দাঁতগুলো বের করে সে কামটের মতোই হিংস্র ভঙ্গি করে-কে, কার প্রতি এরূপ আচরণ করেছিল? তার এরূপ আচরণের কারণ বিশ্লেষণ করো

"দাঁতগুলো বের করে সে কামটের মতোই হিংস্র ভঙ্গি করে।"-কে, কার প্রতি এরূপ আচরণ করেছিল? তার এরূপ আচরণের কারণ বিশ্লেষণ করো
“দাঁতগুলো বের করে সে কামটের মতোই হিংস্র ভঙ্গি করে।”-কে, কার প্রতি এরূপ আচরণ করেছিল? তার এরূপ আচরণের কারণ বিশ্লেষণ করো।
মহাশ্বেতা দেবীর লেখা ‘ভাত’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র উচ্ছব নাইয়া (উৎসব নাইয়া) প্রশ্নোক্ত আচরণ করেছিল। উচ্ছব নাইয়া বাদার কামটের মতো হিংস্র ভঙ্গি করে তার গ্রাম সম্পর্কের বোন বাসিনীর প্রতি।

উচ্ছব নাইয়া যে বাদা অঞ্চলে বাস করত সেখানে বারোমাস ভাতের অভাব। গেঁড়ি-গুগলি খেয়ে, শাকপাতা খেয়ে, কখনও সিকিপেটা-আধপেটা খেয়ে দিন কাটাতে হত। এর সঙ্গে মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো দেখা দেয় ধানের মড়ক-“ধানে গোছ আসার আগেই ধানগাছ থেকে সবুজ রং চলে যেতে থাকে।” ফলে উচ্ছবের মতো মানুষদের মাথায় হাত পড়ে। এরপর এক প্রলয়ংকরী রাত্রে ঝড়বৃষ্টির প্রকোপে মাতলা নদী এসে উচ্ছবের কাঁচাঘর-বউ-ছেলে-মেয়ে সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। নিঃস্ব উচ্ছব বাহ্যজ্ঞান শূন্য হয়ে পাগলের মতো নিজের পরিবারকে খুঁজতে থাকে। একসময় যখন সংবিৎ ফেরে তখন ত্রাণের খাবারও শেষ। ভাতের খিদে এবার তাকে তাড়া করে। সে যেন প্রেত হয়ে ওঠে।

ভাত খাওয়ার আশায় উচ্ছব বাসিনীর সহায়তায় কলকাতার বড়োবাড়িতে আসে। সেখানে ভাতের ছড়াছড়ি দেখে তার বিস্ময়ের সীমা নেই। কিন্তু সে বাড়িতে বড়োকর্তা মরণাপন্ন। তাই সবাই কাজ বুঝে নিতে ব্যস্ত। এতদিনের অভুক্ত উচ্ছব হোমের জন্য দু-মণ কাঠ কেটে ফেলে। ফুটন্ত ভাতের গন্ধ তার স্নায়ুকে টানটান করে দেয়। কিন্তু এরপরও তান্ত্রিকের নতুন বিধান-“সর্বস্ব রেঁধে রাখো, হোম হলে খেও।” ফলে অভুক্ত উচ্ছব ভাতের অপেক্ষায় খিদে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভাঙলে দেখে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিয়েছে। বুড়ো কর্তা মারা যাওয়ায় সমস্ত রান্না অশুচি বলে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যে সে ইতিকর্তব্য স্থির করে নেয়। বাসিনীর হাত থেকে ভাতের বড়ো ডেকচি নিয়ে সে দৌড় শুরু করে। সংস্কারবশত বাসিনী নিষেধ করতে গেলে এতদিনের অভুক্ত উচ্ছব বাদার কামটের মতোই হিংস্র চোখে তাকায়। তার এতদিনের কাঙ্খিত ভাত তার দু-হাতের মুঠোয়। ভাত সে আর কোনোভাবে হাতছাড়া করবে না।

Leave a Comment