দশম শ্রেণি জীবনবিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায় জীবনের প্রবাহমানতা কোশ বিভাজন ও কোশচক্র ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর

সূচিপত্র

দশম শ্রেণি জীবনবিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায় জীবনের প্রবাহমানতা কোশ বিভাজন ও কোশচক্র ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর
দশম শ্রেণি জীবনবিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায় জীবনের প্রবাহমানতা কোশ বিভাজন ও কোশচক্র ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর

কোশচক্রে নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হওয়ার সঙ্গে মানব দেহে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার সৃষ্টি হওয়ার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করো।

কোশচক্রের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ বিন্দুগুলোতে কোশ বিভাজন নিয়ন্ত্রিত হয়। কোশচক্রের বিভিন্ন বিন্দুতে নিয়ন্ত্রণ বিনষ্ট হলে অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজন ঘটে। যা টিউমার সৃষ্টি করে। এই টিউমার দুপ্রকার-বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট। টিউমার ম্যালিগন্যান্ট হলে তার কোশগুলি রক্ত স্রোতের মাধ্যমে বাহিত হয়ে দেহের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এবং ক্যানসার নামক মারণ ব্যাধি সৃষ্টি করে।

নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের ক্যারিওকাইনোসিসের দশাগুলি শনাক্ত করো। (i) ক্রোমোজোমগুলির কোশের বিষুব অঞ্চল বরাবর অবস্থান ও নির্দিষ্ট নিয়মে সজ্জা, (ii) বেমতত্ত্বর বিলুপ্তি, (iii) নিউক্লিয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসের বিলুপ্তি, (iv) অপত্য ক্রোমোজোমের কোশের বিপরীত মেরুতে গমন।

(i) ক্রোমোজোমগুলির কোশের বিষুব অঞ্চল বরাবর অবস্থান ও নির্দিষ্ট নিয়মে সজ্জা-মেটাফেজ। (ii) বেমতন্ডুর বিলুপ্তি-টেলোফেজ। (iii) নিউক্লিয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসের বিলুপ্তি-প্রোফেজ। (iv) অপত্য ক্রোমোজোমের কোশের বিপরীত মেরুতে গমন-অ্যানাফেজ।

মিয়োসিস কোশবিভাজনের সময় ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাস ও ক্রোমাটিডের খন্ড বিনিময় ঘটে-এই ঘটনা দুটির তাৎপর্য কী কী তা বিশ্লেষণ করো।

(a) ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাস: মিয়োসিসের ফলে ডিপ্লয়েড (2n) মাতৃকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস ঘটিয়ে হ্যাপ্লয়েড (n) জনন কোশ সৃষ্টি হয়। দুটি হ্যাপ্লয়েড জনন কোশ মিলিত হয়ে পুনরায় ডিপ্লয়েড কোশ সৃষ্টি হয়। ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাস না ঘটলে প্রজাতি ক্রোমোজোম সংখ্যা 2n থেকে 4n. 8n. 16n হারে বেড়ে যেত। সুতরাং, মিয়োসিসের ফলে ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাস ঘটে প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা বংশপরম্পরায় ধ্রুবক থাকে।

(b) ক্রোমাটিডের খণ্ডবিনিময়: মিয়োসিসের সময় দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিডের মধ্যে খন্ড বিনিময় ঘটার ফলে জিনের পুনর্বিন্যাস ঘটে।

কোশচক্রের দুটি গুরুত্ব লেখো।

(a) কোশের আকৃতি বৃদ্ধি করে এবং কোশ অঙ্গাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে। (b) পরবর্তী মাইটোসিসের জন্য DNA ও প্রোটিন সংশ্লেষ ঘটায়।

প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা ও জিনগত প্রকরণ সৃষ্টির ক্ষেত্রে মিয়োসিস-এর তাৎপর্য বিবৃত করো।

A. প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক রাখা: যৌন জননের সময় নিষেক এর মাধ্যমে দুটি হ্যাপ্লয়েড জনন কোশ মিলিত হয়ে ডিপ্লয়েড জাইগোট গঠন করে। জাইগোট থেকে অপত্য জীব সৃষ্টি হয়। ফলে কোনও প্রজাতির সমস্ত জীবের ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক থাকে। মিয়োসিস বিভাজন এর মাধ্যমে ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস না ঘটলে প্রজাতির জীবের ক্রোমোজোম সংখ্যা এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে দ্বিগুণ হারে বেড়ে যাবে ও প্রজাতির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

