দ্বাদশ শ্রেণি ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর

সূচিপত্র

দ্বাদশ শ্রেণি ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর
দ্বাদশ শ্রেণি ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর

মধ্যবিত্ত কারা?

সম্পদের মাপকাঠিতে ধনী ও দরিদ্র- এই দুই শ্রেণির মাঝামাঝি স্তরে একটি শ্রেণি গড়ে ওঠে, তারাই মধ্যবিত্ত। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বিভিন্ন পেশাজীবী, জমিদার, ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরা এই শ্রেণিভুক্ত ছিলেন।

ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে কোন্ কোন্ মিশনারি সংস্থা অগ্রণী ছিল?

প্রেসবিটারিয়ান, ব্যাপটিস্ট মিশন, লন্ডন মিশন, স্কটিশ মিশন ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের জন্য বহু স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করে।

পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ব্যক্তিগত উদ্যোগের কোন্ কোন্ প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে?

হেনরি ড্রামন্ড-এর ধর্মতলা একাডেমি, বিশিষ্ট হিন্দুদের উদ্যোগে হিন্দু কলেজ, রাজা রামমোহন রায়-এর পটলভাঙা একাডেমি, ডেভিড হেয়ার-এর হেয়ার স্কুল, ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি এবং ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি, বিটন-এর হিন্দু ফিমেল স্কুল ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠে।

সরকারি উদ্যোগে প্রথম পর্যায়ে কোন্ কোন্ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে?

কলকাতা মাদ্রাসা (১৭৮১ খ্রি.), এশিয়াটিক সোসাইটি (১৭৮৪ খ্রি.), বেনারস সংস্কৃত কলেজ (১৭৯২ খ্রি.) প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর গড়ে ওঠে। 

কলকাতা মাদ্রাসা কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?

বাংলার গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস নতুন শাসন কাঠামো গড়ে তোলেন। শাসন, আইন, বিচার ব্যবস্থায় ফারসি ভাষা ও ইসলামি বিধান চালু ছিল। তাই কর্মচারিদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেওয়া এবং মুসলিমদের সন্তুষ্ট করার জন্য এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় (১৭৮১ খ্রি.)।

আলেকজান্ডার ডাফ কো ছিলেন?

আলোকজান্ডার ডাফ ছিলেন একজন স্কটিশ মিশনারি, বাংলায় শিক্ষাপ্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি বহু ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যেগুলির মধ্যে ‘জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন’ উল্লেখযোগ্য।

প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দু কী?

১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে সনদ আইন দ্বারা শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বার্ষিক একলক্ষ টাকা পাওয়ার জন্য প্রাচ্য শিক্ষাবাদী (সংস্কৃত-আরবি-ফারসি) ও পাশ্চাত্য শিক্ষা (ইংরেজি) বাদীরা দামি জানায়। এই পারম্পরিক দাবি প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দু নামে পরিচিত।

প্রাচ্যবাদী কারা?

এইচ.টি.প্রিন্সেপ, কোলব্রুক, উইলসন প্রমুখ শিক্ষাবিদ ধ্রুপদী (সংস্কৃত-আরবি-ফারসি) এবং মাতৃভাষার মাধ্যমে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার কথা বলেন। তাঁরাই প্রাচ্যবাদী। নামে পরিচিত।

চালর্স উড কে ছিলেন?

স্যার চার্লস উড ছিলেন বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি, ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর শিক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশনামা জারি করেন।

ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে উড্-এর নির্দেশনামার গুরুত্ব কী?

প্রচলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পাঠক্রমের সমন্বয়, প্রেসিডেন্সি শহরগুলিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, প্রতি প্রদেশে শিক্ষা বিভাগ গঠন, মেধাবৃত্তি, শিক্ষক-প্রশিক্ষক, পঠন-পাঠন পদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনাবিধি প্রবর্তন প্রভৃতির জন্য এই নির্দেশনামা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

শ্রীরামপুর ত্রয়ী কারা?

