“দেখতে দেখতে প্রচণ্ড উত্তেজনা ছড়াল চারদিকে”-প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এই উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনার বিবরণ দাও। |
চৌকিদারের কথামতো গ্রামের হিন্দুরা বুড়ির মৃতদেহ নদীর চড়ায় ফেলে আসে। কিন্তু বিকালের দিকে মুসলমান পাড়ার লোকেরা বুড়ির মড়াটা তুলে আনে। বুড়ির মৃতদেহ বহনকারী লোকজন যখন বাজারে পৌঁছোয় তখন তাদের কাছে হিন্দুরা এমন আচরণের কারণ জানতে চাইলে তারা বলে-“বুড়ি যে মুসলমান”। প্রমাণ হিসেবে তারা দাবি করে যে বুড়িকে ‘আল্লা বা বিসমিল্লা’ বলতে শুনেছে এমনকি মোল্লাসায়েব অকাট্য শপথ ‘করে বলেন যে, তিনি বুড়িকে কলমা পড়তে শুনেছেন।
গ্রামের ভটচাজমশাই একবাক্যে সেই দাবি নাকচ করে বলেন যে, তিনি বুড়িকে ‘শ্রীহরি শ্রীহরি’ বলতে স্পষ্টভাবে শুনেছেন। তার সপক্ষে নকড়ি নাপিত প্রমাণ দেয়। কিন্তু মুসলমানরাও মেনে নেয় না, বচসা ক্রমে বেড়ে যায়। তারপর একদল বাঁশের চ্যাংদোলা ধরে টানাটানি শুরু করে। দেখতে দেখতে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে। দোকানদাররা গোলমালের আশঙ্কায় দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করতে শুরু করে। আর তারপর দেখা যায় গ্রাম থেকে অনেক লোক দৌড়ে আসছে, যাদের হাতে মারাত্মক সব অস্ত্র।
বুড়ির মৃতদেহের চ্যাংদোলাটা পিচের উপর পড়ে, আর তার দু-পাশে যুযুধান দুই পক্ষ। পরস্পর পরস্পরকে গালিগালাজ করে চলেছে আর নীল উর্দি পরা চৌকিদার তার লাঠি উঁচু করে দু-পক্ষকেই শান্ত করানোর চেষ্টা করে। এই উত্তেজনা যখন রক্তপাত ঘটাবে এমন অবস্থায় প্রায় পৌঁছে গেল তখনই বুড়ির মড়াটা নড়তে নড়তে উঠে বসার চেষ্টা করে। আর এই দৃশ্য দু-দিকের সশস্ত্র জনতার বাক্রোধ করে দেয়। এরপর বুড়ি হিন্দু, না মুসলমান এই প্রশ্নের কোনো সরাসরি উত্তর না দিয়ে বুড়ি দূরে ক্রমশ মিলিয়ে যায়।