জীববিদ্যার সঙ্গে বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাগুলি কীভাবে সংযুক্ত তা আলোচনা করো

জীববিদ্যার সঙ্গে বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাগুলি কীভাবে সংযুক্ত তা আলোচনা করো
জীববিদ্যার সঙ্গে বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাগুলি কীভাবে সংযুক্ত তা আলোচনা করো।
অতীতে জীববিদ্যা জীবের বাহ্যিক, অভ্যন্তরীণ গঠন, শারীরবৃত্তীয় কাজের বিবরণ দিত এবং তাদের মধ্যে সাদৃশ্য, বৈসাদৃশ্যের ভিত্তিতে শ্রেণিবিন্যাসগত তথ্য সরবরাহ করত। কিন্তু – বর্তমানে জীববিদ্যার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে জীবজগতের আণবিক স্তরের গঠন, কাজ প্রভৃতি মানুষের সঠিকভাবে জানার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এই কারণে জীববিদ্যার সঙ্গে অন্যান্য শাখাগুলির সমন্বয় ঘটিয়ে বহু নতুন শাখার সৃষ্টি করা হয়েছে। সেগুলি সম্বন্ধে আলোচনা করা হল-

(i) জীবরসায়নবিদ্যা (Biochemistry) : জীববিদ্যার সঙ্গে রসায়নবিদ্যার সংযুক্তি ঘটিয়ে জীবরসায়নবিদ্যা নামক শাখা গড়ে তোলা হয়েছে। জীবদেহের গঠনগত বিভিন্ন উপাদান ও তাদের কার্যপদ্ধতি এই শাখায় আলোচিত হয়।

(ii) জীবপদার্থবিদ্যা (Biophysics) : জীববিদ্যার সঙ্গে পদার্থবিদ্যার সমন্বয়ে গঠিত জীবপদার্থবিদ্যা শাখাতে জীববিদ্যার অধ্যয়নে ব্যবহৃত নানা যন্ত্রপাতি ও তাদের কার্যপদ্ধতি (যেমন- মাইক্রোস্কোপ বা অণুবীক্ষণ যন্ত্র) আলোচিত হয়।

(iii) জীবপ্রযুক্তিবিদ্যা (Biotechnology): জীববিদ্যার সঙ্গে প্রযুক্তিবিদ্যার সমন্বয়ে এই শাখাটির সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন আধুনিক জৈববস্তুর উৎপাদন এবং এই সকল বস্তুর উৎপাদনে কীভাবে প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্য নেওয়া যায়, তা এই শাখায় আলোচিত হয়।

(iv) জীবরাশিবিদ্যা (Biostatistics): জীববিদ্যার সঙ্গে রাশিবিজ্ঞানের সমন্বয়ে সৃষ্ট জীবরাশিবিদ্যার সাহায্যে জীববিদ্যার বিভিন্ন সমস্যার (যেমন- পপুলেশন) সমাধান করা হয়ে থাকে।

(v) জীববৈদ্যুতিনবিদ্যা (Bionics) : জীববিদ্যার সঙ্গে ইলেকট্রনিক্সের সংযুক্তিকরণে জীববৈদ্যুতিনবিদ্যা শাখার সৃষ্টি হয়েছে।

(vi) জীবভূগোল (Biogeography): জীববিদ্যা এবং ভূগোলের সমন্বয়ে সৃষ্ট এই শাখায় বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চল ও তার জীব- সমূহের মধ্যে নানা প্রকার সম্পর্কের আলোচনা হয়।

(vii) বায়োম্যাথেমেটিক্স (Biomathematics): জীববিদ্যা এবং গণিতের সংযুক্তিকরণে বায়োম্যাথেমেটিক্স শাখাটি সৃষ্টি করা হয়েছে। জীববিদ্যার নানাপ্রকার সমস্যাকে গণিতের মাধ্যমে সমাধান করার বিষয়ে এখানে আলোচনা হয়।

(viii) মহাকাশ জীববিদ্যা (Space Biology): মহাকাশে জীবদের সন্ধানের বিষয়ে জীববিদ্যা ও মহাকাশবিদ্যার সমন্বয়ে মহাকাশ জীববিদ্যা নামক শাখাটি গঠিত হয়েছে।

(ix) প্রত্নজীববিদ্যা (Palaeontology) : জীববিদ্যার সঙ্গে ভূতত্ত্বের সমন্বয়ে গঠিত এই শাখাটির সাহায্যে নানাপ্রকার জীবাশ্ম অধ্যয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন জীবেদের উৎপত্তি ও তাদের বিবর্তনের বিষয়ে প্রত্নজীববিদ্যার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি।

(x) নৃতত্ত্ব (Anthropology): জীববিদ্যার সঙ্গে সমাজবিজ্ঞান, পুরাতত্ত্ব বিদ্যা, মনোবিজ্ঞান, বিবর্তন, ভূগোলের সমন্বয়ে নৃতত্ত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে।

(xi) সমুদ্রবিজ্ঞান (Oceanology): পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, গণিতশাস্ত্রের সঙ্গে জীববিদ্যার সমন্বয়ে সৃষ্ট এই শাখায় সামুদ্রিক ঘটনাবলির ব্যাখ্যা করা হয়।

Leave a Comment