ট্রুম্যান নীতি কি

ট্রুম্যান নীতি কি

ট্রুম্যান নীতি কী
ট্রুম্যান নীতি কি?

ট্রুম্যান নীতি

সোভিয়েত রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ মার্কিন কংগ্রেসে রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান ঘোষণা করেছিলেন- যেসব জাতি সশস্ত্র সংখ্যালঘুদের আক্রমণ বা বিদেশি রাষ্ট্রের আক্রমণ প্রতিরোধে নিয়োজিত তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক ও সামরিক সাহায্য প্রদান করবে- এই নীতিই ট্রুম্যান নীতি (Truman Doctrine) নামে পরিচিত। এখানে ট্রুম্যান সশস্ত্র সংখ্যালঘু বলতে সোভিয়েত রাশিয়াকে বুঝিয়েছেন।

ট্রুম্যান নীতির উদ্দেশ্যসমূহ

ট্রুম্যান নীতির অন্যতম উদ্দেশ্যগুলি হল-
  • রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পর্বে ইউরোপে ক্রমবর্ধমান সাম্যবাদের প্রভাব রোধ করতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
  • আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে মার্কিন অস্ত্র ও শিল্পোৎপাদিত দ্রব্য বিক্রি করা।
  • মার্কিন শিল্প ও ব্যাবসাবাণিজ্যের পুনরুজ্জীবন ঘটানো ইত্যাদি।

ট্রুম্যান নীতির পটভূমি

মার্কিন কূটনীতিবিদ জর্জ এফ কেন্নান প্রচার করেন যে, মার্কিন সরকারের উচিত যেসব অঞ্চলে সোভিয়েত প্রভাব রয়েছে তাকে সেখানেই সীমাবদ্ধ রাখা। এই নীতি বেষ্টনী নীতি নামে পরিচিত। সোভিয়েত-বিরোধী এই সকল প্রচারই ট্রুম্যান নীতির পটভূমি তৈরি করে দিয়েছিল।

ট্রুম্যান নীতির মূল বক্তব্যসমূহ

  • বিশ্বের যে-কোনো অঞ্চলে কোনো দেশের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দখলদারির কারণে যদি নিরাপত্তা এবং শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয় তা প্রতিরোধ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করবে।
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা কমিউনিজম-এর প্রভাব প্রতিরোধ করতে বদ্ধপরিকর।
  • ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইটালি, গ্রিস ইত্যাদি রাষ্ট্রের আর্থিক ও সামরিক দুর্বলতার কারণে ইউরোপের যে-কোনো অঞ্চলে শূন্যতার সৃষ্টি হলে, সেই শূন্যতা পুরণের দায়িত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পালন করবে।
  • কোনো ক্ষেত্রে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তই কার্যকর হবে।

ট্রুম্যান নীতির প্রয়োগ

ট্রুম্যান মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদনক্রমে গ্রিস ও তুরস্ককে ৪০ কোটি ডলার আর্থিক সাহায্য দান করেন। সাম্যবাদ প্রতিরোধের জন্য অন্যান্য দেশকেও আর্থিক ও সামরিক সাহায্য দেওয়া হয়। ইরান মার্কিন সাহায্য লাভ করে।

মূল্যায়ন

  • ডি এফ ফ্লেমিং বলেছেন, ট্রুম্যান নীতি ঘোষণার ফলে এমন ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল যে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চাপ ও পালটা চাপ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হবে না।
  • বিশ্বে আপাতত প্রত্যক্ষ যুদ্ধের অবসান হলেও ট্রুম্যান নীতির ফলে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট ও রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটের মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধ শুরু হয়।

আরও পড়ুন – বিংশ শতকে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের কারণ গুলি আলোচনা করো

FAQs on – ট্রুম্যান নীতি কি

ট্রুম্যান নীতি কী?
সোভিয়েত রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ মার্কিন কংগ্রেসে রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান ঘোষণা করেছিলেন- যেসব জাতি সশস্ত্র সংখ্যালঘুদের আক্রমণ বা বিদেশি রাষ্ট্রের আক্রমণ প্রতিরোধে নিয়োজিত তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক ও সামরিক সাহায্য প্রদান করবে- এই নীতিই ট্রুম্যান নীতি (Truman Doctrine) নামে পরিচিত।
ট্রুম্যান নীতি কবে ঘোষিত হয়?
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ।
ট্রুম্যান কে ছিলেন?
মার্কিন রাষ্ট্রপতি।

Leave a Comment