শ্রীরামপুর শহরে ব্যাপটিস্ট মিশনের তিনজন সদস্য উইলিয়ম কেরি, উইলিয়াম ওয়ার্ড, যোশুয়া মার্শম্যানকে শ্রীরামপুর ত্রয়ী বলা হয়। তাঁরা ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন বই প্রকাশ, পত্রিকা প্রকাশনা, স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন।

ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?

১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ার-এর উদ্যোগে বিদ্যালয় ছাত্রদের উপযোগী পাঠ্যবই ছাপা ও সরবরাহের জন্য এই সংস্থাটি গড়ে ওঠে।

কী উদ্দেশ্যে ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি গড়ে ওঠে?

১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ার-এর উদ্যোগে কলকাতার বাইরে মফঃস্বলে স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য এই সংস্থাটি গড়ে ওঠে।

কবে এবং কেন স্যাডলার কমিশন গঠিত হয়?

১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ও উচ্চশিক্ষার উন্নতিকল্পে স্যার মাইকেল স্যাডলারের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করে। যা স্যাডলার কমিশন নামে। পরিচিত। এই কমিশনের দু’জন ভারতীয় সদস্য হলেন আশুতোষ মুখার্জী ও ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ।

রাজা রামমোহন রায়কে কেন ভারতে প্রথম আধুনিক মানুষ বলা হয়?

আঠারো শতকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মুঘল ও আঞ্চলিক শক্তিগুলির অবক্ষয় ঘটে। ইংরেজ শক্তির উত্থান ঘটে। হিন্দু ও ইসলামি শিক্ষা-সংস্কৃতির অবক্ষয় ঘটে। পাশ্চাতা শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রবেশ হয়। রাজা রামমোহন রায় হিন্দু-ইসলামি ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতি আত্মস্থ করে এদেশের সমাজ-সংস্কৃতি, রাজনীতির বিকাশ ঘটাতে সচেষ্ট হন। এজন তাঁকে ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ বলা হয়।

রাজা রামমোহন রায় কেন ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন?

হিন্দু ধর্মের কু-সংস্কার দূর করে একেশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য রাজা রামমোহন রায় ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন (১৮২৮ খ্রি.)।

নব্যবঙ্গ কারা?

হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার (১৮১৭ খ্রি.) এক দশকের মধ্যে এই কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও-র আদর্শে প্রভাবিত হয়ে একদল ছাত্র (রসিককৃষ্ণ মল্লিক, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রাধানাথ শিকদার প্রমুখ) পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুকরণ ও হিন্দু সংস্কৃতির বিরোধিতা শুরু করে। তারা নব্যবঙ্গ নামে পরিচিত।

নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর পত্র-পত্রিকা কী ছিল?

পাইওনিয়ার, এনকোয়ারার, পার্থেনন, ক্যালাইডোস্কোপ, জ্ঞানান্বেষণ, বেঙ্গল স্পেকটেটর প্রভৃতি নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর পত্র-পত্রিকা ছিল।

জ্যোতিবা ফুলে কীজন্য স্মরণীয়?

মহারাষ্ট্রের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের নেতা ছিলেন জ্যোতিবা ফুলে। তিনি ব্রাহ্মণ আধিপত্যের বিরুদ্ধে সমাজের নিচু বর্ণের মানুষদের উন্নতির জন্য বহু কাজ করেন। শিক্ষাবিস্তারের জন্য বালিকা বিদ্যালয় সহ কয়েকটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিধবাদের কল্যাণের ব্যবস্থা করেন। সত্যশোধক সমাজ নামে তিনি এজন্য একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন (১৮৭৩ খ্রি.)।

হুইটলি কমিশন কেন গঠিত হয়?

ভারতে শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে বামপন্থী মনোভাব বেড়ে যায়। শ্রমিক কল্যাণের ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী নেতাদের তুলনায় ব্রিটিশ সরকার বেশি আগ্রহী একথা বোঝানোর জন্য সরকার এই কমিশন গঠন করে (১৯২৯ খ্রি.)।

‘সাহ্’ বা ‘সাউকার’ কাদের বলা হয়?