B. জিনগত প্রকরণ সৃষ্টি:
সমসংস্থ ক্রোমোজোমগুলির মধ্যে ক্রসিং ওভার ও জিনের পূর্ণ সংযুক্তির ফলে নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য কোশের সৃষ্টি হয়। ওই প্রকার কোশের মিলনে যে সব জীবের সৃষ্টি হয় তাদের মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্যের সংযোজন বা প্রকরণ সৃষ্টি করে।

নিম্নলিখিত বিষয়-এর উপর ভিত্তি করে অ্যামাইটোসিস-এর দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো। (A) নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম; (B) নিউক্লিয় পর্দা ও বেম তত্ত্ব

A. নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম :নিউক্লিয়াসটি ক্লিভেজ বা ফার্মিং-এর মাধ্যমে মাঝখানে সংকুচিত হয় এবং দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের গঠন করে, এছাড়াও নিউক্লিয়াস বিভাজন-এর সঙ্গে সঙ্গে কোশ পর্দা ও সাইটোপ্লাজমীয় অংশ মাঝ বরাবর বিভাজিত হয়।

B. নিউক্লিয় পর্দা ও বেম তন্তু: এই প্রকার কোশ বিভাজনে নিউক্লিয় পর্দা এবং বেম তত্ত্ব অবলুপ্তি ছাড়াই সরাসরি বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে।

অ্যামাইটোসিস কোশ বিভাজনের দুটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো।

A. এই প্রকার কোশ বিভাজনে মাতৃকোশের নিউক্লিয়াসটি সরাসরি বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং সাইটোপ্লাজম সরাসরি বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে। 

B. এই প্রকার কোশ বিভাজনে ক্রোমোজোমের গঠন, ক্রোমাটিড গঠন, নিউক্লিয় পর্দা, নিউক্লিওলাসের অবলুপ্তি ঘটে না।

কোশ বিভাজনে সেন্ট্রোজোম, মাইক্রোটিউবিউল এবং মাইটোকনড্রিয়ার ভূমিকা তালিকাবদ্ধ করো।

A. সেন্ট্রোজোম: এটি প্রাণী কোশে ক্রোমোজোম বিভাজন-এর জন্য সেন্ট্রাল দুটি অ্যাস্ট্রাল রশ্মি বিচ্ছুরণ-এর সাহায্যে বেমতত্ত্ব গঠন করে।

B. মাইক্রোটিউবিউলস: এটি উদ্ভিদ কোশে ক্রোমোজোম বিভাজন-এর জন্য বেমতত্ত্ব গঠন করে।

C. মাইটোকনড্রিয়া: কোশ বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয়।

কোশ চক্রের G দশায় কী কী ঘটনা ঘটলে কোশটি S দশায় প্রবেশ করতে পারে তা নির্ধারণ করো।

সংখ্যা দ্বিগুণ হতে হবে এবং DNA সংশ্লেষের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক, RNA, নিউক্লিওটাইড, অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ATP-এর সংশ্লেষ ঘটতে হবে।

কোশ বিভাজনে সাহায্যকারী চারটি প্রধান কোশীয় অঙ্গাণু নাম স্মরণ করে লেখো।

কোশ বিভাজনে সাহায্যকারী প্রধান চারটি কোশীয় অঙ্গাণু হল নিউক্লিয়াস, রাইবোজোম, মাইটোকনড্রিয়া, গলগি বস্তু।

কোশ বিভাজন না হলে কী হবে তার ব্যাখ্যা দাও।

কোশ বিভাজন না ঘটলে নিম্নলিখিত ঘটনাগুলো ঘটবে-1. দেহে কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে না ফলে দেহের সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটবে না। 2. ক্ষয়পূরণ ঘটবে না। 3. গ্যামেট সৃষ্টি হবে না বলে যৌন মিলন ঘটবে না এবং জাইগোট সৃষ্টি হবে না। 4. প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক থাকবে না।

