্যই এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার অনুন্নত অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে। ইংরেজ লেখক রুডইয়ার্ড কিপলিং এবং ফরাসি লেখক জুলি ফেরি এ ব্যাপারে দেশবাসীকে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান। অবশ্য এ * বিষয়টি ছিল সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের একটি অজুহাত মাত্র।

‘সোশ্যাল ডারউইনবাদের’ প্রবক্তা কে?

‘সোশ্যাল ডারউইনবাদ’ বা ‘সামাজিক ডারউইনবাদ’ তত্ত্বের প্রবক্তা ছিলেন এডমন্ড স্পেনসার।

মার্টিন লুথার কিং-এর আন্দোলনের ভিত্তি কী ছিল?

মার্টিন লুথার কিং-এর আন্দোলনের ভিত্তি ছিল ধর্মসংস্কার।

‘জাতি ও জাতি বৈষম্য’ ধারণাটি কোন্ ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল?

‘জাতি ও জাতিবৈষম্য’ ধারণাটি পশ্চিমি উন্নত শ্বেতাঙ্গ জাতিগুলির কিছু পূর্ব ধারণা ও অনুমানের সঙ্গে যুক্ত ছিল। উল্লেখ্য, জাতিগত ক্ষেত্রে জাতি, বংশ, ধর্ম, সম্প্রদায়, সামাজিক স্তরবিন্যাস ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে এক বিভেদমূলক ব্যবহার ও বিশ্বাসের ভিত্তি তৈরি হয়।

‘বর্ণবৈষম্য’ কী?

সাদা-কালো মানুষের ভেদাভেদজ্ঞান থেকে কালো চামড়ার উপর সাদা চামড়ার ঘৃণা, অবজ্ঞা ও নিপীড়নজাত সমস্যাকে বর্ণবৈষম্য বলা হয়। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলিতে সাদা চামড়ার মানুষের শাসন বজায় রাখতে কালো চামড়ার মানুষের উপর ঘৃণা ও অত্যাচার থেকে শুরু করে জাতি বৈষম্যমূলক প্রথা বিশ্ব ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।

বর্ণবৈষম্য নীতি (Caste Discrimination Custom) কোন্ দেশে বলবৎ হয়? অথবা, বর্ণবৈষম্য নীতি কোথায় ব্যাপকতা লাভ করে?

বর্ণবৈষম্য নীতি দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ইত্যাদির মতো দেশে বলবৎ হয়।

নেলসন ম্যান্ডেলা স্মরণীয় কেন?

নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রধান নেতা। তিনি পরবর্তীকালে স্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম অ-শ্বেতাঙ্গ রাষ্ট্রপ্রধানের পদ অলংকৃত করেছিলেন।

নেলসন ম্যান্ডেলা কীসের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনা করেন?

নেলসন ম্যান্ডেলা বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনা করেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম অ-শ্বেতাঙ্গ রাষ্ট্রপ্রধানের নাম কী?

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম অ-শ্বেতাঙ্গ রাষ্ট্রপ্রধানের নাম হল নেলসন ম্যান্ডেলা।

স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?

স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সুতান জ্যহরির (Sutan Sjahrir)।

Leave a Comment