দশম শ্রেণি জীবনবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর

সূচিপত্র

দশম শ্রেণি জীবনবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর
দশম শ্রেণি জীবনবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর

কৃষির ফলনবৃদ্ধি ও আগাছা সমস্যা সমাধানে সংশ্লেষিত উদ্ভিদ হরমোনের ভূমিকা নিয়ে বিশ্লেষণ করো। 

কৃষির ফলনবৃদ্ধি ও আগাছা সমস্যা সমাধানে সংশ্লেষিত উদ্ভিদ হরমোনের ভূমিকা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হল-

কৃষির ফলন বৃদ্ধি: কৃষির ফলন বৃদ্ধির জন্য অপরিণত ফলের মোচন রোধ করার জন্য কৃত্রিম অক্সিন (2-4-D) স্প্রে করে গাছের মুকুল, কচি ফল ইত্যাদি ঝরে পড়া রোধ করা হয়। উদাহরণ হিসেবে আমের মুকুল আসার পর কৃত্রিম অক্সিন স্প্রে করে অপরিণত ফলের মোচন রোধ করে আমের ফলন বৃদ্ধি ও ঘটানো হয়।

আগাছা সমস্যা সমাধানে : ধান, গম, যব প্রভৃতি শস্যক্ষেত্রে কৃত্রিম অক্সিন (2-4-D)। প্রয়োগ করে আগাছার সমস্যা সমাধান করা যায়। এর ফলে ফসলের উপর কোনো স্থায়ী প্রভাব পড়ে না।

উদ্ভিদের বীজ ও পর্বমধ্যের ওপর জিব্বেরেলিন হরমোন কী কী প্রভাব ফেলে তা ব্যাখ্যা করো।

উদ্ভিদের বীজের ওপর জিব্বেরেলিনের প্রভাব : এই হরমোন বীজের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করতে সক্ষম। যে সমস্ত বীজে স্বল্প অন্তর্জনিষ জিব্বেরেলিন থাকে, সেক্ষেত্রে বহির্জনিয়ু জিব্বেরেলিন প্রয়োগে বীজের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করা যায়।

পর্বমধ্যের ওপর প্রভাব: জিব্বেরেলিন হরমোনের প্রভাবে উদ্ভিদ পর্বের সংখ্যা বৃদ্ধি না করে দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি ঘটায়, ফলে উদ্ভিদদেহে লম্বায় বৃদ্ধিপায়।

নীচের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উদ্ভিদ হরমোন দুটির নাম বলো-(a) মুকুল ও বীজের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করা, (b) ক্ষতস্থানে ক্যালাস গঠন।

(a) মুকুল ও বীজের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করা-জিব্বেরেলিন হরমোন, (b) ক্ষতস্থানে ক্যালাস গঠন-সাইটোকাইনিন হরমোন।

কোশপ্রাচীরের ওপর অক্সিন কী কী প্রভাব ফেললে কোশের আকার বৃদ্ধি ঘটে তা নির্ধারণ করো।

অক্সিন হরমোন কোশপ্রাচীরের ওপর প্রধানত দুভাবে কাজ করে- (i) অক্সিন হরমোন উদ্ভিদ কোশের কোশপ্রাচীরকে নমনীয় করে কোশের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে। (ii) এ ছাড়া অক্সিন কোশপ্রাচীরে নতুন উপাদান সঞ্চিত করে কোশের আয়তন বৃদ্ধি ঘটায়।

বীজহীন ফল উৎপাদনে ও নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টিতে কৃত্রিম উদ্ভিদ হরমোনের ভূমিকা লেখো।

বীজহীন ফল উৎপাদনে ও নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টিতে কৃত্রিম উদ্ভিদ হরমোনের ভূমিকা নিম্নে বর্ণনা করা হল-

বীজবিহীন ফল উৎপাদন:
কৃত্রিম অক্সিন হরমোন (NAA, IBA) প্রয়োগ করে পরাগযোগ ও নিষেক ছাড়াই উদ্ভিদের বীজহীন ফল (যেমন-পেঁপে, কলা, পেয়ারা, টমেটো) উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। বীজহীন ফল সৃষ্টির পদ্ধতিকে পার্থেনোকার্পি বলে।

নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি: কৃত্রিম অক্সিন হরমোন (NAA, IBA) প্রযোগ করে বিভিন্ন উদ্ভিদে (গোলাপ, আম, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি) তাড়াতাড়ি মূল উৎপাদন করানো যায়। ফলে উদ্ভিদের ওই শাখা কলমে মূল ও শাখা সৃষ্টির ফলে মাতৃ উদ্ভিদের সমগুণ সম্পন্ন নতুন অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়ে থাকে।

কোন্ কোন্ পরিস্থিতিতে একজন কৃষক কৃত্রিম হরমোনকে তার কৃষিজমি ও ফলের বাজারে ব্যবহার করবেন তা বিশ্লেষণ করো।

অথবা, কৃষি কাজে ও উদ্যান বিদ্যায় উদ্ভিদ হরমোনকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা লেখো।

নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি, অপরিণত ফলের মোচন রোধ, আগাছা দমন এবং বীজহীন ফল সৃষ্টির জন্য কৃত্রিম অক্সিন হরমোন (NAA, IBA, 2, 4-D) প্রয়োগ করে কৃষক অধিক সুবিধা লাভ করতে পারবেন।

নীচের দুটি কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উদ্ভিদ হরমোন দুটির নাম বলো-(i) কোশের আয়তন বৃদ্ধি, (ii) ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ, (iii) পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি, (iv) পত্রমোচন বিলম্বিত করা।

(i) কোশের আয়তন বৃদ্ধি-অক্সিন হরমোন। (ii) ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ-অক্সিন হরমোন, (iii) পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি-জিব্বেরেলিন হরমোন, (iv) পত্রমোচন বিলম্বিত করা- সাইটোকাইনিন হরমোন।

নিম্নলিখিত ক্রিয়াগুলির সঙ্গে হরমোনের নাম তালিকাভূক্ত করো। (ক) বীজহীন ফল উৎপাদন, (খ) ফল পাকাতে সাহায্য করা, (গ) অগ্রস্থ প্রকটতা নিয়ন্ত্রণ, (ঘ) আগাছা দমন।

(ক) বীজহীন ফল উৎপাদন-কৃত্রিম অক্সিন হরমোন (NAA, IBA), (খ) ফল পাকাতে সাহায্য করে-ইথিলিন হরমোন, (গ) অগ্রস্থ প্রকটতা নিয়ন্ত্রণ-অক্সিন হরমোন, (ঘ) আগাছা দমন-কৃত্রিম অক্সিন হরমোন

ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে অক্সিন (IAA) হরমোনের ভূমিকা লেখো।

অক্সিন উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক এবং জিওট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।

অক্সিনের এইরকম অসমান বণ্টনের ওপর উদ্ভিদের ট্রপিক চলন নির্ভর করে।

ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে অক্সিনের ভূমিকা (Control of Tropic Movement)

অক্সিন উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক এবং জিওট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। কাণ্ডে অক্সিন আলোর উৎসের বিপরীত দিকে বেশিমাত্রায় সঞ্চিত হয়ে ওই অঞ্চলের কোশগুলির দ্রুত বিভাজন ঘটায়, ফলে উদ্ভিদের কাণ্ড আলোর উৎসের দিকে বেঁকে যায়। মূল স্বল্প পরিমাণ অক্সিনে বেশি অনুভূতিশীল। মুলের ক্ষেত্রে আলোর উৎসের দিকে কোশগুলিতে অক্সিনের উপস্থিতি খুব কম, সেইজন্য ওই অঞ্চলের কোশ দ্রুত বিভাজিত হয়। ফলে মূল আলোর বিপরীত দিকে বেঁকে যায়। অধিক ঘনত্বের অক্সিনে বিটপ অনুভূতিশীল এবং কম ঘনত্বের অক্সিনে মুল অনুভূতিশীল। কান্ডের অগ্রভাগে অধিক ঘনত্বের অক্সিন এবং মূলের অগ্রভাগে কম ঘনত্বের অক্সিন সঞ্চিত হয়ে যথাক্রমে কাণ্ড ও মূলের অগ্রভাগে দ্রুত কোশ বিভাজন ঘটায়। ফলে বিটপ অভিকর্ষের বিপরীতে এবং মূল অভিকর্ষের অনুকূলে অগ্রসর হয়। অক্সিন এইভাবে উদ্ভিদের জিওট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে। অক্সিনের এইরকম অসমান বণ্টনের ওপর উদ্ভিদের ট্রপিক চলন নির্ভর করে।

