চিনে আধুনিক খ্রিস্টান বা পাশ্চাত্য ভাবধারার প্রভাবে মিশনারিদের উদ্যোগ সম্পর্কে আলোচনা করো। এই ভাবধারা প্রসারের প্রভাব কী ছিল? |
চিনে পাশ্চাত্য ভাবধারা প্রসারে খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগ
মিশনারিদের আগমন: লন্ডন মিশনারি সোসাইটির প্রতিনিধি রবার্ট মরিসন ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে চিনে এসে চিনা ভাষা শিখে এই ভাষায় প্রথম বাইবেল অনুবাদ করেন। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার এলিজা কোলম্যান ব্রিজম্যান চিনে মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন করেন। অপর একজন মিশনারি পিটার পার্কার চিনে হাসপাতাল স্থাপন ও পশ্চিমি চিকিৎসাবিদ্যা চালু করেন। প্রাথমিক পর্বে ম্যাকাও এবং হংকং-এ মিশনারিদের কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তীকালে নানকিং সন্ধি ও তিয়েনসিনের সন্ধির সুযোগ নিয়ে তারা চিনের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েন।
তুং ওয়েন কুয়ান প্রতিষ্ঠা: ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে চিনে সর্বপ্রথম তুং ওয়েন কুয়ান নামে একটি বিদেশি ভাষা শিক্ষার কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই কলেজে ইংরেজি, ফরাসি, রুশ, জার্মান প্রভৃতি ভাষা এবং গণিত, জ্যোতিষশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, শারীরবিদ্যা প্রভৃতি বিভিন্ন আধুনিক শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়।
সংস্কারমূলক প্রয়াস: মিশনারিরা চিনে প্রচলিত পদবন্ধন প্রথা, আফিম বাণিজ্যে দুর্নীতির বিরোধিতা, দরিদ্র শিশুদের শিক্ষাদান প্রভৃতি নানা সংস্কারমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন।
মিশনারিদের অন্যান্য প্রয়াস: মিশনারিদের উদ্যোগে চিনে বহু বিদ্যালয়, গ্রন্থাগার, জাদুঘর প্রভৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফলে চিনে অন্যান্য মিশনারিরা লন্ডন মিশনারি সোসাইটি, আমেরিকান রিফর্মড মিশন, ব্যাপটিস্ট মিশন প্রভৃতি সোসাইটি গড়ে তোলেন। মিশনারিরা চিনে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে সেখানে পাশ্চাত্য চিকিৎসা পদ্ধতি চালু করেন।
চিনে পাশ্চাত্য ভাবধারা প্রসারের প্রভাব
পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার : চিনে তুং ওয়েন কুয়ান প্রতিষ্ঠার ফলে চিনা জনগণের মধ্যে পাশ্চাত্য জ্ঞানচর্চার বিকাশ ঘটে। তারা আধুনিক ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়।
বুদ্ধিজীবীদের আত্মপ্রকাশ: আধুনিক শিক্ষার প্রভাবে চিনে আত্মপ্রকাশ ঘটে এক বুদ্ধিজীবী যুবক সম্প্রদায়ের। তারা উপলব্ধি করে যে, মাঞ্জু রাজবংশের পতন ঘটিয়ে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য চিনে সংস্কার আন্দোলনের প্রয়োজন আছে। তাদের উদ্যোগেই ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে চিনের সংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয়।
ছাত্রদের উদ্যোগ: বিংশ শতকের প্রথম দিকে বহু চিনা ছাত্র উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি দেয় এবং দেশে ফিরে এসে চিনের রক্ষণশীলতা ও কুসংস্কার দূরীকরণে উদ্যোগী হয়।
জেন্ট্রিদের নেতৃত্বের সংকট: চিনের জরাজীর্ণ কনফুসীয় দর্শন ও শিক্ষার দ্বারা প্রভাবিত জেস্ট্রিরা খ্রিস্টান যাজক ও মিশনারিদের বিপজ্জনক, সামাজিক সংহতিনাশক বলে অভিহিত করেছিল। কিন্তু খ্রিস্টান মিশনারিদের সংস্কারমূলক কাজকর্ম জেস্ট্রিদের নেতৃত্বের বিষয়টিকে দুর্বল করে তুলেছিল।
আধুনিক পাশ্চাত্য ভাবধারার প্রসার চিনের চিরাচরিত ঐতিহ্য ও ধর্মে আঘাত হানে। ফলে চিনাবাসী ক্ষুব্ধ হয়।