চিনের উপর আরোপিত ‘অসম চুক্তি’ বলতে কী বোঝো? অসম চুক্তিগুলির বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

চিনের উপর আরোপিত ‘অসম চুক্তি’ বলতে কী বোঝো? অসম চুক্তিগুলির বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

চিনের উপর আরোপিত 'অসম চুক্তি' বলতে কী বোঝো? অসম চুক্তিগুলির বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো
চিনের উপর আরোপিত ‘অসম চুক্তি’ বলতে কী বোঝো? অসম চুক্তিগুলির বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

চিনের উপর আরোপিত অসম চুক্তি

ঊনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে কিং বা চিং বংশের শাসনকালে চিনের দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করে বিভিন্ন পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ, যথা- ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি চিনের উপর যে অসম একতরফা শোষণমূলক চুক্তি আরোপ করেছিল, তা অসম বা বৈষম্যমূলক চুক্তি নামে পরিচিত। অনেকে এই চুক্তিগুলিকে শতবর্ষব্যাপী অবমাননা (Century of Humiliation) বলেও আখ্যায়িত করেছেন।

অসম চুক্তির বৈশিষ্ট্যসমূহ

অসম চুক্তির বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

প্রথমত, এইসব অসম চুক্তিগুলি কোনো না কোনো যুদ্ধে পশ্চিমি শক্তি কর্তৃক চিনের পরাজয়ের পর একতরফাভাবে পারস্পরিক আলোচনা ছাড়াই চিনের উপর চাপানো হয়েছিল। চুক্তি স্থির করার সময় চিনা সরকারের মতামত উপেক্ষিত হয়েছে।

দ্বিতীয়ত,
ব্রিটিশ সরকার-সহ অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তিসমূহ চিনের উপর যে জবরদস্তিমূলক অসম চুক্তি আরোপ করেছিল তার ফলে চিনের সার্বভৌমত্ব ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছিল। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের একচেটিয়া দৌরাত্ম্যে চিনের অস্তিত্বের সংকট দেখা দেয়। চিন ইউরোপীয় শক্তিসমূহের আধা-উপনিবেশে পরিণত হয়।

তৃতীয়ত,
পশ্চিমি শক্তিগুলির সঙ্গে যুদ্ধে চিনকেই শুধুমাত্র দায়ী করা ঠিক হবে না। কেন-না চিন আগ বাড়িয়ে যুদ্ধের জন্য আক্রমণাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করেনি। অথচ যুদ্ধে পরাজয়ের পর চিন বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদ বিদেশি শক্তিগুলিকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে বাধ্য হয়।

চতুর্থত
, অসম চুক্তিগুলির মাধ্যমে প্রাপ্ত বিপুল খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের দ্বারা বিদেশি শক্তিগুলি সম্পদশালী হয়ে পড়লেও চিনের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।

পঞ্চমত,
শুধুমাত্র প্রচুর পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণই নয়, নিজেদের বিভিন্ন অঞ্চল ও বাণিজ্যিক বন্দর বিদেশি পশ্চিমি শক্তিগুলির সামনে উন্মুক্ত করে দিতে চিনা সরকার বাধ্য হয়। এমনকি চিনের হংকং বন্দর ব্রিটেনের জন্য এবং ম্যাকাও বন্দর পোর্তুগালের জন্য খুলে দিতে বাধ্য হয়।

ষষ্ঠত, পশ্চিমি শক্তিগুলি চিনের উপর অসম অন্যায়মূলক চুক্তি আরোপ করে নিজেদের বাণিজ্যে শুল্ক ছাড় দিতে থাকে। কিন্তু চিনা বণিকদের ন্যায্য শুল্ক প্রদান করেই বাণিজ্য করতে হত। ফলস্বরূপ, বিদেশি বণিকদের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় চিনা বণিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন – ভারতে রেলপথ প্রবর্তনের উদ্দেশ্য আলোচনা করো

Leave a Comment