তারপর যুদ্ধ এল- কোন ঘটনার পর যুদ্ধ এল? যুদ্ধের ফলশ্রুতি কী হয়েছিল?

'তারপর যুদ্ধ এল'- কোন ঘটনার পর যুদ্ধ এল? যুদ্ধের ফলশ্রুতি কী হয়েছিল
‘তারপর যুদ্ধ এল’- কোন ঘটনার পর যুদ্ধ এল? যুদ্ধের ফলশ্রুতি কী হয়েছিল?

যুদ্ধপূর্ব ঘটনা

পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতার কথক তার বাসভূমি ছেড়ে চলে যাওয়ার বেশ কয়েক বছর পর দেশে যুদ্ধ দেখা দিল। প্রিয় নারীকে দরজায় অপেক্ষায় রেখে কথক চলে বিকাশ গিয়েছিলেন দূরে। আর কখনও ফেরেননি। এর মধ্যে সাধারণ স্বাভাবিকভাবে সময় অতিবাহিত হতে থাকে-

‘একটা কুকুর চলে গেল, 
হেঁটে গেল গির্জার এক নান 
একটা সপ্তাহ আর একটা বছর কেটে গেল।’ 
বৃষ্টির জলে ধুয়ে গেল কথকের পায়ের দাগ, তার চলে যাওয়ার পথে ঘাস জন্মাল। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির অপেক্ষা দীর্ঘতর হল। বছরগুলো পাথরের মতো ভারী হয়ে নেমে এল মাথার উপর। এইসব ঘটনার পর একদিন যুদ্ধ শুরু হল।

যুদ্ধের ফলশ্রুতি

মানুষের শান্ত জীবনে ভয়াবহ যুদ্ধ ‘রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো’ নেমে এল। সমতলে যেখানে মানুষের বসতি, সেখানে আগুন ধরে গেল। সর্বগ্রাসী যুদ্ধের আগ্রাসন থেকে দেবতারাও নিস্তার পেল না। মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে ছিটকে পড়ল দেবতাদের মূর্তিগুলো। মানুষের দেববিশ্বাস ভঙ্গ হল। প্রাণের প্রতীক শিশুরা এবং বস্তু তথা আশ্রয়ের প্রতীক বাড়িরা খুন হল। কথকের স্মৃতি-ঘেরা মিষ্টি বাড়ি, ঝুলন্ত বিছানায় ঘুমিয়ে থাকার বারান্দা, গোলাপি গাছ, চিমনি, জলতরঙ্গ সব চূর্ণ হয়ে গেল। শহর জুড়ে পড়ে রইল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, ভাঙা মূর্তি, রক্তের কালো দাগ। সর্বত্র কেবল রক্তপাত, ধ্বংস আর মৃত্যুর ছবি। আলোচ্য কবিতায় এভাবেই যুদ্ধের বীভৎসতা প্রকাশ পেয়েছে। যুদ্ধের ফলশ্রুতি এমনই ধ্বংসাত্মক, বীভৎস হয়। তবু জীবনকে, মানবতাকে, হৃদয়ের ভালোবাসাকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করা যায় না। ধ্বংসের মধ্যেও জীবনের প্রতীক হয়ে রয়ে যায় মৃত্যুঞ্জয়ী সেই মেয়েটি। কথকের ফিরে আসার প্রত্যাশায় সে দাঁড়িয়ে থাকে-

‘আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়।’

Leave a Comment