হিন্দি শব্দ ‘সাউকার’ কথাটির অর্থ হল-টাকা পয়সা লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত মাড়ওয়াড়ি ব্যবসায়ী শ্রেণি, তবে হিন্দু সমাজে বৈশ্য বর্ণের অর্থাৎ বণিক সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ ‘সাহু’ বা ‘সাউকার’ নামে পরিচিত। পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে এরা সুদখোর মহাজন শ্রেণিরূপে অভিহিত।

দলিত কারা? অথবা, দলিত কাদের বলা হয়?

হিন্দু সমাজে চারটি বর্ণের মধ্যে অবর্ণ, মিশ্র, অস্পৃশ্য ও অন্ত্যজ নামে পরিচিত জনগোষ্ঠী হল দলিত।

ভারতে রাজনৈতিক সভা-সমিতি গড়ে ওঠে কেন?

ব্রিটিশ আমলে নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা, নতুন পুঁজিবাদী অর্থনীতি, পাশ্চাত্য শিক্ষিত পেশাজীবীরা সমাজে মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে তোলে। এই শ্রেণি সচেতন ছিল। তারা উপলব্ধি করে, তাদের শ্রেণি স্বার্থরক্ষার জন্য রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলা দরকার। কারণ যৌথভাবে দাবি আদায়ের জন্য সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলন প্রয়োজন। কোনো সংগঠন ছাড়া আন্দোলন পরিচালনা করা যায় না। এজন্য নানা রাজনৈতিক সভা-সমিতি গড়ে ওঠে। 

চিনে বক্সার বিদ্রোহ কেন ঘটে?

আফিমযুদ্ধ ও নানকিং সন্ধির (১৮৪২ খ্রি.) পর থেকে চিনের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদেশি শক্তির আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ঘটনায় চিনা জাতীয়তাবাদীরা বিক্ষুব্ধ হয়। তারা ‘আই-হো-তুয়ান’ নামে মুষ্টিযোদ্ধাদের (Boxer) একটি সংগঠন গড়ে তোলে। চিনা সম্রাজ্ঞী জু-সি-র প্রচ্ছন্ন সমর্থনে এই সংগঠন বিদ্রোহ শুরু করে (১৮৯৮ খ্রি.)। তারা ধ্বনি দেয়, ‘বিদেশি দানবদের সমুদ্রে ফেলে দাও’। আক্রমণ ও প্রতি-আক্রমণের এই ঘটনা বক্সার বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

৪ঠা মে আন্দোলন কী ধরনের সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটায়?

এই আন্দোলন কনফুসীয় মতবাদের বিলোপ ঘটায় এবং প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সমন্বয় সাধন করে। চিনা ভাষার সংস্কার করে চিনা সাহিত্যের বিকাশ ঘটায়। পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হয়।

কবে, কাদের নেতৃত্বে ৪ঠা মে আন্দোলন শুরু হয়? অথবা, ৪মে আন্দোলন কত খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয়?

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ৪ঠা মে এই আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনে হু-শি, চেন-তু শিউ, সাই-ইউয়ান-পাই প্রমুখগণ নেতৃত্ব দেন।

ডায়াসপোরা কী?

উনিশ শতকে ভারত ও চিন থেকে হাজার হাজার শ্রমিকের ভিন দেশে কাজের জন্য চলে যাওয়া ‘ডায়াসপোরা’ নামে পরিচিত।

চুক্তিবদ্ধ (Indenture Labour) শ্রমিক কাদের বলে?

কোনো নিয়োগ কর্তার (ব্যক্তি বা সংস্থা) অধীনে নির্দিষ্ট বেতনের শর্তে নির্দিষ্ট কাজে সম্মত শ্রমিকদের চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক বলে।

Leave a Comment