ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ বিশ্লেষণ করো। এই যুদ্ধের গুরুত্ব কী ছিল

ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ বিশ্লেষণ করো। এই যুদ্ধের গুরুত্ব কী ছিল – আজকের পর্বে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ বিশ্লেষণ করো। এই যুদ্ধের গুরুত্ব কী ছিল তা আলোচনা করা হল।

    ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ বিশ্লেষণ করো। এই যুদ্ধের গুরুত্ব কী ছিল

    ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ বিশ্লেষণ করো। এই যুদ্ধের গুরুত্ব কী ছিল
    ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ বিশ্লেষণ করো। এই যুদ্ধের গুরুত্ব কী ছিল?
    উনিশ শতকে বল্কান অঞ্চল ইউরোপের রাজনীতিতে অশান্ত ঘূর্ণি সৃষ্টি করেছিল এবং ক্রিমিয়ার যুদ্ধ (১৮৫৪-১৮৫৬ খ্রি.) ছিল এই সংকটজনক পরিস্থিতির পরিণতি।

    ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ

    মূলত ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কারণে এই যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।

    ধর্মীয় কারণ : প্যালেস্টাইনের জেরুজালেমের পবিত্র স্থানের রক্ষণাবেক্ষণের প্রশ্নকে কেন্দ্র করে গ্রিক ও ল্যাটিন-ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব গড়ে উঠেছিল। গ্রিক খ্রিস্টানদের পক্ষ নেয় রাশিয়া ও ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের পক্ষ নেয় ফ্রান্স এবং এভাবে ধর্মীয় প্রশ্নের সঙ্গে বৃহৎ শক্তিবর্গের বিবাদ যুক্ত হয়ে পড়েছিল।

    আশ্চর্যের কথা, একটা তুচ্ছ কারণকে কেন্দ্র করে এই যুদ্ধের সূত্রপাত। তুরস্ক সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত জেরুজালেম-এ গ্রোটের গির্জার কর্তৃত্ব নিয়ে ল্যাটিন বা রোমান ও গ্রিক ধর্মযাজকদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। ফ্রান্স ল্যাটিন ধর্মযাজকদের ও রাশিয়ার ধর্মযাজকদের পক্ষ গ্রহণ করে। রাশিয়া গ্রিক ধর্মযাজকদের নিয়ন্ত্রণ চাইল। তুরস্ক আপত্তি জানালে রাশিয়া যুদ্ধের পথে এগোল।

    ইংল্যান্ডের স্বার্থ: রাজনৈতিক, সামরিক ও বাণিজ্যিক কারণে ইংল্যান্ড তুরস্ক সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিল এবং এই অঞ্চলে রাশিয়াকে ইংল্যান্ড নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেয়েছিল।

    ফ্রান্সের উদ্দেশ্য: ফ্রান্স ইউরোপীয় রাজনীতিতে নিজ হৃত মর্যাদাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে অংশগ্রহণ করেছিল।

    প্রত্যক্ষ কারণ: রাশিয়া মোলডাভিয়া ও ওয়ালাচিয়া প্রদেশ দুটি দখল করলে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া প্রভৃতি দেশ ভিয়েনাতে মিলিত হয় এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব (ভিয়েনা নোট) গ্রহণ করে। রাশিয়া এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করলে তুরস্কের পক্ষে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স যোগদান করে এবং ক্রিমিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়।

    ক্রিমিয়ার যুদ্ধের গুরুত্ব

    নিষ্ফলা যুদ্ধ: প্রত্যক্ষ ফলাফলের দিক দিয়ে মনে হতে পারে যে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ ছিল একটি নিষ্ফল ও অবাঞ্ছিত যুদ্ধ। কিংলেক, ম্যারিয়েট প্রমুখ ঐতিহাসিকরা এই যুদ্ধকে অনাবশ্যক ও অযৌক্তিক যুদ্ধ বলে সাব্যস্ত করেছেন, কারণ এই যুদ্ধের মাধ্যমে বল্কান সমস্যার প্রকৃত সমাধান হয়নি।

    অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধ নয়: পরোক্ষ ফলাফলের গুরুত্ব বিচার করলে ক্রিমিয়ার যুদ্ধকে মোটেই অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক যুদ্ধ বলা চলে না। বলকান জাতীয়তাবাদ ক্রমশ প্রবল হয়ে উঠল এবং ইউরোপের রাষ্ট্রবর্গের হস্তক্ষেপের ফলে সংকট ঘনীভূত হয়। ইটালির ও জার্মানির ঐক্যসাধন এবং বল্কান অঞ্চলে জাতীয়তাবাদের অগ্রগতি সবকিছুই ক্রিমিয়ার যুদ্ধ দ্বারা বিশেষ প্রভাবিত হয়েছিল। অধ্যাপক ডেভিড টমসন মনে করেন, ক্রিমিয়ার যুদ্ধের অপ্রত্যাশিত ফলাফল ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

    এ ছাড়া, বল্কান অঞ্চলে তুরস্ক সাম্রাজ্যকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হল কিন্তু বল্কান অঞ্চলে তুরস্কের কুশাসন সেখানে অগ্নিগর্ভ-পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

    উপসংহার

    ক্রিমিয়ার যুদ্ধ ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যুদ্ধের ফলেই বলকান অঞ্চলে একদিকে যেমন রাশিয়ার আগ্রাসন বাধাপ্রাপ্ত হয় অন্যদিকে তুরস্ক যুদ্ধের ফলেই তুরস্কের আধুনিকীকরণ সম্ভব হয় এবং এই যুদ্ধই পরোক্ষ ভাবে ইটালি ও জার্মানির ঐক্য আনতে সাহায্য করেছিল।

    Leave a Comment