ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণগুলি আলোচনা করো – আজকের পর্বে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণগুলি আলোচনা করা হল।
ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণগুলি আলোচনা করো
ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণগুলি আলোচনা করো। |
ভূমিকা
১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের ক্রিমিয়ার যুদ্ধ পূর্বাঞ্চল ও বল্কান সমস্যার একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। দুই বছর ধরে এই যুদ্ধ চলার পর ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের সন্ধির দ্বারা ক্রিমিয়ার যুদ্ধের অবসান হয়। এই যুদ্ধে একপক্ষে ছিল রাশিয়া অন্যপক্ষে ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, তুরস্ক ও পিড মন্ট-সার্ডিনিয়া। অতি তুচ্ছ কারণকে কেন্দ্র করে এই যুদ্ধের সূচনা (গ্রেটোর গির্জার চাবি প্রসঙ্গ) হলেও এর পশ্চাতে বিভিন্ন কারণ ছিল যেগুলি হল-
ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ
(ক) বিপরীতমুখী স্বার্থ
সমুদ্রপথে স্থায়ী পথ লাভের জন্য রাশিয়া তুরস্কের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ো রাশিয়া তুরস্ককে গ্রাস করতে উদ্যোগী হয়। অন্যদিকে তৃতীয় নেপোলিয়ন রাশিয়াকে পরাস্ত করে স্বদেশে জনপ্রিয়তা চান ব্রিটেন চাইত তুরস্কের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা। এই পরস্পরবিরোধী স্বার্থের সংঘাতে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে।
(খ) গ্রিক ও ল্যাটিন খ্রিস্টানদের দ্বন্দ্ব
তৃতীয় নেপোলিয়ন কর্তৃক প্যালেস্টাইনে খ্রিস্টান ধর্মস্থানগুলির ওপর ক্যাথলিক আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা করলে ল্যাটিন ও গ্রিক ধর্মযাজকদের বিরোধ বাধে। ফ্রান্স ছিল ল্যাটিন ধর্মযাজকদের সমর্থক অন্যদিকে রাশিয়া ছিল গ্রিক ধর্মযাজকদের সমর্থক।
(গ) ইংল্যান্ডের রুশ বিরোধিতা
জার প্রথম নিকোলাস ইংল্যান্ডকে ‘ইউরোপের রুগ্ন ব্যক্তি’ তুরস্কের ব্যবচ্ছেদের প্রস্তাব দিলে ইংল্যান্ড নিজের স্বার্থেই তুরস্ক ব্যবচ্ছেদ অপেক্ষা। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতেই বেশি আগ্রহী ও তুরস্কের অখণ্ডতা রক্ষার পক্ষপাতী ছিলেন। ব্রিটিশ জনমত রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠে।
(ঘ) ফ্রান্সের লক্ষ্য
ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ফ্রান্সের গৌরব বৃদ্ধি করতে চেয়েছিলেন। এ ছাড়াও ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের একটি ব্যক্তিগত কারণও ছিল রাশিয়ার বিরুদ্ধাচারণ করার। তৃতীয় নেপোলিয়ন বংশানুক্রমিক অধিকারের বলে সিংহাসন লাভ না করায় জার নিকোলাস তাঁকে তাচ্ছিল্য করতেন। এই কারণে তৃতীয় নেপোলিয়ন রাশিয়াকে শিক্ষা দিতে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে যোগ দেন।
অস্ট্রিয়া এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে যোগ না দিলেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ট্রিয়া, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে সমর্থন করে। কারণ অস্ট্রিয়া মনে করত যে, পূর্ব ইউরোপে রুশ শক্তি বাড়লে অস্ট্রিয়ার নিরাপত্তা ও স্বার্থ বিপন্ন হবে।
(ঙ) পিডমন্ট-সার্ডিনিয়ার লক্ষ্য
পিডমন্ট-সার্ডিনিয়ার প্রধানমন্ত্রি ক্যাভুরের লক্ষ্য ছিল ইঙ্গ ফরাসি শক্তিকে সহায়তা করে জার্মানির ঐক্যের বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরা। প্রত্যক্ষ কারণ-১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার জার নিকোলাস তুরস্কের কাছে দাবি করেন যে তুরস্কের গ্রিক খ্রিস্টান চার্চ ও যাজকদের অভিভাবকত্ব তার হাতে প্রদান করতে হবে। তুরস্কের সুলতান রাশিয়ার জারের দাবি না মানলে জার অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন এবং দাবি আদায়ের জন্য মলদাভিয়া ও ওয়ালাচিয়া প্রদেশ দুটি দখল করে নেয়।
ভিয়েনা নোট
রাশিয়ার এরূপ আচরণে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া শঙ্কিত হয়ে ওঠে তারা ভিয়েনায় মিলিত হয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেন যা ভিয়েনা নোট নামে পরিচিত। এই নোটে তারা রাশিয়াকে মলদাভিয়া ও ওয়ালাচিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানালে রাশিয়া তাতে কর্ণপাত না করলে ১৮৫৪ খ্রি. শুরু হয়ে যায় ক্রিমিয়ার যুদ্ধ। প্যারিসের সন্ধি (১৮৫৬ খ্রি.) দ্বারা এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।