বীজের সুপ্তাবস্থা ভাঙনে ও পর্বমধ্যের ওপর জিব্বেরেলিন হরমোনের ভূমিকা লেখো।

বীজের মধ্যে থাকা ভ্রূণের সাময়িক স্থিতাবস্থাকে সুপ্তাবস্থা বলে। এই সুপ্তবস্থা ভাঙনে জিব্বেরেলিন হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই হরমোন বীজ মধ্যস্থ সুপ্তাবস্থা ভাঙনের জন্য দায়ী উৎসেচক x-অ্যামাইলেজকে সক্রিয় করে। ফলে বীজে সঞ্চিত খাদ্য ভেঙে যায়। এই খাদ্য ভূণে সঞ্চারিত হয় এবং ভ্রূণ মূল ও ভ্রূণ মুকুলের কোশ বিভাজন শুরু হয়। বীজের সুপ্তাবস্থা দূর হয় ও অঙ্কুরোদ্গম হয়।

হরমোন কাকে বলে?

যে জৈব-রাসায়নিক পদার্থ বিশেষ ধরনের কোশ বা কোশসমষ্টি বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয়ে বিশেষ উপায়ে বাহিত হয়ে দূরবর্তী স্থানের কোশসমূহের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ক্রিয়ার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, তাকে হরমোন বলে।

হরমোন ও উৎসেচকের দুটি পার্থক্য কী?

(i) হরমোন ক্রিয়ার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, কিন্তু উৎসেচক ক্রিয়ার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না। (ii) হরমোন অন্তঃক্ষরা কোশ থেকে নিঃসৃত হয়, কিন্তু উৎসেচক বহিঃক্ষরা কোশ থেকে ক্ষরিত হয়।

হরমোন ও স্নায়ুর ক্রিয়ার দুটি পার্থক্য কী?

(i) হরমোনের ক্রিয়া মন্থর কিন্তু সুদূরপ্রসারী, অপরপক্ষে স্নায়ুর ক্রিয়া দ্রুত কিন্তু তাৎক্ষণিক। (ii) হরমোন ক্রিয়ার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, কিন্তু ক্রিয়ার পর স্নায়ুর কোনো পরিবর্তন হয় না।

হরমোন কথার অর্থ কী?

হরমোন কথাটি গ্রিক শব্দ ‘হরমোইন’ বা ‘হরমাও’ থেকে উৎপন্ন হয়েছে, যার অর্থ ‘জাগ্রত করা’ বা ‘উত্তেজিত করা’।

হরমোনের দুটি কাজ উল্লেখ করো।

(1) হরমোন জীবদেহের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। (2) হরমোন জীবদেহে যৌন লক্ষণ প্রকাশে সাহায্য করে।

হরমোনকে রাসায়নিক দূত বলে কেন?

হরমোন কোশে কোশে রাসায়নিক বার্তা বহন করে তাই হরমোনকে রাসায়নিক দূত বলে।

হরমোনকে রাসায়নিক সমন্বায়ক বলে কেন?

হরমোন জীবদেহের বিভিন্ন কোশ, কলা ও অঙ্গের মধ্যে রাসায়নিক সমন্বয় সাধন করে তাই হরমোনকে রাসায়নিক সমন্বায়ক বলে।

কাইনিনের রাসায়নিক উপাদানগুলি কী কী?

