ডিরোজিও-র নেতৃত্বাধীন নব্যবঙ্গ আন্দোলনের বিবরণ দাও

ডিরোজিও-র নেতৃত্বাধীন নব্যবঙ্গ আন্দোলনের বিবরণ দাও

ডিরোজিও-র নেতৃত্বাধীন নব্যবঙ্গ আন্দোলনের বিবরণ দাও
ডিরোজিও-র নেতৃত্বাধীন নব্যবঙ্গ আন্দোলনের বিবরণ দাও।

নব্যবঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল

ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন হিন্দু কলেজের তরুণ শিক্ষক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও। তাঁর নেতৃত্বেই গঠিত হয় নব্যবঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল দল। ডিরোজিও-র একান্ত অনুগামী সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- রামতনু লাহিড়ী, রামগোপাল ঘোষ, প্যারীচাঁদ মিত্র, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রসিককৃষ্ণ মল্লিক প্রমুখ। পাশ্চাত্যের শিক্ষা, যুক্তিবাদ ও সামাজিক চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে এঁরা হিন্দুদের প্রচলিত সমস্ত সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতি এবং কুসংস্কারের বিরোধিতা করেন। নব্যবঙ্গীয়দের এই নীতিবাদী কার্যকলাপই নব্যবঙ্গ আন্দোলন নামে পরিচিত।

নব্যবঙ্গ তথা ডিরোজিও-র নেতৃত্বাধীন নব্যবঙ্গ আন্দোলনের বিবরণ

ডিরোজিও-র মতাদর্শ ও ভাবধারার প্রসার

একাধারে ছাত্রদের বন্ধু ও পথপ্রদর্শক ডিরোজিও হিন্দুসমাজে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস, কুসংস্কার, পৌত্তলিকতা, জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। ক্রমশ নব্যবঙ্গীয়রা হিন্দুধর্ম ও সমাজের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন এবং পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ শুরু করেন।

সংগঠন ও পত্র-পত্রিকা প্রকাশ

স্বাধীন চিন্তা ও যুক্তিবাদের প্রসার ঘটানোর জন্য ডিরোজিও প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন (১৮২৮ খ্রি.) – যেখানে ঈশ্বরের অস্তিত্ব, পৌত্তলিকতা, পুরোহিততন্ত্র, সামাজিক কুসংস্কার প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা ও বিতর্ক চলত। তাঁরা পার্থেনন পত্রিকার মাধ্যমে নারীশিক্ষা, নারীস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ব্যাপারে প্রবন্ধ ছাপাতে থাকেন। এ ছাড়াও ক্যালাইডোস্কোপ পত্রিকাতে তাঁরা ভারত সরকারের বিরোধিতা করেন। ডিরোজিও রচিত ফকির অফ জঙ্গিরা এবং To India- My Native land (ভারতবর্ষ- আমার স্বদেশের প্রতি) গ্রন্থ দুটিতে তাঁর দেশপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়।

হিন্দুধর্মের বিরোধিতা

ডিরোজিও প্রতিষ্ঠিত নব্যবঙ্গ দল রক্ষণশীল হিন্দুধর্ম ও সমাজকে আক্রমণ করেন। ডিরোজিও-র এই হিন্দুধর্ম-বিরোধী সংস্কারবাদী আন্দোলন সমাজে তীব্র আলোড়ন ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।

নব্যবঙ্গীয়দের কার্যকলাপ তৎকালীন হিন্দুসমাজে সাড়া ফেলে দিলেও তাঁদের হিন্দুধর্ম ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত নেতিবাচক কর্মসূচি, শহরকেন্দ্রিকতা, দরিদ্র শ্রেণির প্রতি অবহেলা, সীমাহীন প্রগতিশীলতা সমাজের সমস্ত স্তরকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। তাই এই আন্দোলন শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল।

আরও পড়ুন – স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান ও শেখ মুজিবর রহমানের ভূমিকা আলোচনা করো

Leave a Comment