টীকা লেখো: ন্যায্য অধিকার নীতি। |
ভূমিকা
ন্যায্য অধিকার নীতির উদ্দেশ্য
ন্যায্য অধিকার নীতির প্রয়োগ
ইটালি: ন্যায্য অধিকার নীতি প্রয়োগ করে উত্তর-ইটালিতে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয় এবং দক্ষিণ-ইটালিকে আগের সমস্ত রাজ্যে আবার বিভক্ত করে পূর্বতন রাজপরিবারগুলিকেই সিংহাসন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পোপ আবার তাঁর মধ্য-ইটালির রাজ্য ফিরে পান।
জার্মানি: জার্মানির পরও অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। অস্ট্রিয়ার মেটারনিখ এবং ফ্রান্সের ট্যালিরান্ড-এই দুজনেই ঐক্যবদ্ধ জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র গঠনের পক্ষপাতী ছিলেন না।
ফ্রান্স: ফ্রান্সের সঙ্গে প্যারিসের দ্বিতীয় সন্ধি অনুসারে ফ্রান্সের সিংহাসনে বুরবোঁ রাজবংশকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়।
হল্যান্ড ও স্পেন: ন্যায্য অধিকার নীতি অনুসরণ করে হল্যান্ডের সিংহাসনে অরেঞ্জ বংশকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়। স্পেনে বুরবোঁ বংশের শাখাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়। এ ছাড়াও এই নীতি অনুসরণ করে সিসিলি নেপলস্-এ বুরবোঁ রাজবংশ, সার্ডিনিয়া ও পিডমন্টে স্যাভয় বংশ এবং মধ্য ইটালিতে পোপের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
ঐতিহাসিক নিদর্শন ফেরত : ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বিভিন্ন দেশ থেকে যে-সমস্ত মূল্যবান ঐতিহাসিক নির্দশন ফ্রান্সে এনেছিলেন ন্যায্য অধিকার নীতি অনুযায়ী ফ্রান্স সেগুলিকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়। ন্যায্য অধিকার নীতি সন্ধিকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে এই নীতিকে অগ্রাহ্য করেন। ইতালির ভেনিস ও জেনোয়াতে যে প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নেপোলিয়নের আগে চালু ছিল তা তাঁরা ফিরিয়ে দেননি। মধ্য জার্মানির রাজবংশগুলিকেও ন্যায্য অধিকার অনুযায়ী ফিরিয়ে আনা হয়নি। জেনোয়াকে স্যাভয় রাজবংশের হাতে দেওয়া হয়নি। পোল্যান্ডকে ব্যবচ্ছেদ করা হয়। জাতীয়তাবাদকে উপেক্ষা করায় ভিয়েনা চুক্তি স্থায়ী হয়নি। ভিয়েনা চুক্তির দ্বারা ইউরোপের যে রাজনৈতিক মানচিত্র রচিত হয় তা অল্পদিনের মধ্যেই ছেঁড়া কাগজে পরিণত হয়।
মূল্যায়ন
অসামঞ্জস্যপূর্ণ : স্যাক্সনির একাংশ প্রাশিয়াকে দান, নরওয়েকে সুইডেনের অন্তর্ভুক্তিকরণ, বেলজিয়ামকে হল্যান্ডের সঙ্গে সংযুক্তকরণ প্রভৃতি ন্যায্য অধিকার নীতির বিরোধী ছিল।
স্বার্থ সংরক্ষণ: ন্যায্য অধিকার নীতি বাস্তবে হয়ে উঠেছিল ইউরোপের বড়ো রাষ্ট্রগুলির স্বার্থ সংরক্ষণের রাজনৈতিক হাতিয়ার, যার দ্বারা তাঁরা ফরাসি বিপ্লবের পূর্ববর্তী স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। পরিশেষে বলা যায় ন্যায্য অধিকার নীতি সমালোচিত হলেও ইউরোপে দীর্ঘকাল (৪০ বছর) শান্তি স্থাপন করতে এই নীতি অনস্বীকার্য।