কাইনিনের রাসায়নিক উপাদানগুলি হল-কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন।

সাইটোকাইনিনের দুটি কাজ বা ভূমিকা উল্লেখ করো।

(i) সাইটোকাইনিন অগ্রমুকুলের বৃদ্ধির হ্রাস ঘটিয়ে পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি ঘটায়। (ii) পত্রমোচন বিলম্বিত করে এবং ক্লোরোফিল বিনষ্টকরণ প্রতিহত করে।

উদ্ভিদের একটি প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম হরমোনের উদাহরণ দাও।

উদ্ভিদের একটি প্রাকৃতিক হরমোন হল অক্সিন এবং একটি কৃত্রিম হরমোন হল ইন্ডোল প্রোপিয়নিক অ্যাসিড (IPA)।

সাইটোকাইনিন বা কাইনিনের দুটি উৎসস্থল উল্লেখ করো।

কাইনিন নারকেলের তরল সস্যে, ভুট্টার সস্যে পাওয়া যায়।

উদ্ভিদের একটি প্রকল্পিত হরমোনের নাম ও তার কাজ উল্লেখ করো।

উদ্ভিদের একটি প্রকল্পিত হরমোন হল ফ্লোরিজেন। এটি ফুল ফোটাতে সাহায্য করে।

একটি গ্যাসীয় হরমোনের উদাহরণ দাও এবং এর কাজ উল্লেখ করো।

ইথিলিন একটি গ্যাসীয় হরমোন এবং এটি ফল পাকানোর কাজ করে।

অক্সিনের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

(i) অক্সিনের প্রবাহ সবসময় মেরুবর্তী (ii) অক্সিনের ক্রিয়া অন্ধকারে ভালো হয়।

অক্সিনের দুটি কাজ উল্লেখ করো।

(i) অক্সিন উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। (ii) উদ্ভিদের ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে।

অক্সিনের রাসায়নিক নাম ও রাসায়নিক উপাদান কী?

অক্সিনের রাসায়নিক নাম হল ইন্ডোল অ্যাসেটিক অ্যাসিড। এর রাসায়নিক উপাদান হল কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন।

অক্সিনের দুটি উৎসস্থল উল্লেখ করো।

অক্সিনের দুটি উৎসস্থল হল কোলিওপটাইল এবং কান্ড ও মূলের অগ্রস্থ ভাজক কলা।

জিব্বেরেলিনের উৎস উল্লেখ করো।

জিব্বেরেলিনের উৎসস্থল হল পরিপক্ক বীজ এবং বীজপত্র।

জিব্বেরেলিনের রাসায়নিক নাম ও রাসায়নিক উপাদান কী?

জিব্বেরেলিনের রাসায়নিক নাম জিব্বেরেলিক অ্যাসিড এবং রাসায়নিক উপাদান হল কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন।

জিব্বেরেলিনের প্রধান কাজ কী?

জিব্বেরেলিনের প্রধান কাজগুলি হল খর্বাকার উদ্ভিদের বৃদ্ধি, কাক্ষিক মুকুলের পরিস্ফুটন এবং বীজের সুপ্ত অবস্থা ভঙ্গ করতে সাহায্য করা।

দুটি সংশ্লেষিত বা কৃত্রিম হরমোনের উদাহরণ দাও।

(i) কৃত্রিম অক্সিন-IBA, NAA (ii) কৃত্রিম জিব্বেরেলিন।

পত্রমোচন বিলম্ব ও পার্শ্বমুকুল গঠনে সাইটোকাইনিনের ভূমিকা লেখো।

সাইটোকাইনিন-এর প্রভাবে পত্রমোচন বিলম্বিত হয়, পাতার ক্লোরোফিল নষ্ট হওয়া রোধ করে। বার্ধক্য বিলম্বিত হয়।

সাইটোকাইনিন অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি হ্রাস ঘটিয়ে পার্শ্ব মুকুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। গাছের শাখা প্রশাখা সৃষ্টি হয়। গাছ গম্বুজ আকার ধারণ করে।

