টাকা লেখো: ভিয়েনা সম্মেলনের শক্তিসাম্য নীতি। |
ভূমিকা
ইউরোপের পুনর্গঠন, পুনর্বণ্টন, রাজনৈতিক ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন ও ক্ষতবিক্ষত ইউরোপে নিরবচ্ছিন্ন শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আহূত ভিয়েনা সম্মেলনে মূলত তিনটি নীতি গৃহীত হয়- (১) ন্যায্য অধিকার (২) ক্ষতিপূরণ (৩) শক্তিসাম্য।
শক্তিসাম্য
১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের ভিয়েনা বন্দোবস্ত ও ইউরোপীয় নিরবিচ্ছিন্ন শান্তি বজায় রাখার জন্য, ফ্রান্সের শক্তি বৃদ্ধি প্রতিরোধ করার জন্য, আন্তর্জাতিক স্থিতি বজায় রাখার স্বার্থে ইউরোপের বৃহৎ শক্তিবর্গ যে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিল সেটি শক্তিসাম্য নামে পরিচিত।
উদ্দেশ্য
(১) আন্তর্জাতিক কলহ যাতে যুদ্ধ বা বিপ্লবে পরিণত না হতে পারে (২) আন্তর্জাতিক শান্তি বজায় রাখা (৩) ফ্রান্স যাতে ভবিষ্যতে আর কোনোদিন শক্তি সঞ্চয় করে ইউরোপের কোনো রাষ্ট্রকে আক্রমণ করতে না পারে ইউরোপের শান্তি নষ্ট করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা (৪) বিজয়ী শক্তিবর্গ (প্রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, রাশিয়া, ইংল্যান্ড) যাতে একে অপরের থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠতে না পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
প্রয়োজনীয়তা
ভিয়েনার প্রতিনিধিবর্গ বিশেষত নেতৃবৃন্দের মধ্যে সন্দেহ, বিদ্বেষ এবং পরস্পর বিরোধী স্বার্থবোধ থেকে ইউরোপকে রক্ষা করার জন্যই শক্তিসাম্য নীতি প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল।
শক্তিসাম্য নীতির প্রয়োগ
ফ্রান্স যাতে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে এবং ইউরোপীয় কোনো একটি দেশ অধিক শক্তি সঞ্চয় করতে না পারে সেজন্য নিম্নলিখিত নীতিগুলির প্রয়োগ করা হয় (১) ফ্রান্সের সৈন্যদল ভেঙে গিয়ে পাঁচ বছরের জন্য সেখানে মিত্র সৈন্য রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এই সেনাদলের ব্যয়ভার ফ্রান্সের ওপর দেওয়া হয়। (২) ফ্রান্সের সীমান্তকে বিপ্লবের (ফরাসি বিপ্লব) আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। (৩) ফ্রান্সের প্রতিবেশী দেশ সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী রাজ্যগুলির শক্তিবৃদ্ধি করে ফ্রান্সের চারধারে ব্যূহ তৈরি করা হয়। (৪) ফ্রান্সের পূর্ব সীমান্তে রাইন অঞ্চলকে জার্মানির সঙ্গে যুক্ত করে ফ্রান্স যাতে পূর্বদিকে কোনোভাবে এগোতে না পারে তার ব্যবস্থা করা হয়। (৫) একইভাবে দক্ষিণদিকে ফ্রান্সের প্রতিরোধ করার জন্য সার্ডিনিয়ার সঙ্গে জেনোয়াকে যুক্ত করা হয়। (৬) ফ্রান্সের উত্তর পূর্বে লাস্কেমবার্গ ও বেলজিয়ামকে হল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। দক্ষিণপূর্বে ফ্রান্সের তিনটি দেশকে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত করে ফ্রান্সের চারধারে একটি রাষ্ট্র-শৃঙ্খল তৈরি করছেন। (৭) ফ্রান্সকে ৭০ কোটি ফ্রাঙ্ক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা হয় এবং নেপোলিয়ন কর্তৃক বিদেশ থেকে লুণ্ঠিত শিল্প-সম্ভার ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
শক্তিসাম্য রক্ষা-প্রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, রাশিয়াকে ক্ষতিপূরণ এমনভাবে প্রদান করা হয়েছিল যাতে একটি দেশ অপর একটি দেশের থেকে শক্তিশালী না হয়ে উঠতে পারে-এই রূপে শক্তিসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা হয়।
উপসংহার
ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত ব্যবস্থার রক্ষা করা ছিল শক্তিসাম্য। এই নীতির মাধ্যমে একদিকে যেমন ইউরোপের ভবিষ্যৎ যুদ্ধকে এড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে অন্যদিকে প্রায় ৪০ বছর ইউরোপে নিরবচ্ছিন্ন শান্তি স্থাপিত হয়েছে।