জাতীয়তাবাদের বিকাশে ও নবভারত গঠনে স্বামী বিবেকানন্দের প্রভাব কী ছিল

জাতীয়তাবাদের বিকাশে ও নবভারত গঠনে স্বামী বিবেকানন্দের প্রভাব কী ছিল – আজকের পর্বে আলোচনা করা হল জাতীয়তাবাদের বিকাশে ও নবভারত গঠনে স্বামী বিবেকানন্দের প্রভাব কী ছিল তা নিয়ে।

জাতীয়তাবাদের বিকাশে ও নবভারত গঠনে স্বামী বিবেকানন্দের প্রভাব কী ছিল

জাতীয়তাবাদের বিকাশে ও নবভারত গঠনে স্বামী বিবেকানন্দের প্রভাব কী ছিল
জাতীয়তাবাদের বিকাশে ও নবভারত গঠনে স্বামী বিবেকানন্দের প্রভাব কী ছিল?

জাতীয়তাবাদের বিকাশে স্বামী বিবেকানন্দের অবদান

স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন উনিশ শতকের নবজাগরণের প্রাণপুরুষ। 

জাতীয়তাবাদের বিকাশে অবদান : বিবেকানন্দ রচিত জ্ঞানযোগ, রাজযোগ, বর্তমান ভারত, পরিব্রাজক প্রভৃতি গ্রন্থ এবং বিভিন্ন পত্রাবলি ভারতীয় বিপ্লবীদের জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রেরণার অন্যতম উৎস ছিল। একজন ধর্মীয় নেতা হয়েও স্বামীজি পরাধীনতার বন্ধন ছিন্ন করতে দেশের যুবসমাজকে আহ্বান জানান। ভারতের পরাধীনতা, সাধারণ ভারতবাসীর অশিক্ষা ও দারিদ্র্য তাঁকে ব্যথিত করে। তিনি বেদান্তের নতুন ব্যাখ্যা দেন এবং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের মাধ্যমে ভারতবাসীকে জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে তোলেন।

দার্শনিক হোগলের প্রভাব: দার্শনিক হেগেলের মতো স্বামী বিবেকানন্দও মনে করতেন, সমষ্টি বাদ দিয়ে ব্যক্তির অস্তিত্ব অসম্ভব। তিনি দেশ ও সমাজের কল্যাণের জন্য ব্যক্তিগত আত্মত্যাগের কথা বলেছেন।

স্বামীজির বাণীর প্রভাব : কর্মযোগে বিশ্বাসী স্বামীজির বাণী ও উপদেশগুলি জাতীয়তাবাদের বিকাশে বেদমন্ত্রের মতো কাজ করেছিল। তিনি যুবকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, “ওঠো জাগো, নিজের লক্ষ্যে না পৌঁছোনো পর্যন্ত থেমো না।”

চরমপন্থী মনোভাব : বিবেকানন্দের রাজনৈতিক চিন্তাধারায় চরমপন্থী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছিল। সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি লক্ষ করে তিনি বলেছিলেন, “What India need today is bomb” |

মানবমুক্তি: বিবেকানন্দ শুধুমাত্র দেশকে পরাধীনতা থেকে মুক্তিদানের কথাই বলেননি, তিনি সমগ্র মানবজাতির মুক্তির কথা বলেছিলেন। অধ্যাপক আর জি প্রধান স্বামী বিবেকানন্দকে ‘ভারতের আধুনিক জাতীয়তাবাদের পিতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

নবভারত গঠনে স্বামী বিবেকানন্দের অবদান

স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর সাধনা ও দূরদৃষ্টির দ্বারা এক নতুন ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখতেন।

শিকাগো ধর্মসম্মেলনে ভারতের মহিমা প্রচার:
বিবেকানন্দ আমেরিকার শিকাগো শহরে আহূত বিশ্ব ধর্মসম্মেলন (১৮৯৩ খ্রি.)-এ হিন্দুধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন এবং বেদান্তের মহিমা ও বিশ্বজনীনতার আদর্শ প্রচার করে হিন্দুধর্মকে জগৎসভায় পরিচিত করান। এসময় হিন্দুধর্মের আদর্শে মুগ্ধ বহু বিদেশি তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ব্রাহ্মণ শ্রেণির ধর্মীয় একাধিপত্য, শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি, অস্পৃশ্যতা, রাজনৈতিক ভণ্ডামি প্রভৃতি সমস্ত নেতিবাচক বিষয়কেই তিনি তীক্ষ্ণ ভাষায় আক্রমণ এবং ভারতবাসীকে আত্মবলে বলীয়ান হতে উদ্বুদ্ধ করেন।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন: বর্তমান ভারত গ্রন্থে তিনি বলেন, “হে ভারত, ভুলিও না তুমি জন্ম থেকেই মায়ের জন্য বলিপ্রদত্ত।” তিনি এমন এক নতুন ভারতের স্বপ্ন দেখতেন যেখানে শোষণ, নিপীড়ন, ক্ষুধার জ্বালা থাকবে না। তিনি চেয়েছিলেন উচ্চনীচ, ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ সবার সহযোগিতায় নবভারত গঠন করতে।

যুবসমাজের প্রতি আহ্বান: স্বামীজি যুবসমাজের উদ্দেশে বলেছিলেন, “গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলা ভালো।”নারীশিক্ষা প্রসারেও তিনি বিশেষ আগ্রহী ছিলেন।

রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা :
১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রীরামকৃষ্ণের জীবসেবার আদর্শ ও বাণীকে কার্যকরী করে তোলার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রামকৃষ্ণ মিশন। তাঁর নতুন ভারত কেমন হবে, তা বোঝা যায় তাঁর মহান উক্তিটির মধ্যে, “মুচি, মেথর, আমার রক্ত, আমার ভাই।”

Leave a Comment