চিনে তাইপিং বিদ্রোহ সম্পর্কে একটি টীকা লেখো

চিনে তাইপিং বিদ্রোহ সম্পর্কে একটি টীকা লেখো

চিনে তাইপিং বিদ্রোহ সম্পর্কে একটি টীকা লেখো
চিনে তাইপিং বিদ্রোহ সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

তাইপিং বিদ্রোহ

তাইপিং কথার অর্থ মহান শান্তি। চিনের অন্যতম প্রধান গণতান্ত্রিক লড়াই ছিল তাইপিং বিদ্রোহ।

তাইপিং বিদ্রোহের কারণ বা প্রেক্ষাপট

মাঞ্চু সরকারের অপদার্থতা

বিভিন্ন সমস্যায় জেরবার অপদার্থ মাঞ্চু শাসকের দুর্বলতার সুযোগে বিদেশি শক্তিগুলি চিনে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা বিস্তার করে, যার ফলে চিনা জনগণ ক্ষুব্ধ হয়।

বিদেশিদের আধিপত্য

চিনে বিদেশি শক্তির একাধিপত্য চিনবাসীর জীবন অতিষ্ট করে তুলেছিল। বিদেশি শক্তির সামনে অসম প্রতিযোগিতায় চিনের দেশীয় শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়। ৮

দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন

চিনা সরকারের অধীনস্থ রাজকর্মচারীরা অর্থনৈতিক সংকটের সময় অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের জন্য দরিদ্র কৃষকদের উপর করের বোঝা চাপিয়ে দেয়। ফলে জনগণ বিদ্রোহের পথ বেছে নেয়।

দেশবাসীর দুরবস্থা

১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দের খরা (হুনান প্রদেশে) এবং ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষের সময় চিনা জনগণ সরকারের কাছ থেকে বিন্দুমাত্র সাহায্য পায়নি। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, রোগের প্রকোপ, বেকারত্ব চিনাবাসীর অবস্থা সঙ্গীন করে তোলে।

ধর্মীয় কারণ

কনফুসীয় ধর্মমতের উপর ক্রমশ আস্থা হারিয়ে ফেলে চিনবাসী। এমতাবস্থায় হ্যাং-শিউ-চুয়ান তাইপিং নামে নতুন ধর্ম প্রচার করেন। চিনে ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষিত হয়। ফলে দলে দলে সাধারণ চিনা জনগণ এই নতুন ধর্মে যোগদান করে।

তাইপিং বিদ্রোহের সূচনা, প্রসার ও দমন

চিনের কোয়াং সি প্রদেশে হ্যাং-শিউ-চুয়ান-এর নেতৃত্বে তাইপিং বিদ্রোহের সূচনা হয় (১৮৫১-১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দ)। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহীরা নানকিং দখল করে সেখানে তাইপিং রাষ্ট্রের রাজধানী প্রতিষ্ঠা করে। নানকিং-এর নতুন নাম হয় তিয়েন কিং বা স্বর্গীয় রাজধানী। ধর্মবিদ্রোহ রূপে শুরু হলেও বিদ্রোহীরা আফিম সেবন, মদ্যপান, ক্রীতদাস প্রথা, পণপ্রথা প্রভৃতি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। শেষপর্যন্ত মাঞ্জু সরকার ব্রিটিশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে উত্তেজনা প্রশমন করে। এরপর তাইপিং নেতা হ্যাং-শিউ-চুয়ান আত্মহত্যা করলে এই বিদ্রোহ তার গতি হারায়।

তাইপিং বিদ্রোহের প্রকৃতি

  • এই বিদ্রোহ প্রথমে বুর্জোয়া শ্রেণি কর্তৃক শুরু হলেও পরবর্তীতে এর মূল চালিকাশক্তি ছিল কৃষক সম্প্রদায়।
  • এই বিদ্রোহে দরিদ্র শ্রেণি থেকে নেতৃবর্গের উত্থান ঘটেছিল।
  • জাতীয়তাবাদী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিদ্রোহীরা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অগ্রসর হয়।

তাইপিং বিদ্রোহের ফলাফল

সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার

তাইপিং বিদ্রোহের ফলে চিনে সর্বপ্রথম সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়, ফলে রক্ষণশীলতার প্রাচীর ভেঙে চিন প্রগতিশীলতার পথ অনুসরণ করতে শিখেছিল। শুধু তাই নয়, এই বিদ্রোহ চিনের জনগণের মধ্যে এক রাজনৈতিক সচেতনতার জন্ম দিয়েছিল।

গণবিপ্লব

তাইপিং বিদ্রোহে কৃষক, শ্রমিক, কারিগরের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এই বিদ্রোহকে একাধারে মাঞ্জু শাসনবিরোধী ও অন্যদিকে বিদেশিবিরোধী করে তুলেছিল।

পরবর্তী বিদ্রোহের পটভূমি রচনা

তাইপিং বিদ্রোহ বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হলেও এই বিদ্রোহ চিনা জনগণের মনে যে রাজবংশ-বিরোধী মনোভাবের জন্ম দিয়েছিল তা পরবর্তী বিদ্রোহের পটভূমি রচনা করে দেয়।

আরও পড়ুন – স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান ও শেখ মুজিবর রহমানের ভূমিকা আলোচনা করো

Leave a Comment