“কারো বুকে নালিশ নেই, কারো মনে প্রতিবাদ নেই।”-কাদের সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে? তাদের এরূপ মানসিকতার কারণ কী? |
বস্তুনিষ্ঠ, সমাজমনস্ক কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটোগল্প ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে!’ (১৯৪৩-এর মন্বন্তরের প্রেক্ষাপটে লেখা)-তে দুর্ভিক্ষপীড়িত যে সমস্ত নিরন্ন, ক্লিষ্ট মানুষের বাস্তবচিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তাদের সম্পর্কেই প্রশ্নোদৃত মন্তব্যটি করা হয়েছে। মন্বন্তরের কবলে পড়ে এদের সামাজিক জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। খাবারের আশায়, প্রাণধারণের তীব্র আকাঙ্ক্ষায় তারা গ্রাম ছেড়ে শহরে আসে। সব হারানো যন্ত্রণা বুকে নিয়ে আর ক্ষুধার জ্বালা পেটে নিয়ে তারা কখনও গাছের নীচে, কখনও ডাস্টবিনের ধারে, কখনও খোলা ফুটপাথে পড়ে থাকে।
এই নিরন্ন মানুষগুলির কথা কেউ ভাবে না। মাঝে মাঝে মৃত্যুঞ্জয়ের মতো কিছু ভিন্নপ্রকৃতির মানুষ তাদের দেখে উতলা হয়, তাদের সাহায্যের চেষ্টা করে। সেই সঙ্গে এটা দেখে অবাক হয় যে, ওই দুস্থ মানুষগুলির সবার দুঃখ এক, দুঃখের কথা এক। এমনকি তাদের কথা বলার ভঙ্গিও এক। আসলে মন্বন্তরের ভয়াবহতায়, ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে অন্নহীন ফুটপাথবাসী মানুষগুলি তাদের কণ্ঠস্বর হারিয়ে ফেলেছে, নিজস্বতা হারিয়ে ফেলেছে। তাই তাদের বুকে কোনো নালিশ নেই, নেই কোনো প্রতিবাদ। পরিস্থিতিকে তারা মেনে নিয়েছে।