কোশচক্রের নিয়ন্ত্রণ বিন্দুগুলিতে নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হলে কী কী ঘটনা ঘটতে পারে তা অনুমান করে লেখো।

কোশচক্রের নিয়ন্ত্রণ বিন্দু গুলিতে নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হলে নিম্নলিখিত ঘটানাগুলো ঘটবে- প্রথমত, RNA, প্রোটিন এবং DNA’র সংশ্লেষ ব্যাহত হবে। দ্বিতীয়ত, ক্রোমোজোমের ঘনীভবন বেমের সজ্জা মেটাফেজ প্লেট গঠনে অ্যানাফেজ চলন নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হবে। তৃতীয়ত, কোশ চক্রের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায় ফলে কোশ অতি দ্রুত বিভাজিত হতে শুরু করে এবং জীবদেহে টিউমার সৃষ্টি হয় যা থেকে ক্যানসার রোগের সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়।

কোশ চক্রের ইন্টারফেজ দশা কীভাবে সংশ্লেষ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত তা বিশ্লেষণ করো।

কোশচক্রের S দশায় DNA সংশ্লেষিত হওয়ায় একে সংশ্লেষ দশা বলা হয়। আর এই দশায় প্রতিটি কোশের DNA রেপ্লিকেশন-এর মাধ্যমে দ্বিগুণ সংখ্যায় গঠিত হয় ফলে মাইটোসিস বিভাজনের ফলে সৃষ্ট অপত্য কোশ মাতৃকোশের সম সংখ্যক ক্রোমোজোম যুক্ত হয় দ্বিতীয়ত হিস্টোন প্রোটিন সংশ্লেষিত হয় যা DNA’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্রোমোজোমের গঠনগত একক নিউক্লিওজোম গঠন করে।

কোশ চক্রের সঙ্গে জীবের সুস্থতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করো।

একটি জীবের সুস্থভাবে বাঁচতে হলে কোশ চক্র নিয়মিতভাবে সম্পন্ন হতে হবে কারণ কোশ চক্রের মাধ্যমে কোশে DNA, RNA প্রোটিন এবং কোশীয় অঙ্গাণুগুলির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে পরবর্তী সময়ে বিভাজনের মাধ্যমে অপত্য কোশে বস্তুর সম বণ্টন সম্ভব হয়। ফলে বিভাজিত কোশগুলোতে কোশীয় উপাদানগুলির সাম্য বজায় থাকে। কিন্তু কোশচক্র অনিয়ন্ত্রিতভাবে সংঘটিত হলে বিভাজন প্রক্রিয়া অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে ফলে টিউমার গঠিত হয় যা পরবর্তী সময়ে ছড়িয়ে পড়ে ম্যালিগন্যান্ট বা ক্ষতিকর ক্যানসার দেখা দেয়।

মাইটোসিস কোশ বিভাজনের একটি তাৎপর্য হল কোশ প্রতিস্থাপন এবং ক্ষয়পূরণ। জীবজগৎ থেকে তোমার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এরকম চারটি উদাহরণ দাও।

মাইটোসিস কোশ বিভাজনের অপর তাৎপর্যগুলি হল- জীবের সামগ্রিক বৃদ্ধি ও পরিশ্রম, পুনরুৎপাদন, ভ্রুণের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটন, প্রজনন ও বংশ বিস্তার।

মাইটোসিস কোশ বিভাজনে নিউক্লিয়াস জলের বিয়োজন ও জলের পুনঃ শোষণের ফলে নিউক্লিয়াসের গঠনে কী কী পরিবর্তন সাধিত হয় তা ভেবে নিয়ে লেখো।

মাইটোসিস কোশ বিভাজনের প্রোফেজ দশায় জলের বিয়োজনের ফলে নিউক্লিয়াস মধ্যস্থ ক্রোমাটিন জালিকাগুলি সুস্পষ্ট এবং ক্রমশ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে ফলস্বরূপ ক্রোমাটিন জালিকা ঘনীভবন এবং কুণ্ডলীকরণের মাধ্যমে স্থূল ক্রোমোজোম গঠিত হয়। অপরদিকে টেলোফেজ দশায় জলের পুনঃশোষণের ফলে নিউক্লিয়াস স্ফীত হয় এবং স্পাইরালাইজেশন পদ্ধতিতে অপত্য ক্রোমোজোমগুলির পাক খুলে যায় এবং ক্রোমাটিন জালিকা পুনঃগঠিত হয়।

