টীকা লেখো ফ্রাঙ্কফোর্ট-এর সন্ধি

টীকা লেখো: ফ্রাঙ্কফোর্ট-এর সন্ধি
টীকা লেখো: ফ্রাঙ্কফোর্ট-এর সন্ধি।

ভূমিকা

স্যাডোয়ার যুদ্ধে প্রাশিয়ার জয়লাভ প্রতিবেশী দেশ ফ্রান্স ভালোভাবে মেনে নেয়নি। ফলে ফ্রান্সের সঙ্গে প্রাশিয়ার যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুলাই ফ্রান্স প্রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু সেডানের যুদ্ধে ফরাসি বাহিনী প্রাশিয়ার কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। এরপর ফ্রান্স প্রাশিয়ার সঙ্গে ফ্রাঙ্কফোর্টের সন্ধি (১০ মে, ১৮৭১ খ্রি.) স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়।

ফ্রাঙ্কফোর্ট সন্ধির গুরুত্ব

ঐক্যবদ্ধ জার্মানির প্রতিষ্ঠা: প্রাশিয়ার নেতৃত্বে জার্মানি একটি ঐক্যবদ্ধ দেশে পরিণত হয় এবং প্রাশিয়ার রাজা প্রথম ফ্রেডারিক উইলিয়াম ঐক্যবদ্ধ জার্মানির সম্রাট বা ‘কাইজার’ বলে ঘোষিত হন। বিসমার্ক নতুন জার্মান রাষ্ট্রের চ্যান্সেলার হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেন।

জার্মানির মর্যাদা বৃদ্ধি: বিসমার্ক ফ্রান্সকে সেডানের যুদ্ধে পরাজিত করলে এবং ফ্রান্স ফ্রাঙ্কফোর্ট সন্ধি করতে রাজি হলে প্রাশিয়া তথা জার্মানির মর্যাদা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া ইউরোপের স্নায়ুকেন্দ্র ভিয়েনা থেকে বার্লিনে স্থানান্তরিত হয়।

জার্মানির লাভ: ফ্রাঙ্কফোর্টের সন্ধির শর্ত অনুসারে ফ্রান্স প্রাশিয়াকে মেইজ ও আলসাস-লোরেন অঞ্চল ছেড়ে দিতে এবং প্রচুর আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়। অর্থাৎ ফ্রাঙ্কফোর্টের সন্ধির ফলশ্রুতিতে জার্মানির রাজ্যেও অর্থলাভ ঘটে।

ঐক্যবদ্ধ ইটালি :
ফ্রাঙ্কফোর্টের সন্ধি অনুসারে ফ্রান্স রোম থেকে ফরাসি সেনা ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এর ফলে রোম ইটালির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ঐক্যবদ্ধ ইটালি রাষ্ট্রের রাজধানী হয় রোম।

দ্বিতীয় ফরাসি সাম্রাজ্যের অবসান :
ফ্রান্সের পক্ষে এই সন্ধি সন্তোষজনক ছিল না, কারণ যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে দ্বিতীয় ফরাসি সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে এবং ফ্রান্সে প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃস্থাপিত হয়।

মূল্যায়ন

সবদিক থেকে বিচার করে বলা যায়, ফ্রাঙ্কফোর্টের সন্ধি ছিল আধুনিক ইউরোপের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর সূত্র ধরে একদিকে যেমন ইটালি ও জার্মানির দীর্ঘদিনের জাতীয় ঐক্যসাধনের প্রক্রিয়া সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেছিল, অন্যদিকে ইউরোপীয় রাজনীতির পরবর্তীকালের গতিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করেছিল।

Leave a Comment