আগাছা বিনাশক ও বীজহীন ফল উৎপাদনে কৃত্রিম হরমোনের ভূমিকা লেখো।

ধান, গম, যব প্রভৃতি শস্যক্ষেত্রে কৃত্রিম অক্সিন (2,4-D) ব্যবহার করে আগাছা নির্মূল করা হয়।

কৃত্রিম অক্সিন [NAA-ন্যাপথক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড] IBA ইন্ডোল বিউটারিক অ্যাসিড (IBA) ব্যবহার করে পরাগযোগ ও নিষেক ছাড়াই বীজহীন ফল সৃষ্টি করা হয়। যেমন-কলা, পেঁপে প্রভৃতি।

কোন হরমোন কীভাবে উদ্ভিদের লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারে?

জিব্বেরেলিন হরমোন উদ্ভিদের লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারে। শশা, কুমড়ো প্রভৃতি উদ্ভিদের লিঙ্গ নির্ধারণে এই হরমোনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। এই সকল উদ্ভিদে জিব্বেরেলিন A, বা GA₃-এরঘনত্ব বেশি হলে পুরুষ ফুল আর GA₃-এর ঘনত্ব কম থাকলে স্ত্রী ফুল উৎপন্ন হয়।

অক্সিনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

(i) অক্সিন একপ্রকার জৈব অ্যাসিড। (ii) অক্সিনের ক্রিয়া প্রধানত মেরুবর্তী। (iii) অক্সিনের ক্রিয়া আলোক উৎসের বিপরীতে অর্থাৎ অন্ধকারে ভালো হয়। (iv) অক্সিনের পরিবহণ ব্যাপন ক্রিয়ায় জলের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

অগ্রস্থ প্রকটতা কী?

অক্সিন হরমোনের প্রভাবে কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি বাধা পায় ও অগ্র মুকুলের বৃদ্ধি প্রাধান্য পায়। ফল স্বরূপ উদ্ভিদের কাণ্ডের অগ্রভাগে বৃদ্ধি পায়। এই ঘটনাকে অগ্রস্থ প্রকটতা বলে।

উদ্ভিদের কাণ্ডের অগ্রভাগে কেটে দিলে কী হবে?

অগ্র মুকুলের প্রাধান্য নষ্ট হবে এবং উক্ত স্থানে কাইনিনের প্রভাবে কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি প্রাধান্য পাবে ফলত প্রচুর শাখা-প্রশাখা সৃষ্টি হবে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোন্ উদ্ভিদটিকে কখনোই অগ্রভাগে বাড়তে দেওয়া হয় না এবং কেন?

চা, কারণ চা পাতা আমরা যা পানীয় হিসেবে গ্রহণ করি সেটি প্রকৃত পক্ষে একটি কচি মুকুল ও কচি পাতা। তাই চা উদ্ভিদটিকে সব সময়ই ছেঁটে দেওয়া হয় যাতে কাক্ষিক মুকুল ও কচি পাতা বেশি করে বের হয়।

পার্থেনোেকাপি কী?

কৃত্রিম অক্সিন প্রয়োগের দ্বারা অনিষিক্ত ডিম্বাশয় থেকে বীজহীন ফল উৎপাদন প্রক্রিয়াকে পার্থেনোকার্পি বলা হয়। এই পদ্ধতিতে ফল উৎপাদন প্রক্রিয়াকে পার্থেনোকার্পি বলা হয়। এই পদ্ধতিতে বীজহীন কলা, পেঁপে, আঙুর প্রভৃতি ফল উৎপাদন সম্ভব।

অক্সিনের উৎসস্থল উল্লেখ করো।

অক্সিন উদ্ভিদের অগ্রস্থ ভাজক কলায়, প্রধানত কাণ্ডের অগ্রভাগ, ভ্রূণমুকুলাবরণী বা কোলিওপটাইল, ভ্রূণ ও কচি পাতা বা বর্ধনশীল পাতার কোশে উৎপন্ন হয়।