টেলোফেজ দশায় নিম্নলিখিত উপাদানের ক্ষেত্রে কী কী ঘটনা ঘটে তা মূল্যায়ন করো। নিউক্লিয় জালিকা, নিউক্লিয় পর্দা, বেম তত্ত্ব, নিউক্লিওলাস।

টেলোফেজ দশায় নিউক্লিয় জালিকা, নিউক্লিয় পর্দা এবং নিউক্লিওলাসের পুনঃআবির্ভাব ঘটে কিন্তু বেম তত্ত্বর বিলুপ্তি ঘটে।

মিয়োসিস কোশ বিভাজনের ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস পাওয়া এবং ক্রোমাটিডের মধ্যে খণ্ড বিনিময়ের একটি করে তাৎপর্য লেখো।

মিয়োসিস কোশ বিভাজন: ডিপ্লয়েড জনন মাতৃকোশ মিয়োসিস বিভাজনের ফলে চারটি হ্যাপ্লয়েড জনন কোশ উৎপন্ন হয়। যৌন জননের সময় দুটি হ্যাপ্লয়েড জনন কোশের মিলনের ফলে পুনরায় ডিপ্লয়েড জাইগোট গঠিত হয়। এই জাইগোটটি বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ জীব সৃষ্টি করে অর্থাৎ বংশপরম্পরায় প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক থাকে অপরদিকে মিয়োসিস বিভাজনের সময় সমস্ত ক্রোমোজোমের সিস্টার ক্রোমাটিড দুটির মধ্যে ক্রসিংওভার ও রিকম্বিনেশনের ফলে জিনের আদানপ্রদান ঘটে। এর ফলে উৎপন্ন গ্যামেটের পিতা-মাতার বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণ ঘটে ফলে নতুন বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব দেখা যায়।

মাইটোসিসের দীর্ঘস্থায়ী দশায় নিউক্লিয়াসের কী কী পরিবর্তন ঘটে তা তালিকাবদ্ধ করো।

মাইটোসিস কোশ বিভাজনের প্রোফেজ দশাটি হলো সবথেকে দীর্ঘস্থায়ী দশা এই দশায় নিম্নলিখিত ঘটনাগুলি দেখা যায়। নিউক্লিয়াসের নিউক্লিয় পর্দার অবলুপ্তি হতে শুরু করে, নিউক্লিওলাস অবলুপ্তি হয়, নিউক্লিয় জালিকা স্থূল হয়ে ক্রোমোজোম গঠন করে এবং ক্রোমোজোমগুলি থেকে ক্রোমাটিড গঠিত হয়।

অ্যানাফেজ দশায় ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিডে রূপান্তরের পর যে যে ঘটনাগুলি ঘটে তা ক্রমানুসারে লেখো।

এই দশার শুরুতে ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয় ফলে একটি করে সেন্ট্রোমিয়ার ও ক্রোমাটিড সহ দুটি অপত্য ক্রোমোজোম গঠিত হয়। অপত্য ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার দুটির মধ্যে ও ক্রোমোজোমাল তন্তুগুলির সংকোচন এবং ইন্টারনাল তন্তুর প্রসারণের ফলে অপত্য ক্রোমোজোম দুটি দুই মেরুর দিকে চলতে থাকে ফলে অ্যানাফেজীয় চলন দেখা যায়।

কোশ বিভাজনে কোশ চক্রের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

কোনো কোশের কোশ বিভাজন হবে কী হবে না তা নির্ভর করে কোশ- চক্রের ওপর। কোশচক্রের এই নিয়ন্ত্রণ ত্রুটিপূর্ণ হলে কোশ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয় যা পরবর্তীকালে টিউমার সৃষ্টি করে এই টিউমার পরবর্তীকালে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার রূপ ধারণ করে। যা থেকে ক্যানসার রোগ সৃষ্টি হতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ে কোনো কোশচক্র স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কোনো কোশচক্র যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ চলে, তারপর বন্ধ হয়ে যায়, আবার প্রয়োজন মতো চালু হতে পারে।

