জার্মানির ঐক্য আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো – আজকের পর্বে জার্মানির ঐক্য আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
জার্মানির ঐক্য আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো
জার্মানির ঐক্য আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো। |
ভূমিকা
ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে তথা নেপোলিয়নের জার্মানি জয়ের আগে প্রায় তিনশটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে জার্মানি বিভক্ত ছিল। পরবর্তীকালে নেপোলিয়ন সেই রাজ্যগুলি জয় করে পুনর্গঠন করে ৩০০ টি রাজ্যকে ৩৯ টি রাজ্যে বিভক্ত করে কনফেডারেশন অফ দ্য রাইন নামে একটি রাষ্ট্র সংগঠন করেন। পরবর্তীকালে ভিয়েনা সম্মেলনে ন্যায্য অধিকার নীতি প্রয়োগ করে জার্মানিকে আবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে পরিণত করে দেওয়া হয় এবং প্রতিষ্ঠিত হয় অস্ট্রিয়া কর্তৃত্ব। পরবর্তী সময়ে বিসমার্কের নেতৃত্বে জার্মানির ঐক্য সম্পন্ন হয়।
নেপোলিয়নের ভূমিকা
নেপোলিয়ন জার্মানি জয় করে সমগ্র জার্মানিতে একই ধরনের আইনকানুন শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন যার সুফল সাধারণ মানুষ ভোগ করতে শুরু করলে প্রথম জার্মানবাসীর মনে জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটে এবং তারা স্বাধীন ঐক্যবদ্ধ জার্মান রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।
জোলভেরাইন ও অর্থনৈতিক ঐক্য
১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রাশিয়ার নেতৃত্বে জার্মান অর্থনীতিবিদ ম্যাজনের উদ্যোগে জোলভেরাইন নামক একটি শুল্ক সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। অবাধ, বাণিজ্য নীতি, আন্তশুল্ক হ্রদ প্রভৃতি ব্যবস্থার ফলে জার্মান রাজ্যগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক একতা গড়ে উঠে। সর্বজার্মানবাদ-জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবী, কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, ঐতিহাসিকরা সর্ব জার্মানবাদে উৎসাহিত হয়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু করেন।
জুলাই বিপ্লব
১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে জুলাই বিপ্লব কালে জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যে গণ-অভ্যুত্থানের সূচনা করেছিল। কিন্তু মেটারনিখ তৎপরতার সঙ্গে তা দমন করেন। ফেব্রুয়ারি বিপ্লব ও ফ্রাঙ্কফোর্ট পার্লামেন্ট-১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাবে জার্মান রাজ্যগুলিও আন্দোলিত হয় জার্মান জাতীয়তাবাদীরা ফ্রাঙ্কফোর্টে একটি পার্লামেন্ট আহ্বান করা হয় জার্মানির জন্য একটি শাসনতন্ত্র রচনা করা এবং জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থ হয়।
বিসমার্কের ভূমিকা
প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিসমার্ক জার্মানির ঐক্য সাধনের জন্য যে নীতিটি প্রয়োগ করেন তা ‘লৌহ ও রক্ত’ নীতি নামে পরিচিত। এই নীতির মূল কথা হল উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রয়োজনে বল প্রয়োগ করতে হবে। বিসমার্ক মনে করতেন একমাত্র যুদ্ধের মাধ্যমেই জার্মানির ঐক্য সম্ভব।
পরবর্তী সময়ে বিসমার্ক ডেনমার্কের সঙ্গে প্রাশিয়া-ডেনমার্ক যুদ্ধ (১৮৬৪ খ্রি:) অস্ট্রিয়ার সঙ্গে অস্ট্রো-প্রাশিয়ার যুদ্ধ (১৮৬৬) এবং ফ্রান্সের সাথে ফ্রাঙ্কো-প্রাশিয়া তথা স্যাডানের যুদ্ধে জয়লাভ করে জার্মানির ঐক্য সম্পূর্ণ করেন।