জিব্বারেলিনের উৎসস্থল উল্লেখ করো।

জিব্বারেলিনের প্রধানত উদ্ভিদের পরিপক্ক বীজে বেশি উৎপন্ন হয়। এ ছাড়া মুকুল, অঙ্কুরিত চারাগাছ, বীজের বীজপত্র এবং পাতার বর্ধিষ্ণু অঞ্চলে এই হরমোন পাওয়া যায়।

কাইনিনের উৎসস্থল উল্লেখ করো।

উদ্ভিদের সস্য ও ফলে বেশি পরিমাণে কাইনিন পাওয়া যায়। টমেটো, পীচ, ন্যাসপাতি, কুল প্রভৃতি ফল ও ফুলের নির্যাসে সাইটোকাইনিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া ভুট্টার সস্যে ও নারকেলের দুধে (তরল সস্যে) বেশি পরিমাণে কাইনিন থাকে। ডাবের জলে কাইনিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া মস, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং ইউক্যারিওট এবং প্রোকারিওট কোশের tRNA-র মধ্য কাইনিন পাওয়া যায়।

রেজুভিনেটিং হরমোন কাকে বলে ও কেন?

কাইনিন বা সাইটোকাইনিনকে রেজুভিনেটিং হরমোন বলা হয় কারণ এটি উদ্ভিদের বার্ধক্য বিলম্বিত করে।

উদ্ভিদ হরমোনের অধঃক্ষরণ বা অধিঃক্ষরণজনিত লক্ষণ সুস্পষ্ট নয় কেন?

অধিকাংশ উদ্ভিদ হরমোনগুলির কাজের মধ্যে মিল থাকায় কোনো একটি হরমোনের অধঃক্ষরণ বা অধিঃক্ষরণের লক্ষণ আলাদা করে বোঝা যায় না। উদাহরণস্বরূপ তিনটি প্রাকৃতিক হরমোনই উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহায়ক। তাই কোনো একটির কম ক্ষরণ বা বেশি ক্ষরণ অন্য হরমোনগুলির স্বাভাবিক ক্ষরণের দ্বারা প্রশমিত হয়।

অপ্রধান উদ্ভিদ হরমোন কী?

যে সকল উদ্ভিদ হরমোন বেশিরভাগ উদ্ভিদে অনুপস্থিত কেবলমাত্র বিশেষ সময়ে নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার জন্য তৈরি হয় তাদের অপ্রধান হরমোন বলা হয়। যেমন- ABA, ট্রমাটিক অ্যাসিড, ইথিলিন।

প্রকল্পিত বা অনুমানিক হরমোন কী?

উদ্ভিদ দেহে যে সকল হরমোনের উপস্থিতি অনুমান করা গেছে কিন্তু এদের সঠিক কার্যপদ্ধতি ও রাসায়নিক গঠন এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি, সে সকল উদ্ভিদ হরমোনকে প্রকল্পিত হরমোন বলে। যেমন-ফ্লোরিজেন, ডরমিন, ভারনালিন ইত্যাদি।

কৃত্রিম হরমোন কী?

রসায়নাগারে প্রস্তুত যে সমস্ত রাসায়নিক পদার্থ প্রাকৃতিক হরমোনের মতো উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটনে সাহায্য করে তাদের কৃত্রিম হরমোন বলে। উদাহরণ: NAA, 2, 4-D; IBA |

উপস্থিতির বিচারে উদ্ভিদ হরমোনের প্রকারভেদ উল্লেখ করো।

উপস্থিতির বিচারে উদ্ভিদ হরমোন দু-প্রকার। যথা-প্রধান হরমোন ও অপ্রধান হরমোন। প্রধান হরমোনগুলি হল যথাক্রমে-অক্সিন, GA, কাইনিন। অপ্রধান হরমোনগুলি হল যথাক্রমে- ABA, ইথিলিন ইত্যাদি।

Leave a Comment