প্রোফেজ এবং টেলোফেজের ক্ষেত্রে বিপরীতধর্মী পরিবর্তন ঘটে’-এরূপ দুটি বিপরীতধর্মী পরিবর্তন লেখো।

‘প্রোফেজ ও টেলোফেজের ক্ষেত্রে বিপরীতধর্মী পরিবর্তন ঘটে’ এরূপ দুটি বিপরীতধর্মী পরিবর্তন হল:

(i) প্রোফেজ দশার শুরুতে নিউক্লিয়াসের জল বিয়োজনের ফলে ক্রোমাটিন তত্ত্ব কুণ্ডলীকৃত হয় এবং ঘনীভবন ঘটে একে স্পাইরিলাইজেশন বলে। অপরপক্ষে টেলোফেজ দশায় অপত্য ক্রোমোজোমগুলির ঘনীভবন দূর হয় এবং ক্রোমোজোমের পাক খুলে ক্রোমাটিন তন্তুর জট সৃষ্টি করে, এই পদ্ধতিকে ডিস্পাইরিলাইজেশন বলে।

(ii) প্রোফেজ দশায় নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয়পর্দার অবলুপ্তি ঘটে কিন্তু টেলোফেজ দশায় নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয়পর্দার পুনঃআবির্ভাব ঘটে।

ক্রোমোজোম কাকে বলে?

কোশের নিউক্লিয়াসমধ্যস্থ নিউক্লিয়জালিকা থেকে উৎপন্ন নিউক্লিয় প্রোটিন দিয়ে গঠিত, স্বপ্রজননশীল যে সূত্রাকার অংশ জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যগুলি বহন করে এবং প্রজাতির পরিব্যক্তি, প্রকরণ ও বিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে তাকে ক্রোমোজোম বলে।

জিন কাকে বলে?

ক্রোমোজোমে অবস্থিত DNA-এর যে নির্দিষ্ট অংশ প্রোটিন সংশ্লেষের সংকেত বহন করে এবং জীবের বিভিন্ন চরিত্র প্রকাশে সাহায্য করে তাকে জিন বলে। DNA-র বিশেষ বিশেষ অংশই হল জিন।

জিনের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

(i) জিন ক্রোমোজোমে অবস্থিত এবং ক্রোমোজোমের অবিচ্ছিন্ন অংশ। (ii) জিন মুখ্যত DNA দিয়ে গঠিত (ভাইরাসে RNA জিনরূপে কাজ করে)।

অটোজোম কাকে বলে? মানুষের কোশে অটোজোমের সংখ্যা কত?

যে ক্রোমোজোমগুলি দেহগঠনে অংশ নেয় তাদের অটোজোম বলে। মানুষের কোশে অটোজোমের সংখ্যা হল 22 জোড়া বা 44টি।

সেক্স ক্রোমোজোম কাকে বলে? পুরুষ ও স্ত্রীদের সেক্স ক্রোমোজোম কীভাবে প্রকাশ করা হয়?

22 জোড়া অটোজোম ছাড়া বাকি যে একজোড়া ক্রোমোজোম লিঙ্গ নির্ধারণে সাহায্য করে তাদের সেক্স ক্রোমোজোম বলে। পুরুষদের সেক্স ক্রোমোজোমকে XY এবং স্ত্রীলোকদের সেক্স ক্রোমোজোমকে XX রূপে প্রকাশ করা হয়।

সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে ক্রোমোজোম কত প্রকারের হয়?

সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে ক্রোমোজোম চার প্রকারের। যথা-

(i) মেটাসেন্ট্রিক, অর্থাৎ সেন্ট্রোমিয়ার যখন ক্রোমোজোমের মাঝবরাবর স্থানে থাকে।

(ii) সাব মেটাসেন্ট্রিক, অর্থাৎ সেন্ট্রোমিয়ার যখন ক্রোমোজোমের মাঝখানের নিকটবর্তী কোনো স্থানে অবস্থান করে।

(iii) অ্যাক্রোসেন্ট্রিক, অর্থাৎ সেন্ট্রোমিয়ার যখন ক্রোমোজোমের শেষ প্রান্তের কাছাকাছি অঞ্চলে থাকে।

(iv) টেলোসেন্ট্রিক, অর্থাৎ সেন্ট্রোমিয়ার যখন ক্রোমোজোমের একেবারে প্রান্তদেশে থাকে।

মুখ্য খাঁজ বা প্রাথমিক খাঁজ ও গৌণ খাঁজ কাকে বলে?

ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার সংলগ্ন অংশে যে খাঁজ থাকে তাকে মুখ্য খাঁজ বা প্রাথমিক খাঁজ বলে এবং মুখ্য খাঁজ ছাড়া আর কোনো খাঁজ থাকলে তাকে গৌণ খাঁজ বলে।

টেলোমিয়ার কাকে বলে?

ক্রোমোজোমের দুই প্রান্তদেশকে টেলোমিয়ার বলে।

স্যাটেলাইট কাকে বলে?

ক্রোমোজোমের গৌণ খাঁজ যখন টেলোমিয়ারের নিকটে অবস্থান করে তখন টেলোমিয়ারটিকে ফোলা বাল্বের মতো দেখায়। একে স্যাটেলাইট বলে। স্যাটেলাইটযুক্ত ক্রোমোজোমকে স্যাট ক্রোমোজোম বলে।

ক্রোমোজোমে কী কী প্রোটিন থাকে?

ক্রোমোজোমে দু-রকমের প্রোটিন থাকে। যথা-হিস্টোন (ক্ষারীয়) এবং নন-হিস্টোন (আম্লিক)।

ক্রোমোজোমের হিস্টোন অর্থাৎ ক্ষারীয় প্রোটিনে কী কী অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে?

ক্রোমোজোমের ক্ষারীয় প্রোটিনের অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলি হল- আর্জিনিন, হিস্টিডিন ও লাইসিন।

ক্রোমোজোমের নন-হিস্টোন বা আম্লিক প্রোটিনে কী কী অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে?

ক্রোমোজোমের আম্লিক প্রোটিনে উপস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড হল-ট্রিপটোফ্যান ও টাইরোসিন।

ক্রোমোজোমে কী কী নিউক্লিক অ্যাসিড থাকে?

ক্রোমোজোমে দু-রকমের নিউক্লিক অ্যাসিড থাকে, যথা- DNA ও RNA।

DNA কাকে বলে?

ডি-অক্সিরাইবোজ শর্করা দিয়ে গঠিত স্বপ্রজননশীল, পরিব্যক্তিক্ষম যে নিউক্লিক অ্যাসিড জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য বহন নিয়ন্ত্রণ করে তাকে DNA বলে।

RNA কাকে বলে?

কোশে প্রোটিন সংশ্লেষে সহায়ক একতন্ত্রী নিউক্লিক অ্যাসিডকে RNA বলে।

RNA কত প্রকারের?

RNA প্রধানত দু-প্রকারের, যথা-জেনেটিক RNA ও নন জেনেটিক RNA। নন জেনেটিক RNA আবার তিন প্রকারের, যথা-t-RNA, m-RNA, r-RNA

ইউক্রোমাটিন কাকে বলে?

যে ক্রোমাটিন খুব সূক্ষ্ম, স্থির নিউক্লিয়াসে প্রসারিত অবস্থায় থাকে এবং রঞ্জকে হালকা রং ধারণ করে, তাদের ইউক্রোমাটিন বলে। এই প্রকার ক্রোমাটিন সক্রিয় জিন বহন করে।

হেটারোক্রোমাটিন কাকে বলে?

যে ক্রোমাটিন অপেক্ষাকৃত পুরু, স্থির নিউক্লিয়াসে কুণ্ডলীকৃত অবস্থায় থাকে এবং রঞ্জকে গাঢ় রং ধারণ করে তাদের হেটারোক্রোমাটিন বলে। এই ক্রোমাটিন সক্রিয় জিন বহন করে না।

কোশ বিভাজন কালে প্রাণীকোশ ও উদ্ভিদকোশে বেম গঠিত হয় কোন্ কোশ অঙ্গাণু থেকে?

কোশ বিভাজনকালে প্রাণীকোশে বেম গঠিত হয় কোশ অঙ্গাণু সেন্ট্রোজোম থেকে এবং উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে বেম গঠিত হয় মাইক্রোটিউবিউল থেকে।

Leave a Comment